গ্রীষ্মে প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল

ঋতু চক্রের পালা বদলে আবহমান বাংলার প্রকৃতিতে ফিরেছে গ্রীষ্মকাল। গ্রামবাংলার সর্বত্র এখন রংবেরঙের বাহারি ফুলের মনমাতানো সৌরভ। তেমনি সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালী হলুদ রঙের ফুলে সেজেছে সোনালু গাছ। বাতাসে কিশোরীর কানের দুলের মতো দুলতে থাকা এ ফুল, আকৃষ্ট করছে তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সি মানুষকে।
গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে বাংলার প্রকৃতি জুড়ে কৃষ্ণচূড়া, কামিনী, জারুল, পারুল, রঙ্গন ইত্যাদি ফুলের পাশাপাশি অলংকারের ন্যায় শোভা বৃদ্ধি করছে সোনালু ফুল। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হয়, প্রতিটি গাছের গা থেকে যেনো হলুদ ঝরনা নেমে এসেছে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভালবেসে এই ফুলের নাম দিয়েছিলেন 'অমলতাস'। হাজার বছর আগেও এ গাছ আমাদের উপমহাদেশে ছিল। এ গাছের বৈশিষ্ট্য হলো ঝাড় লণ্ঠনের মতো দীর্ঘ মঞ্জরি এবং উজ্জ্বল হলুদ ফুল। যুগের মাইকেল কবিতায় লিখেছেন, 'হায়, কর্ণিকা অভাগা; বরবর্ণ বৃথা যায় সৌরভ বিহনে; সতীত্ব বিহনে যথা যুবতী যৌবন।' মেঘদূতম কাব্যে যজ্ঞ রমণীদের কর্ণ শোভা সোনালু ফুলই। এ জন্য মল্লিনাথ লিখেছেন- 'কর্ণিকার বৃক্ষের সমীপে যদি সুন্দরি যুবতী আহ্লাদে নৃত্য করে তবে- বৃক্ষের গর্ব হয়।'
বারহাট্টা উপজেলা জুড়ে পথের ধারে, বাসা ও বাড়ির আঙিনায় গ্রীষ্মের দক্ষিণা হাওয়ায় সোনা ঝরা সোনালু ফুল যেন প্রকৃতির কানে দুলের মতো দুলছে।
বারহাট্টা সরকারি ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র প্রভাষক মজিবুল হক জানান, পূর্ব এশিয়া থেকে আগত এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম- হচ্ছে 'ক্যাশিয়া ফিস্টুলা' ইংরেজি নাম- 'গোল্ডেন শাওয়ার ট্রি'। সোনালু পাতাঝরা মাঝারি আকৃতির বৃক্ষ। এর উচ্চতা প্রায় ১০ থেকে ১৫ ফুট। সরিষা রংয়ের, সোনা রংয়ের প্রতিটি ফুলে থাকে পাঁচটি পাপড়ি ও দশটি পুংকেশর। ফুলগুলো এক ইঞ্চির মতো প্রশস্ত। দীর্ঘ মঞ্জুরীদণ্ড এ ফুলকে আরো বেশি মোহনীয় করেছে। সোননালুর গর্ভকেশর সবুজ, কাস্তের মতো বাঁকা। ফুলের আকৃতি অনেকটা আঙুলের ডগার মতো। এ কারণে অনেকে সোনালুকে কর্ণিকার নামে ডাকে। হলুদ বরণ এ ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি আছে তার বাহারি নামও। পরিচিত নামগুলো হলো সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠি ইত্যাদি।
তিনি বলেন, সোনালুর লাঠির মতো ফল বানরের প্রিয় খাদ্য। আর দুষ্টু ছেলেরা এই ফল নিয়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলে। বানরকে উদ্দেশ করে লাঠি ছুড়ে দেয়। এ জন্য সোনালুর আরেক নাম বান্দরলাঠি। এই লাঠি দুই-তিন হাত লম্বা হয়। একেবারে সুগোল এই লাঠির ভেতরে অনেক বীজ থাকে। এ বীজ থেকে চারা হয়। আবার শেকড় থেকেও চারা প্রসব করে। গাছটির ধূসর মসৃণ বাকল এবং পাতায় ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এ গাছের বাকল এবং পাতায় প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এটি ডায়রিয়ায় ও বহুমূত্র ব্যবহৃত হয়। পাতার বা ছালের রসে ক্ষত ধুলে ক্ষত দ্রুত আরোগ্য হয়। কুষ্ঠ রোগেও এটি ব্যবহৃত হয়। বানরলাঠি একটি অনেক উপকারী উদ্ভিদ।
বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (স্কুল ও কলেজ) বাংলা সাহিত্য বিষয়ের সিনিয়র প্রভাষক বিজয় চন্দ্র দাসের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সোনালী রঙের ফুলের বাহার থেকেই ‘সোনালু’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। সোনালু'কে অনেকে আঞ্চলিক ভাষায় বানরলাঠি বা বাঁদরলাঠি নামেও ডাকে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ ফুলের নাম দিয়েছিলেন 'অমলতাস'। হিন্দিতেও এর নাম 'অমলতাস'। শীতে সমস্ত পাতা ঝরে গিয়ে সোনালু গাছ থাকে পত্র শুন্য এবং বসন্তের শেষে ফুল কলি ধরার পূর্বে গাছে নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্মকালে যখন সব গাছে একসাথে সোনালী ফুল ফোটে, তখন মনে হয় সোনালী হলুদ আলোকচ্ছটায় চারপাশ আলোকিত হয়ে গেছে। গ্রীষ্মে গাছের শাখা-প্রশাখা জুড়ে ঝুলন্ত মঞ্জুরীতে সোনালী হলুদ রঙের ফুল ফুটে এবং এর ব্যাপ্তি থাকে গ্রীষ্ম কাল পুরো সময় জুড়ে। এই মৌসুমে গাছটি সব সবুজ ঝেড়ে ফেলে উৎফুল্ল হলুদ ছড়িয়ে দেয়। পথচারীরা এ ফুলের বৈচিত্রতায় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েই থাকে।
সোনালু নিজের প্রিয় ফুলগুলোর একটি বলে সকালের সময়কে জানালেন, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক ফেরদৌস আহমেদ তিনি বলেন, সোনালু ফুল গাছ প্রকৃতিতে শোভা বর্ধণকারী এক অসাধারণ গাছ। ‘সোনালু ফুল একটি প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতীক, সোনালু ফুল সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে এই গাছগুলো। আমি প্রতিদিন এই সৌন্দর্য উপভোগ করি।‘
তিনি আরও বলেন, গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে গ্রামে একসময় অনেক সোনালু গাছ চোখে পড়তো। এছাড়াও হাট, বাজার ও গঞ্জের চারপাশেও দেখা যেত হলুদিয়া সাজের সোনালুর উপস্থিতি। এখন হাতেগোনা কিছু গাছ দেখা যায় পথে প্রান্তরে। দিন দিন কমে আসছে সোনালুর সংখ্য। গাছটি সংরক্ষণ করতে সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শারমিন সুলতানা বলেন, এ গাছের সুন্দর হলুদ ফুল যেমন সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের মন ভরিয়ে দেয় তেমনি এটি খুবই ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। সোনালু গাছ ভারত উপমহাদেশের একটি গাছ। শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ, পাখিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। গাছের উজ্জ্বল হলুদ ফুল মৌমাছি ও প্রজাপতিদের আকর্ষণ করে পরাগায়নের সহযোগিতা করে। গাছটি সংরক্ষণ করতে আমাদের সকলের এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন।
এমএসএম / এমএসএম

মাতারবাড়িতে নারীদের বিকল্প আয়ের পথ খুলে দিল ইপসা

মানিকগঞ্জে যুব মহিলা লীগ নেত্রী গ্রেফতার

লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এস.এস.সি ২০২৫ জিপিএ-৫ কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

লন্ডনে বৃহত্তর কুমিল্লা জাতীয়তাবাদী পরিবারের মতবিনিময় সভা

তানোরের কৃষ্ণপুর স্কুল শিক্ষা বিস্তারে ভুমিকা রাখছে

শালিখায় পাটের চেয়ে কদর বাড়ছে পাটকাঠির

কোটালীপাড়ায় গরুচোর চক্রের দুই সদস্য গেপ্তার

লোহাগড়া বাজারে সরকারি সড়ক গিলে খাচ্ছে তিনতলা ভবন

জয়ের ঘ্রাণ পাচ্ছেন শেখ সাদী ?

যমুনা ব্যাংকের ঢাকা উত্তর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের ম্যানেজারস’ মিটিং অনুষ্ঠিত

মিরসরাইয়ে মহাসড়ক সংলগ্ন অবৈধ বাউন্ডারি ওয়াল গুঁড়িয়ে দিল উপজেলা প্রশাসন

চিলমারীতে যৌথ অভিযানে, অনলাইন জুয়ার সরঞ্জামসহ দুই যুবক আটক
