ঢাকা রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

ঐতিহ্যবাহী খেতুরীধাম উত্তপ্ত , শান্ত রাখতে সতর্ক প্রশাসন


শাহিনুর রহমান সোনা, রাজশাহী ব্যুরো প্রধান  photo শাহিনুর রহমান সোনা, রাজশাহী ব্যুরো প্রধান
প্রকাশিত: ১৫-৬-২০২৫ দুপুর ১২:৪০

রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার খেতুরী গ্রামে ৪০০ বছরের অধিক সময় ঐতিহ্য ধরে রাখা বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় তীর্থস্থান "খেতুরী ধাম" এ সম্প্রতি টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে ৷ সাধারণ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আশংকা যে কোন সময় সেখানে ঘটে যেতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। তবে প্রশাসন যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে।

ঘটনার সূত্রপাত: 
খেতুরী ধাম একটি নির্দিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়। নির্দিষ্ট মেয়াদ পরপর ১২ জনের ট্রাস্টি বোর্ড গঠিত হয়। সেখানে ১ জন সভাপতি, ১ জন সম্পাদক এবং ১০ জন ট্রাস্টি সদস্য থাকেন৷ এই ১২ জনের মধ্যে বিগত কমিটির ১ জনকে করা হয় বহিস্কার। বহিস্কারের পক্ষে ছিলেন ১০ জন। বাকি ১ জন বহিস্কৃতের আপন ভাই, তিনি কোন পক্ষেই মতামত দেননি বরং নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন বহিস্কারের ঘটনার সময় থেকেই। 

বহিস্কারের কারণ হিসেবে বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি, সম্পাদক ও সদস্যদের বক্তব্য: বহিস্কৃত ট্রাস্টি সুনন্দন দাস রতন ছিলেন গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা। তিনি রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী নেতা ওমর ফারুক চৌধুরী'র ছিলেন নিকটজন। খেতুরী ধামের পেছনেই ছিল রতন দাসের দুই বিঘা ফসলী জমি। সেই জমি থেকে খেতরী ধামের ওপর দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে করতে চেয়েছিলেন ১২ ফুট রাস্তা। আর রাস্তা হয়ে গেলেই ফসলী জমি হয়ে উঠতো প্লট আকারে বিক্রির যোগ্য। কিন্তু তিনি ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমতি না নিয়ে গায়ের জোরে করতে চেয়েছিলেন কাজটি। একাজটিতে ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যরা বাধা দিলে তিনি হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। ধামের শান্তিপূর্ণ সব কাজেই মারতে থাকেন বাগড়া। সবশেষে পদ থেকে বহিস্কৃত হয়ে এবং আওামী বটবৃক্ষের ছায়া হারিয়ে হয়ে পড়েন দিশেহারা। চালতে থাকেন নানা কুটকৌশল। তার কথা আমি যেহেতু ধামে নাই, ধামে শান্তিও থাকতে দেব না। এরপর থেকেই তীর্থস্থান খেতুরী ধামে চলছে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা। প্রথমে বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ডের বিরুদ্ধে ভক্তদের মাঝে অপপ্রচার চালানো হয়। কাজ না হলে দখল নিতে যায় একদল সন্ত্রাসীসহ। তালা দেয়া হয় ধামের ঘরগুলোতে। পরে স্থানীয় ও ভক্তরা প্রশাসনের সহায়তায় উদ্ধার করে।  

সর্বশেষ যে ঘটনায় উত্তপ্ত খেতুরী ধাম: গত ১২ জুন দুপুর ৩.৪০মি. বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট গোদাগাড়ী উপজেলা শাখার প্যাডে আহবায়ক শ্রী উপেন্দ্রনাথ মন্ডল স্বাক্ষরিত "হিন্দু ও আদিবাসী সনাতনী সম্প্রদায়ের মিলন মেলা"র আয়োজনের অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয়া হয় ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি / সাধারণ সম্পাদক বরাবর। কিন্তু রাতেই "আধুনিক সনাতন ধর্ম" নামে একটি ফেসবুক আইডি সহ বেশ কিছু ফেসবুক লেখা হয় "গোদাগাড়ী প্রেমতলী গৌরাঙ্গ দুর্নীতিবাজ ট্রাস্টি বোর্ডের
বিরুদ্ধে আয়োজন করা হয়েছে ১৩.০৬.২০২৫ সকাল দশটার সময় সকল সনাতনী ভাইদের উপস্থিত হওয়ার
জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে এবং আমাদের প্রসাদের আয়োজন করা হয়েছে সবাই মিলে উপস্থিত হবেন।" এরপর নানাজনের কাছ থেকে হুমকি আসতে থাকে কাল দখল নেয়া হবে খেতুরী ধাম। খবর পেয়ে পুলিশ সহ প্রশাসনের উর্ধতনরা সেখানে উপস্থিত হন। এখন পর্যন্ত পুলিশ পাহারায় রয়েছে সেখানে। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানের কোন খবর নেই, যদিও প্যান্ডেল করার জন্য বাঁশের ফ্রেম তৈরি করা হয়েছিল অর্ধেক, তারপর আর কারো দেখা পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে সুনন্দ দাস রতন বলেন, খেতুরী ধাম নিয়ে বর্তমানে আমার কারো সাথে কোন কথা হয় না। ১০ সাল থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত ট্রাস্টি ছিলাম, এখন আমি নাই। তার জায়গা এবং রাস্তা তৈরীর বিষয়ে তিনি বলেন, আমার দেড় বিঘা মত ফসলী জমি আছে। আর রাস্তা আমি মন্দিরের আগত ভক্তদের যাতায়াত সুবিধা বিবেচনায় করতে চেয়েছিলাম৷ আমি ধামের বিভিন্ন দূর্নীতির বিষয়ে ট্রাস্টি বোর্ড লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম, সেগুলোর ব্যবস্থা না নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারী-২৫ আমাকে বহিস্কার করা হয়। এর পর আমি ইউএনও সাহেব সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও দূর্ণীতির বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কোন লাভ হয়নি। খেতুরী ধাম দুর্নীতি মুক্ত, অনাচার মুক্ত হোক আর প্রকৃত ভক্ত সেবা পাক।এটাই আমার কাম্য।
 
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট গোদাগাড়ী উপজেলা শাখার আহবায়ক শ্রী উপেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, মূলত আমাদের এলাকার হিন্দু ধর্মের সকল জাতি-গোষ্ঠীর ভাইদের একটি মিলন মেলা করতে চেয়েছিলাম। তাদের বাধার কারনে আমরা এটা করতে পারিনি। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবার কথা ছিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়'র। এখন আমি খেতুরী ধামের সমস্ত দূর্নীতির অবসান চাই এবং এই অপদস্তের বিচার চাই। 

এ প্রসঙ্গে গোদাগাড়ীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সহকারী ভূমি কমিশনার মো. শামসুল ইসলামকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনাস্থলের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্থানীয় থানাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা মনে করছেন এ ধরনের বিরোধপূর্ণ কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিনের ধর্মীয় সহাবস্থানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। এ কারণে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতা রক্ষায় দ্রুত সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপের দাবিও উঠে আসছে।

উল্লেখ্য, রাজশাহীর জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার খেতুর গ্রামে অবস্থিত ৪০০ বছরের প্রাচীন "ঐতিহ্যবাহী খেতুরীধাম" যেখানে তিন দিনব্যাপী ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব পালিত হয় প্রতিবছর। মহোৎসবের কয়েকদিন আগে থেকেই ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে খেতুরীধাম। অরুণোদয় থেকে অষ্ট প্রহরব্যাপী সেখানে চলে তারক ব্রক্ষ্মনাম সংকীর্ত্তন। দ্বিতীয় দিন প্রথম প্রহরে দধিমঙ্গল, দ্বি-প্রহরে ভোগ আরতি ও মহান্ত বিদায়ের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি হয়। এই উৎসবকে ঘিরে প্রতি বছর দুই বাংলার ভক্তদের ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই হারায় গৌরাঙ্গবাড়ি মন্দিরের আশপাশের কয়েকটি গ্রাম। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশ হিন্দু ধর্মালম্বীদের এটিই সবচেয়ে বড় জমায়েত। উৎসব সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে কয়েকদিন আগেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে খেতুরীধাম ট্রাস্টিবোর্ড। ভক্তদেরও আগমন শুরু হয় কয়েকদিন আগে থেকেই। উৎসবকে ঘিরে পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। মেলা নির্বিঘ্ন করতে মাঠে থাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকশ নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক। আগত ভক্তদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মেডিকেল ক্যাম্পও বসানো হয় সেখানে। সারা পৃথিবীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মোট ছয়টি ধাম রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিই ভারতবর্ষে । আর একটি মাত্র বাংলাদেশে। আর তা এই খেতুরীধাম। এ কারণে প্রতিবছর উৎসবকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন জেলাসহ ভারত, নেপাল ও মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ ভক্তের আগমন ঘটে খেতুরীধামে। এই অজপাড়াগাঁয়ে কয়েক লাখ নারী-পুরুষের জন্য প্রয়োজনীয় প্রসাদ, বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়। যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে প্রেমতলী বাজার থেকে খেতুরীধাম পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সংযোগ সড়কে আলোকসজ্জারও ব্যবস্থা করা হয়।  নরোত্তম ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী থেকে জানা যায়, ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে ঠাকুর নরোত্তম দাস তৎকালীন গড়েরহাট পরগণার অন্তর্গত বর্তমান গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মা তীরের গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জমিদার কৃষ্ণনন্দ দাস, মা নারায়নী রাণী। গোপলপুরে শৈশব অতিবাহিত করে ঠাকুর নরোত্তম দাস বৃন্দাবন অভিমুখে যাত্রা করেন। সেখানে নিখিল বৈষ্ণবকুল লোকনাথ গোস্বামীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে দীক্ষা লাভ করেন। পরে তিনি খেতুরে ফিরে আসেন। খেতুর মন্দিরে গড়ে তোলেন স্থাপনা। এরপর তিনিই প্রথমে এখানে এ উৎসবের আয়োজন করেন। ভক্তরা দূর-দূরান্ত থেকে তার কাছে এসে দীক্ষাগ্রহণ করতে শুরু করেন। ১৬১১ খ্রিস্টাব্দের কার্তিকী কৃষ্ণা পঞ্চমী তিথিতে ঠাকুর নরোত্তম দাস নিত্তলীলায় প্রবেশের মানসে গঙ্গাস্নানের বাসনা প্রকাশ করেন।
এ সময় শিষ্যরা তাকে গঙ্গাজলে নিয়ে গেলে নিজের দেহকে অর্ধনিমজ্জিত করে প্রিয় শিষ্য গঙ্গানারায়ণ ও রামকৃষ্ণকে আদেশ করেন তার দেহ মার্জন করতে। গুরু আজ্ঞায় নরোত্তমের ওই দুই শিষ্য তার দেহ মার্জন করতে থাকলে পুরো দেহ এক সময় সাদা দুধের মতো তরল পদার্থে পরিণত হয়ে গঙ্গাজলে মিলিত হয়ে যায়।
সে অনুযায়ী ঠাকুর নরোত্তম দাস পৃথিবীতে ৮০ বছর স্থায়ী ছিলেন। এরপর থেকেই যুগ পরম্পরায় দুর্গাপূজার পর বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীরা অহিংসার এই মহান সাধকের কৃপা লাভের আশায় খেতুরীধামে বছরে একবার মিলিত হয়ে থাকেন।

এমএসএম / এমএসএম

আদমদীঘিতে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় ৩ বছরের শিশুর মৃত্যু

ফুলকুমার নদীতে ডুবে দুই ভাই বোনের মৃত্যু

নবীনগরে শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে এসে শ্যালকের দা'য়ের কোপে আহত বোন জামাই

চট্টগ্রামে মহাসড়কের পানি নিস্ক্রানের নালা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ

চলনবিলের কৃষকদের স্বপ্ন এখন পানির নিচে

গজারিয়া ইউনিয়নে বিএনপির ঈদ পূর্ণমিলনী ও কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

বকশীগঞ্জে পূর্ব শত্রুতারকে কেন্দ্র করে হামলা

মোবাইল ফোন চুরির সন্দেহে যুবকে কুপিয়ে হত্যা, আটক ৩

তানোরে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় কার্পেটিং কাজ চলছে" কর্তৃপক্ষ নিরব

কমলগঞ্জে বিদ্যুতের ছিঁড়া তারে পিষ্ট হয়ে মহিলার মৃত্যু

উলিপুরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা চরাঞ্চলে বাদাম তুলছেন

ঘাঘর বাজারে উচ্ছেদ অভিযান, দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা অপসারণ

মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম আজাদের স্মরণে ভূজপুর হিজবুল্লাহ ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল