বারহাট্টার গাছে গাছে ঝুলছে পাকা খেজুর কাঁদি

বারহাট্টার গ্রামীণ আঁকাবাঁকা পথের ধারে, জমির আইলে এবং বাড়ির আনাচেকানাচে অনাদর-অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছে দোল খাচ্ছে পাকা খেজুর।
'কাঁদি ভরা খেজুর গাছে, পাকা খেজুর দোলে, ছেলে-মেয়ে আয় ছুটে যাই, মামার দেশে চলে।' পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের 'মামার বাড়ি' কবিতার এ লাইনগুলোর কথা মনে পড়ে যায় খেজুর গাছে ঝুলে থাকা হলুদ রঙের কাঁদি ভরা খেজুর দেখে। প্রাচীনতম ফলের মধ্যে অন্যতম এ দেশি খেজুর স্বাদ অনন্য হওয়ায় গাছে ফল পাকলেই কিশোরদের দুরন্তপনার বেড়ে যায়। আষাঢ়ের প্রথম ভাগে গাছে গাছে পাকতে শুরু করেছে দেশি খেজুর। সবুজ রং থেকে গাঢ় হলদে হলে পরিপক্ক হয় এবং পাকলে গাঢ় বাদামী বা কালচে রঙের হয়। খেজুর গাছ প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। তাই রাস্তার দু’ধারে পুকুর পাড় কিংবা বসতভিটায় এ গাছ বেশি দেখা যায়। পাকা খেজুর দোয়েল, বুলবুলি, শালিক পাখিসহ অন্যান্য পাখিদের খুব প্রিয়। পিঁপড়া ও মৌমাছিরাও এ পাকা খেজুরের স্বাদ নিতে দেখা যায়।
সরেজমিনে উপজেলা সদরসহ সাহতা ইউনিয়ন, বাউসী ইউনিয়ন, রায়পুর ইউনিয়ন, সিংধা ইউনিয়ন, চিরাম ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম ঘুরে ও কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে জানান, মানবজাতির কল্যাণে প্রকৃতির সৃষ্টি। অসংখ্য বৃক্ষের মধ্যে খেজুর গাছ একটি অতি পরিচিত বৃক্ষ। খেজুরের রস সংগ্রহ এবং খেজুর উৎপাদন গ্রামবাংলার একটি প্রাচীনতম ঐতিহ্য। একসময় উপজেলার প্রায় সব গ্রামেই অনেক দেশীয় খেজুর গাছ ছিল। তখন সকাল হলেই খেজুর সংগ্রহে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেশ আনন্দমুখর আয়োজন দেখা যেতো। খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় এখন আর সে দৃশ্য খুবই কম চোখে পড়ে।
বারহাট্টা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক শামস উদ্দিন আহমেদ বাবুলের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, দেশি খেজুরকে কেউ কেউ বুনো বা জংলি খেজুর নামেও ডাকেন। কেননা এটা কেউ চাষ করে না, জঙ্গলের গাছ। দেশি খেজুর এ দেশের একটি অন্যতম প্রাচীন ফল। এ দেশেই উৎপত্তি, এ দেশেই বিস্তার। একসময়ে বর্ষা মৌসুমে গ্রাম-গঞ্জের যেদিকে চোখ যেতো দেখা মিলতো গাছে ঝুলে থাকা থোকা থোকা পাকা খেজুর। জ্যৈষ্ঠ শেষ ভাগ থেকে শ্রাবন মাস পর্যন্ত গাছ থেকে খেজুরের ছড়ি সংগ্রহের উৎসবে মেতে উঠত গ্রামের কিশোর-কিশোরীরা। বর্তমানে দিনদিন গ্রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে দেশীয় খেজুর গাছ। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে রূপসী বাংলার সেই ঐতিহ্য। যদি সকলের উদ্যোগে এসব খেজুর গাছ টিকিয়ে রাখা যায় এবং নতুন করে খেজুর গাছ রোপণ যায় তাহলে পুরোনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখা সম্ভব হবে।
কথা হয় বারহাট্টা সরকারি কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র প্রভাষক মজিবুল হকের সাথে তিনি জানান, খেজুর এক ধরনের তাল জাতীয় শাখাবিহীন বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম 'ফিনিক্স ড্যাকটিলিফেরা' (Phoenix dactylifera) এবং ইংরেজি নাম হল 'Date Palm' ফলের ক্ষেত্রে এটি "Dates" নামে পরিচিত। চৈত্র মাসে এ গাছে ফুল ফোটে। কাঁদিতে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল ফোটে। পুরুষ ফুল সাদা ক্ষুদ্রাকার। ফল হয় গ্রীষ্মকালে। ফল প্রায় ডিম্বাকৃতি, হলুদ রঙের, লম্বায় প্রায় ২.৫ সেন্টিমিটার। ভেতরে হালকা বাদামি রঙের একটি বীজ থাকে। বীজের ওপরে পাতলা আবরণের মতো শাঁস থাকে। কাঁচা শাঁস কইষট্যা-নোনতা। কিন্তু পাকলে তা বেশ মিষ্টি হয়। পাকা খেজুরের রঙ লালচে বাদামি থেকে খয়েরি হয়। বীজ দিয়েই খেজুরের বংশবৃদ্ধি হয়।
উপজেলা সদরের গড়মা গ্রামের বাসিন্দা জগদীশ দেবনাথ বলেন, এখন তো আর আগের মতো খেজুরের গাছ নাই। আমার পনেরোটা খেজুর গাছ আছে, প্রতি শীতকালে গাছিদের কাছে চুক্তিতে রস উত্তোলনের জন্য গাছ বিক্রি করে দেই। এখন দশটা গাছে ফল এসেছে। অনেক খেজুর ধরেছে, দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। খেজুর গাছ গুলোতে থোকায় থোকায় ঝুলছে পাকা খেজুর। তা দেখে প্রতিটি মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশীয় খেজুরের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, সালফার, আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি-৬, ফলিক এ্যসিড, আমিষ ও শর্করা। এ খেজুরে প্রচুর পরিমাণ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর উপাদান রয়েছে। খেজুর হার্টের রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। খেজুর রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করে। এছাড়াও ফলটি হজমবর্ধক এবং পাকস্থলি ও যকৃতের শক্তি বাড়ায়। খেজুরের বীজ রোগ নিরাময়, খেজুর ফুলের পরাগরেণু পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করে শুক্রাণু বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, আবহাওয়া ও জলবায়ুগত কারনে দিনদিন খেজুর গাছ মরে যাচ্ছে এবং অযত্ন-অবহেলায় যত্রতত্র বেড়ে ওঠা এ গাছ মানুষের অনেক উপকারে আসলেও তেমন একটা কদর নাই বললেই চলে। যে কারনে আর পূর্বের মতো এ গাছ দেখা যায় না। এছাড়া দিন দিন ইটভাটায় খেজুর গাছ জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার বৃদ্ধির কারনেও কমতে শুরু করেছে উপকারী এ গাছটি।
এমএসএম / এমএসএম

নাচোলে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় জোড়া মৃত্যু লাশ এসেছে এলাকায় শোকের ছায়া

ভূরুঙ্গামারীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর জনসভা অনুষ্ঠিত

গলাচিপায় জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা

শ্যামনগরে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজনে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস-২০২৫ উদযাপন

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নওগাঁয় বৃক্ষরোপণ

দিনাজপুর বোর্ডে ৪৩ কলেজে কেউই পাস করেনি

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নওগাঁয় বৃক্ষরোপণ

কুড়িগ্রামে ৬১৪ বস্তা নকল সার ধ্বংস

শাহজাদপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দলিল লেখক সমিতি'র নেতৃবৃন্দের সাথে প্রফেসর ড. এমএ মুহিতের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

হাতিয়ায় বিএনপিররাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচি পথসভা ও লিফলেট বিতরণ

কুড়িগ্রামে ৬১৪ বস্তা নকল সার ধ্বংস

বড়লেখা উপজেলায় এইচএসসিতে শীর্ষে এম. মুন্তাজিম আলী মহাবিদ্যালয়
