ঢাকা সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫

লাকসামে শিক্ষক সমিতির ভবনে গরু-ছাগলের বসবাস


দেবব্রত পাল বাপ্পী, লাকসাম  photo দেবব্রত পাল বাপ্পী, লাকসাম
প্রকাশিত: ২৯-৬-২০২৫ বিকাল ৬:৪৭

একসময় বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ছিলো একটি ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামী সংগঠন। বর্তমানে সংগঠনটি কয়েকটি অংশে বিভক্ত। প্রথমিক শিক্ষকদের সমস্যা নিরসনের পরিবর্তে সংগঠনগুলো আত্মকোলাহলে নিমজ্জিত। তেমনি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নামে অর্জিত সম্পদ ও শিক্ষক সমিতির হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান আজ বেহাল অবস্থা। কর্তৃপক্ষের নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভগ্নদশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষক সমিতির দোতলা ভবন, অফিস হলরুম ও কোটি টাকার মূল্য অর্জিত সম্পদও । যেকোনো সময়ে  প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রায় ৬০ শতক জমি বর্তমানে তাদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা বিদ্যমান। একসময়  শিক্ষকদের নিয়মিত পদচারণা ছিলো শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে। মুখরিত হয়েছিল শিক্ষকদের হলরুম। দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে  শিক্ষকদের নিয়মিত পদচারণ না থাকায় ও কার্যক্রম বিলুপ্ত হওয়ার পর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এ কার্যালয়টি। অযত্ন, অবহেলা আর সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষক সমিতির নামে কোটি টাকার এ সম্পদ।তবে এসব নিয়ে কোনো তৎপরতা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনিকভাবে বৃহত্তর লাকসামের একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে বৃহত্তর লাকসাম অঞ্চলটি কুমিল্লা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এবং একসময় এই অঞ্চলের নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ, মনোহরগঞ্জ ও লালমাই নিয়ে গঠিত ছিল লাকসাম উপজেলা। নেতৃত্ব ও শাসন লাকসাম থেকেই পরিচালিত হতো। ১৯৭৩ সালে লাকসাম পৌর শহরের নশরতপুর এলাকায় বাংলাদেশ সরকারি  প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নামে প্রায় ৬০ শতক জমি ওপর গড়ে তোলা হয় নান্দনিকভাবে লাকসাম উপজেলা শাখা কার্যালয়টি। এতে রয়েছে একটি দ্বিতীয় তলা ভবন, হলরুম ও পাকা ঘাটলাসহ পুকুর। ভবনগুলোতে দেওয়া হয়েছিল বৈদ্যুতিক ও গ্যাস লাইন কয়েকটি ফ্যান এবং অনেক মূল্যমাণ আসবাবপত্র।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বৃহত্তর লাকসাম উপজেলা শাখা কার্যালয়টি শুরুতে নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন নশরতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক মুখলেসুর রহমান, গাজিমুড়া স্কুলের আলী আশ্রাফ ও নশরতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নজরুল ইসলাম ২০০০ সাল পর্যন্ত ৩১ সদস্য কমিটির সমিতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন তারা। ২০০৮ সালের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন উদ্যোগ নেওয়া হলেও বৃহত্তর কেন্দ্রের জটিলতা থাকায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। পরে ২০১২ সালে শিক্ষক সমিতির পুনরায় নির্বাচন হলে এতে সভাপতি পদে নশরতপুর স্কুলে শিক্ষক বিকাশ সিনহা ও সাধারণ সম্পাদক পদে গাজিমুড়া স্কুলের শাহ আলম মনির বিতর্কভাবে নির্বাচিত হয়। এ নিয়ে সমিতির সদস্যদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে সংগঠনের শিক্ষকরা। এর পর থেকে সমিতির পুরোপুরি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
সরজমিনে দেখা যায়, মেইন গেটের সামনে স্পষ্ট লেখা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারি  প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি লাকসাম উপজেলা শাখা কার্যালয়। ভিতরে গিয়ে দেখা মিলে শিক্ষকদের হলরুমের বারান্দায় কয়েকটি ছাগলের বসবাস।ভেতরে পুরোটাই ঝোপ-জঙ্গল, ময়লা-আবর্জনায় ভরা।দোতলা এ ভবনটির নিচতলার কয়েকটি রুমের জানালার কাচ ভেঙে গেছে। রডগুলোতে ভেজা কাপড় ঝুলিয়ে শুকাচ্ছেন অস্থায়ী এক পরিবার। অযত্নে-অবহেলায় ভবনের চারপাশের বড় বড় বিভিন্ন প্রজাতির গাছে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে দ্বিতল ভবনটি। সংস্কার ও পরিচর্যার অভাবে বৃষ্টির পানিতে ভবনের দেওয়াল ও প্রাচীরগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভবনের সামনে রয়েছে পাকা ঘাটলাসহ একটি পুকুর। ঘাটলাটি দুই ভাগে ফাটল হয়ে পড়ে আছে পুকুরে ভিতরে। হঠাৎ যে কারও দেখে মনে হবে শিক্ষক সমিতির  নয় যেন ভূতের আস্তানা আর গহিন জঙ্গল।বোঝার কোনো উপায় নেই যে এটি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির কার্যালয়।তবে কার্যালয়টি দেখাশোনার জন্য ২০১৪ সালে কামাল হোসেন নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তার পরিবার নিয়ে দ্বিতীয় তলা ভবনে বসবাস করছেন। বর্তমান কামাল হোসেন না থাকলেও তার মা ভাই-বোন থাকছে ভবনটিতে।
কথা হয় কামাল হোসেন সাথে তিনি বলেন, কার্যালয়ে সামনে আমার মিষ্টির ঢুংগা বানানোর কারখানা থাকার কারনে আমি বাবা মা ভাই বোন নিয়ে সমিতির লোকজন সাথে কথা বলে কার্যালয়ে উঠেছি। এখন পরিবার নিয়ে অশ্বতলায় এলাকায় থাকছি।ভবনটির বিদ্যুৎ গ্যাস বিল আমি নিজেই পরিশোধ করছি।বর্তমানে ওই ভবনে  মা বোন ভাইয়েরা থাকছেন তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি পাশাপাশি ব্যবসা করছি। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, দ্বিতীয় তলা ভবনের পিছনে ঝাড়-জঙ্গলে ঢেকে যাওয়া যে অবস্থা রাত হলেই শিয়াল, কুকুর, বিষাক্ত সাপ আর বিড়ালের ডাক শোনা যায়। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শিক্ষক হলরুমের ভেতরে থাকা আসবাবপত্র ও ফার্নিচার। ধুলো আর ময়লা ছাড়া তিল ধারণের জায়গাটিও যেন নেই হল রুমের ভেতরে। একজন ব্যবসায়ী তার পরিবার নিয়ে থাকছে ঝুঁকি পূর্ন ভবনে এমনকি  শিক্ষকদের হলরুমের ছাগলের খামার করছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির লাকসাম শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মিলন বলেন, সংগঠন বিলুপ্তি হওয়ার কারণে এখন আর কেউ প্রতিষ্ঠানটির খোঁজ খবর নিচ্ছেনা। বর্তমানে কার্যালয়টি পরিত্যক্ত হিসাবে পড়ে রয়েছে। সমিতির কার্যালয়ে দেখা শোনার করার জন্য একজন  ব্যবসায়ী তার পরিবার নিয়ে থাকছেন এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল নিজ অর্থায়নে তিনি পরিশোধ করছেন। এছাড়াও আপনি এ সমিতির ও ভবনের বিষয় নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি না করাটাই ভালো হয় মনে করি। কারণ এখানে যে সম্পত্তির ও ভবন রয়েছে সে গুলো কোন দখল নেই।  সকল কিছুই শিক্ষক সমিতির নামে কোন একক ব্যক্তির নামে নয়। 
স্থানীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষক কামরুল হাসান বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি" মানে হল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি সংগঠন বা সমিতি। এই সমিতি শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, শিক্ষকদের অধিকার আদায়,শিক্ষকদের স্বার্থরক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে জন্য কাজ করা। শিক্ষকদের এ সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন দাবি দাওয়া সরকারের কাছে তুলে ধরে এবং তাদের পেশাগত উন্নয়নে সহায়তা করা। শিক্ষক সমিতি শিক্ষকদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্যই এ সংগঠন বা সমিতি। বর্তমানে লাকসাম শাখা যে শিক্ষক সমিতির নামে কার্যালয়টি রয়েছে এটি এখন ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়েছে। সমিতির কার্যক্রম না থাকায়  এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে স্থাপনাগুলো নষ্ট হচ্ছে শিক্ষকদের কোটি টাকার এ সম্পদ। 
লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার হামিদ দৈনিক সকালের সময় প্রতিনিধি বলেন, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নামে যে কার্যালয়টি রয়েছে সেটির বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সম্পত্তি ও ভবনগুলোর বিষয়ে দ্রুত খোঁজ নিয়ে পরে জানানো যাবে।

 

এমএসএম / এমএসএম

দর্শনা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

ফেনীতে এলজিইডির প্রকল্পে অনিয়ম, নেপথ্যে দীপ্ত বাবু

আদমদীঘিতে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের দুই কোচ লাইনচ্যুত

লাকসামে শিক্ষক সমিতির ভবনে গরু-ছাগলের বসবাস

কাউনিয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিস্কুট জুস ব্যাগ সহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ

দাউদকান্দিতে নদী পুনরুদ্ধার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

মা‌নিকগঞ্জ প্রেসক্লা‌বের সভাপ‌তি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক শাহানুর ইসলাম

দোহারে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় হেল্প ডেস্ক চালু

জয়পুরহাটে ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্রের সহায়তাকারী ও কম্পিউটার কর্মীদের প্রশিক্ষণ

পরিবেশ রক্ষায় ট্যুরিস্ট পুলিশের মতবিনিময় সভা ও বৃক্ষরোপণ

শান্তিগঞ্জের ইমা যাচ্ছেন হকি খেলতে চীনে

জলবায়ু সংকটে বাস্তুহারা বাড়ছে, সমাধান খুঁজতে রাজশাহীতে কর্মশালা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিন দিনব্যাপী জাতীয় ফল মেলা শুরু