প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দর্জি পাখি টুনটুনি

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর আবহমান বাংলার রূপ আমাদের মুগ্ধ করলেও এ সৌন্দর্য বর্ধনের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে নানা প্রজাতির পাখি। এক সময়ে গ্রাম-গঞ্জের মাঠে-ঘাটে, বনে-জঙ্গলে, বাড়ির আঙিনায়, গাছে গাছে টুনটুনির ডাক শোনা গেলেও কালের বিবর্তনে সারা বাংলাদেশের মতো বারহাট্টার প্রকৃতি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা দরজি পাখি খ্যাত টুনটুনি।
দৃষ্টিনন্দন ছোট্ট পাখি টুনটুনি। একসময়ে গাছের ডালে ডালে এদের হাক-ডাকে মুখর হয়ে থাকতো গ্রামীণ পরিবেশ। এরা চঞ্চল প্রকৃতির পাখি। এরা এক জায়গায় স্থির থাকতে চায় না। দূরন্ত বালকের মতো ছুটে চলে। সব সময় এরা গাছের ডালে লাফালাফি করে। পিঠের উপরের লেজ নাড়িয়ে টুনটুন শব্দ করে উড়ে বেড়ায়। চোখে না দেখলে এই টুনটুনি পাখির ডাক শুনে মনেই করতে পারবেন না যে এরা আকারে এতই ছোট। অঞ্চলভেদে বিভিন্ন নামে ডাকা হয় এই টুনটুনি পাখিকে যেমন-টুনি, মধুচুষকি, দুগাটুনটুনি, বেগুন টুনটুনি, মৌটুসি, নীল টুনটুনি, দর্জি, মৌটুসকি ইত্যাদি। ছোট নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর পাখি টুনটুনি। পাখিদের মধ্যে বাবুই পাখিকে স্থপতি পাখি বলা হলেও এই ছোট পাখি টুনটুনির নির্মাণ শৈলী সম্পূর্ণভাবে আলাদা। গ্রামগঞ্জের মানুষ খুব আদর করে একে দর্জি পাখি বলে ডেকে থাকে। দর্জি পাখি নামটি এসেছে এদের বাসা গড়ার ঢং থেকে। এই দর্জি পাখিটি ঠোঁট দিয়ে গাছের পাতা সেলাই করে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে খুবই মজবুত সুন্দর বাসা তৈরি করে থাকে। এরা সাধারণত ঝোপঝাড় জাতীয় গাছ বা ছোট মাঝারি উঁচু গাছ যেমন- বেল, লেবু, ডুমুর, সূর্যমুখী, সেগুন ইত্যাদি গাছের পাতায় বাসা বাঁধতে খুব পছন্দ করে। তবে এরা সবচেয়ে বেশি বাসা বাঁধতে পছন্দ করে সেগুন গাছে। 'রাজার ঘরে যে ধন আছে, টুনির ঘরেও সে ধন আছে' বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর 'টুনটুনি আর রাজার গল্প'সহ বাংলার শিশুসাহিত্যিকদের রচিত অসংখ্য ছড়া, গল্প, গানে শক্তভাবে জায়গা করে নেওয়া টুনটুনি পাখির দেখা বাস্তবে খুবই কমই মিলছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তারা জানান, এক সময় বাড়ির আঙিনায়, ছোট-বড় গাছের ডালে, বাঁশ ঝাড়ের ফাঁকে টুনটুনি পাখি দেখতে পেতাম। এখন তা আর চোখে পড়ে না। টুনটুনি পাখি পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ খায়। এছাড়া কেঁচো, মৌমাছি, ফুলের মধুও খেয়ে থাকে। এদের খাদ্যতালিকায় আরও আছে ধান-পাট-গম পাতার পোকা, শুয়োপোকা এবং এর ডিম ইত্যাদি। টুনটুনি পাখি মূলত আমাদের ফসলের কোন ক্ষতি করে না বরং এরা কৃষি জমির ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খেয়ে আমাদের ক্ষেতের ফসল রক্ষা করে। দিন দিন গাছপালা, ঝোঁপঝাড়, খাল-বিল, নদী-নালা ধ্বংস ও জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে ধীরে ধীরে বিলীনের পথে দেশি জাতীয় এ পাখিটি।
কৃষক নন্দন সরকার, নিজাম উদ্দিন, আলাল মিয়া, কুতুব উদ্দিনসহ অনেকে বলেন, বিলুপ্তি পথ থেকে এ পাখিটিকে রক্ষা করতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক রাখা জরুরি। পাশাপাশি এদের আবাসস্থল রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। আবাসস্থল বিনষ্টের কারণে টুনটুনির ডিম পেড়ে বংশ বিস্তার করতে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই এ পাখি রক্ষায় আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
বারহাট্টা সরকারি কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র প্রভাষক মজিবুল হকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, টুনটুনি (Tailorbird) Szlviidae পরিবার ও Orthotomus গণের অন্তর্ভুক্ত অত্যন্ত সুপরিচিত একটি পাখি। টুনটুনির বৈজ্ঞানিক নাম Orthotommus sutoriu। গাছের পাতা ঠোঙার মতো মুড়িয়ে আঁশ দিয়ে ঠোঁটের সাহায্যে সেলাই করে এরা বাসা বানাতে পারে বলে এদের ইংরেজিতে tailorbird অর্থাৎ দর্জি পাখি বলা হয়। টুনটুনি আকারে প্রায় ১৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। বুক ও পেট সাদাটে। ডানার উপরিভাগ ও মাথা জলপাই লালচে। লেজ খাড়া. এতে কালচে দাগ থাকে। পৃথিবীতে ১৫ প্রজাতির টুনটুনি থাকলেও বাংলাদেশ ও ভারতে কালাগলা, পাহাড়ি, পাতি এই তিন প্রজাতির টুনটুনি দেখতে পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, টুনটুনি পাখির বাসা তৈরি ও প্রজনন মৌসুম মাঘ মাসের শেষের দিকে এবং ফাল্গুন-আশ্বিন মাসের মধ্যে বাসা বাঁধা শেষ হলেই ৪-৫টি ডিম পাড়ে। বছরের প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী টুনটুনি ২-৩ বার ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটায়। বছরজুড়ে বংশ বিস্তার করলেও এদের প্রজনন ঋতু মূলত বর্ষাকাল। স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই ডিমে তা দিয়ে ১০ দিনের মধ্যে বাচ্চা ফুটানোর পরে বাচ্চাসহ বাসা পরির্বতন করে।
বারহাট্টা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক বলেন, আগে গ্রাম-বাংলার আনাচে-কানাচে ঝোঁপঝাড়, বনজঙ্গলে দেখতে পাওয়া যেতো। তখন গ্রামের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের টুনটুনির বাসার প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল। আজকাল টুনটুনি পাখির দৃষ্টিকাড়া বাসাও খুব তেমনটা চোখে পড়ে না। বন উজাড় মনোভাবের কারণে অনেক পাখিই ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে। প্রকৃতিও হুমকির মুখে সবুজ বনায়নের অভাবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাদিকুল ইসলাম বলেন, টুনটুনি পাখি পরিবেশের জন্য অনেক উপকারী। এক সময় গ্রাম-শহর সর্বত্রই এ পাখি দেখা যেত। এখন আর তেমন দেখা যাচ্ছে না। যথেচ্ছাচারে পাখিটির আবাসস্থল গাছ, ঝোপঝাড় ইত্যাদি ধ্বংস করার কারণে মূলত এ পাখিটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ পাখি বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করতে আবাসস্থল বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
এমএসএম / এমএসএম

পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জন করে চটের ব্যাগ ব্যবহার করুন- কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সোনাগাজীতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গরু চোরসহ গ্রেফতার-০৪, চোরাই গরু উদ্ধার

সীমান্তে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

ভূরুঙ্গামারীতে বিএনপির নেতাদের নামে অপপ্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এভাবেই নষ্ট হচ্ছে পৌরসভার অর্ধ কোটি টাকার সম্পদ

টাকার বিনিময়ে সনদ বিক্রি, শিক্ষার্থী নেই তবুও চলছে এমপিওভুক্ত কলেজ

জয়পুরহাটে ব্র্যাকের উদ্যোগে ১৩৯ জন গ্রাহকের মাঝে তেলাপিয়া মাছের পোনা বিতরণ

নেছারাবাদে স্থানীয় চার যুবকের সাহসে টাওয়ার থেকে উদ্ধার মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক

তারাগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় গরুর মৃত্যু, খামারীর লিখিত অভিযোগ

টাঙ্গাইলে স্বর্ণকারের বাড়িতে ডাকাতির মূলহোতা'সহ ৭ ডাকাত গ্রেপ্তার

কুমিল্লায় ভন্ড রাজার বাগের আস্তানা বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল

চট্টগ্রামে ছিনতাইয়ের ঘটনায় চুরি মামলা, উদ্ধারকৃত দুই সিএনজি গায়েব!
