হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধানের ডোল

একসময়ে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক ছিল বাঁশের তৈরি ধানের গোলা বা ডোল। আগে এটি শোভা পেতো অবস্থাসম্পন্ন কৃষকের বাড়িতে, মূলত ধান সংরক্ষণের জন্য এটি ব্যবহৃত হতো। আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না গোলা বা ডোল।
'গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ'—এই প্রচলিত প্রবাদটি আজও মানুষের মুখে শোনা যায়। কিন্তু বর্তমানে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেও খুঁজে পাওয়া যায় না গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা বা ডোল। একসময়ে এতে রাখা হতো চাল, গম, ভুট্টাসহ নানা খাদ্যশস্য। এখন মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেত থাকলেও উপজেলার অধিকাংশ কৃষকের বাড়িতে ধান, গম মজুত করে রাখার বাঁশ-বেত ও কাদা দিয়ে তৈরি গোলা বা ডোল নেই। কয়েক যুগ আগেও গ্রামবাংলার কৃষকদের বাড়িতে ধান রাখার গোলা বা ডোল দেখা যেত। তখন সমাজের নেতৃত্ব নির্ভর করতো ধানের গোলা বা ডোলের ওপর; যার বেশি ধানের গোলা ছিল, সে-ই সমৃদ্ধশালী হিসেবে গণ্য হতো। এমনকি ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিতেও এক পক্ষ আরেক পক্ষের ধানের গোলার খবর নিতো। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে বারহাট্টার গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধানের “গোলা বা ডোল”। তবে বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে স্মৃতির ফলক হিসেবে ধরে রাখতে এখনও কেউ কেউ বাড়িতে এই গোলা বা ডোল যত্ন করে রেখে দিয়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ও বয়স্কদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুই যুগ আগেও গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ বাড়িতেই বাঁশ দিয়ে তৈরি ধানের গোলা বা ডোল ছিল। তখন গৃহস্থের বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ ফাটিয়ে ও কঞ্চি দিয়ে প্রথমে গোল/চারকোনা আকৃতির কাঠামো তৈরি করা হতো। এরপর তার গায়ের ভেতরে-বাইরে মাটির আস্তরণ লাগানো হতো। এর উপরের অংশ মুখের দিকটা ফাঁকা রাখা হতো যাতে প্রয়োজনে ধান রাখা বা বের করা যায়। বড় গোলায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মণ এবং ছোট গোলায় ১০ থেকে ২০ মণ ধান রাখা যেত। গোলায় ধান রাখার পর এর মুখ মাটি দিয়ে লেপে বন্ধ করে দেওয়া হতো, যাতে ইঁদুর ঢুকতে না পারে। তখন ধান কাটার পর মাচা বা ডোলে সংরক্ষণের পর পুরোদমে চলতো মাড়াই কাজ। মাড়াইয়ের পর পুরো বছরের জন্য সংরক্ষিত রাখার যে ‘ডোল’ বা ‘মাচা’ ব্যবহার হতো, আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে। যুগের হাওয়া পাল্টেছে, পাল্টেছে সারা বছরের জন্য ধান রাখার ধরন। দু-চারজন বড় গৃহস্থ ছাড়া ছোটো-খাটো কৃষক এখন আর সেভাবে ধান মজুদ রাখতে পারেন না। ছোট গৃহস্থরা খাওয়া আর সাংসারিক খরচ মিটিয়ে যে সামান্য ধান থাকে, তা কেউ বস্তায়, কেউবা অন্য বাসনকোসনেই রেখে দেন। কয়েক দশক আগেও আমাদের এলাকায় ধানের গোলা দেখা যেত, এখন আর খুব একটা দেখা মেলে না। গোলার পরিবর্তে এখন ড্রাম বা বস্তার ব্যবহার হয়। ফলে ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা আজ বিলুপ্তির পথে।
উপজেলা সদরের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী পরিবারের গোলা বা ডোল তৈরির কারিগর কাশবন গ্রামের তরুণী ক্ষত্রিয়, অবনী সিংহ, গুহিয়ালা গ্রামের নিতাই ক্ষত্রিয়, নিরঞ্জন ক্ষত্রিয়, বাউসী এলাকার নিপেন্দ্র সিংহ, মোহানন্দ সিংহর সাথে কথা বললে তারা জানান, ধানের গোলা বা ডোল বানানো হতো মূলত বাঁশ দিয়ে। সহযোগী উপকরণ হিসেবে বেত, কাদাও প্রয়োজন হয়। উৎপাদন কমে যাওয়া এবং বাঁশের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ডোল তৈরিতেও খরচ বেড়ে গেছে। ফলে বাঁশের তৈরি গোলার ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে। গ্রামে-গঞ্জে দক্ষ কারিগরদের হাতে তৈরি বাঁশের ধানের গোলা বা ডোল একসময় গ্রামীণ জনপদে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও কালের বিবর্তনে তা বিলুপ্তির পথে। তারা বলেন, দুই যুগ আগেও আমাদের গ্রামে শতাধিক মাচা বা ডোল কারিগর ছিল। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ৪-৫ জন ডোল তৈরির কাজ করছেন। ধানের আবাদ কমে যাওয়ায় এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ডোলের সেই কদর এখন নেই। একটি ডোল তৈরি করতে একদিন লাগে। পরিশ্রমের সাথে ডোল বিক্রির সামঞ্জস্য না থাকায় অনেক ডোল কারিগর তাদের পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
ডেমুরা গ্রামের কৃষক লোকমান হোসেন, সাহতা গ্রামের জামাল মিয়া, রায়পুর গ্রামের চন্দন সরকার, রায়পুর গ্রামের নিবাস দাস বলেন, আমাদের এলাকার মাঠগুলোতে হাজার হাজার বিঘা চাষযোগ্য জমি রয়েছে। আগে এসব ফসলের মাঠে ধানের চাষ হতো, বাকি জমিতে ফলত অন্যান্য ফসল। বর্তমানে ধান চাষ কমে গেছে, যে কারণে গোলার ব্যবহারও কমে গেছে। কালের বিবর্তনে ধানের গোলা আজ বিলুপ্তপ্রায়। আশির দশকের দিকে ধানের গোলা কৃষক ও সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতো। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন আর গোলা বা ডোল ব্যবহার হয় না।
উপজেলা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক শামসুদ্দিন বাবুল বলেন, আমাদের উপজেলার বেশির ভাগ মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। একসময় এখানে সমাজের নেতৃত্ব নির্ভর করতো কার কয়টি ধানের গোলা বা মাচা আছে এই হিসাব কষে। কন্যা পাত্রস্থ করতেও বর পক্ষের বাড়ি থেকে ধানের গোলার খবর নেওয়া হতো, যা এখন রূপকথা। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে গ্রামের ঐতিহ্য হিসাবে আমাদের বাড়িতে কয়েকটি ধানের গোলা ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। তিনি আরও বলেন, এখন আর গোলা বা ডোল তেমন প্রয়োজন হয় না। বর্তমানে জমি থেকে ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবসায়ীরা ধান কিনে নিয়ে যায়। শুধু বাড়িতে খাওয়ার জন্য যে পরিমাণ চালের প্রয়োজন, সেই পরিমাণ ধানই বাড়িতে রাখা হয়। এখনকার যুগের বাচ্চারা তো গোলা বা ডোল কী জিনিস তা জানেই না।
গোলা বা ডোল নিয়ে বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (স্কুল ও কলেজ) সিনিয়র প্রভাষক ও দৈনিক খবরের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক বিজয় চন্দ্র দাস বলেন, আধুনিকতার যুগে প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক নিদর্শন হারিয়ে গেছে, তার মধ্যে ধান রাখার ‘গোলা বা ডোল’ একটি। মানুষের জীবন-মানের পরিবর্তনের ফলে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে তাদের পারিবারিক ব্যবহার্য উপকরণে। ফলে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের ধানের গোলার জায়গা দখল করে নিয়েছে পাটের বস্তা আর টিন বা প্লাস্টিকের তৈরি ড্রাম। তিনি মনে করেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাসহ বাঁশের গোলা বা ডোল দিয়ে ধান সংরক্ষণের ব্যাপারে চাষিদের উৎসাহিত করা হলে ডোলের কদর ফিরে আসবে।
এমএসএম / এমএসএম

দুই সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী ও প্রতিবাদ সমাবেশ পালিত

পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জন করে চটের ব্যাগ ব্যবহার করুন- কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সোনাগাজীতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গরু চোরসহ গ্রেফতার-০৪, চোরাই গরু উদ্ধার

সীমান্তে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

ভূরুঙ্গামারীতে বিএনপির নেতাদের নামে অপপ্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এভাবেই নষ্ট হচ্ছে পৌরসভার অর্ধ কোটি টাকার সম্পদ

টাকার বিনিময়ে সনদ বিক্রি, শিক্ষার্থী নেই তবুও চলছে এমপিওভুক্ত কলেজ

জয়পুরহাটে ব্র্যাকের উদ্যোগে ১৩৯ জন গ্রাহকের মাঝে তেলাপিয়া মাছের পোনা বিতরণ

নেছারাবাদে স্থানীয় চার যুবকের সাহসে টাওয়ার থেকে উদ্ধার মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক

তারাগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় গরুর মৃত্যু, খামারীর লিখিত অভিযোগ

টাঙ্গাইলে স্বর্ণকারের বাড়িতে ডাকাতির মূলহোতা'সহ ৭ ডাকাত গ্রেপ্তার

কুমিল্লায় ভন্ড রাজার বাগের আস্তানা বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল
