বাঘায় সরকারি প্রকল্পে কোটি টাকা হরিলুটের অভিযোগ

রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে ব্যাপক হরিলুট চলছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী, বরাদ্দকৃত অর্থ এবং প্রকল্পের তালিকাসহ অন্যান্য সব তথ্য সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ও নিজ উপজেলায় প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এসব নির্দেশনা বাঘা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা (পিআইও) মোঃ মাহবুব ইসলাম মানছেন না বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। এমনকি, এসব অনিয়ম-দুর্নীতির খবর জেনেও রহস্যজনক কারণে নীরব রয়েছেন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির কর্তারা।
বাঘা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) মো. মাহমুদুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী কাজ শুরু হওয়ার আগেই বরাদ্দের অর্ধেক টাকা প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির কাছে দিয়ে দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, বাউসা ইউনিয়নের দিঘা নূরানী মাদ্রাসার সিঁড়িঘর নির্মাণের জন্য ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যার ৫০% অর্থাৎ ২ লক্ষ টাকা প্রকল্পের সভাপতি ও ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজের কাছে পরিশোধ করা হয়। তবে, পরবর্তীতে জানা যায়, ওই মাদ্রাসায় চলমান কাজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব টাকায় হচ্ছে এবং প্রকল্পের কোনো টাকাই প্রতিষ্ঠানটি পায়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্র থেকে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে টিআর প্রকল্পে ৪ লক্ষ টাকা দিঘা নূরানী মাদ্রাসার নামে বরাদ্দ রয়েছে এবং কাজ শুরুর জন্য ২ লক্ষ টাকা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির কাছে দেওয়া হয়েছে।
তবে, উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের দিঘা বাজার মসজিদের ও স্থানীয় বাসিন্দাদের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে যে, এসব প্রকল্প 'গায়েবি নাম' ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে। তাদের দাবি, প্রকল্পের কাগজপত্রে প্রতিষ্ঠানের নাম, তালিকাসহ অন্যান্য সব প্রয়োজনীয় তথ্য লিপিবদ্ধ থাকলেও সরেজমিনে তা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। দিঘা নূরানী মাদ্রাসার কমিটি এবং স্থানীয় লোকজন কেউই প্রকল্পের কাগজপত্রে সরকারি ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দের বিষয়টি জানেন না। কারণ এই প্রতিষ্ঠানটির কমিটির পরিবর্তে এসব প্রকল্পের প্রায় শতভাগ কাজ করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ। দিঘা নূরানী মাদ্রাসার প্রকল্পের কাগজপত্রে স্ট্যাম্পে লিখিত কমিটিতে যাদের নাম রয়েছে, তারা হলেন: ১. মোঃ আঃ আজিজ, ২. মোঃ আখের আলী, ৩. মোঃ আকরাম আলী, ৪. মোঃ হাবিবুর রহমান, ৫. মোসাঃ শিরিনা খাতুন। এই ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দের অনুমোদন করেছেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল ইসলাম।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের দিঘা নূরানী মাদ্রাসার নামে সরকারি টিআর প্রকল্পে বরাদ্দ দিলেও প্রকল্পের সমন্বয়ক ও বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও দুর্নীতির ফলে সরকারের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। ফলস্বরূপ, কাগজপত্রে সব কিছু ঠিকঠাক দেখা গেলেও বাস্তবে টিআর প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দের প্রায় ৭০ ভাগ অর্থ সংশ্লিষ্টরা নয়ছয় করে আত্মসাৎ করছেন। এই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা, একাধিক ইউপি সদস্য এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কাছ থেকে পাওয়া গেছে। স্থানীয় এক প্রভাষক বলেছেন, "অতীতে এ প্রকল্পে ব্যাপক লুটপাট হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা ফুলে-ফেঁপে কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন। প্রকল্পের মেম্বার ও পিআইওদের হাতে চলে যাচ্ছে সরকারি বরাদ্দকৃত লক্ষ লক্ষ টাকা।"
সম্প্রতি কাবিখা, ভিজিএফ, বিজিএফ, টিআর প্রকল্পের সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সকল প্রকল্পের আত্মসাতের ঘটনায় দুর্নীতি দমনের জন্য অনেকে মৌখিক অভিযোগ করেছেন উপজেলার প্রশাসকের নিকট। আরও অভিযোগ উঠেছে যে, পিআইওদের সঙ্গে এসব প্রকল্পের সমন্বয় করে থাকেন স্থানীয় নেতা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এর ফলে প্রত্যেক উপজেলার সঙ্গে নির্দিষ্ট কমিশনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করা হচ্ছে। এতে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হলেও লাভবান হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এ কারণেই প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠলেও আজ পর্যন্ত কোনো অনিয়মের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি বা কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
তবে, প্রকল্পের সমন্বয়ক আব্দুল আজিজ, বাউসা ইউপি সদস্য, বলেছেন, "দিঘা নূরানী মাদ্রাসার সিঁড়িঘর নির্মাণের জন্য টিআর প্রকল্পের আমি সভাপতির দায়িত্বে রয়েছি। ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ, ইতিমধ্যে ২ লক্ষ টাকা প্রকল্প কর্মকর্তা দিয়েছেন।" তার উত্তরে তিনি আরও বলেছেন, "মাদ্রাসায় কাজ চলমান মাদ্রাসার টাকায়। প্রকল্পের টাকা সময় হলে দিবেন।" দিঘা নূরানী মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি মোঃ জামাল উদ্দিন ও অন্যান্য সদস্যরা বলেছেন, "সরকারি কোনো প্রকল্পের টাকা আমরা পাইনি। প্রতিষ্ঠানের টাকায় কাজ চলছে। তবে ইউএনও স্যার মাদ্রাসায় আসার পরে আমরা জানতে পারি সরকারি ৪ লক্ষ টাকার মধ্যে ২ লক্ষ টাকা কে বা কারা তুলে নিয়েছে।"
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার বলেছেন, "প্রকল্পের এ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা তথ্যটি জানতে পেরে মাদ্রাসাটির সভাপতি ও মসজিদের ইমাম এবং প্রকল্পের সভাপতিকে আমার অফিসে ডেকে নিয়ে কথা বলেছি। প্রকল্পের বরাদ্দের ২ লক্ষ টাকা ২ দিনের মধ্যে মাদ্রাসার কমিটির ব্যাংক একাউন্টে জমা প্রদান করে জমা রশিদটি আমাকে দেখানোর জন্য বলেছি।" তিনি আরও বলেছেন, "প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করে উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি। এতে অবগত থাকা ছাড়া আমার সংশ্লিষ্টতা খুব একটা নেই। কোথাও অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখা হয়। তবে এ ধরনের ঘটনায় অভিযোগে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।"
এমএসএম / এমএসএম

মিরসরাইয়ে মহাসড়ক সংলগ্ন অবৈধ বাউন্ডারি ওয়াল গুঁড়িয়ে দিল উপজেলা প্রশাসন

চিলমারীতে যৌথ অভিযানে, অনলাইন জুয়ার সরঞ্জামসহ দুই যুবক আটক

পারিবারিক দ্বন্দ্বে আহত হয়েও ‘জুলাই যোদ্ধা’ গেজেটে নাম পেলেন বাঘার জাহিদ

মহেশখালীতে শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর অনুষ্ঠিত

তাড়াশে আগুনে বসত ঘর পুড়ে ছাই, ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

সুবর্ণচরে বিশিষ্ট সমাজসেবক আকবর হোসেনকে সংবর্ধনা

কোটালীপাড়ায় পুকুরে ডুবে প্রতিবন্ধী যুবকের মৃত্যু

ধামরাইয়ে পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

মির্জাগঞ্জে মাসিক আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

বগুড়ার শেরপুরে গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা, হাসপাতালে ভর্তি

বোয়ালমারীতে প্রাণি সম্পদ দপ্তরের উদ্যোগে হাঁস বিতরণ কর্মসূচি পালন
