প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সাহসী পাখি ফিঙে

পল্লী গ্রামের অতি পরিচিত পাখি ফিঙে। একসময়ে সবুজে ঢাকা মাঠ, সোনালি ধান ক্ষেত কিংবা গ্রামের ছায়াঘেরা ঝোপঝাড়ে ছিল এদের অবাধ বিচরণ। বর্তমানে নানা প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় বারহাট্টাসহ গ্রাম বাংলার প্রকৃতি থেকে ক্রমেই আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে কৃষকের পরম বন্ধু খ্যাত উপকারী এই পাখিটি।
একসময়ে গ্রাম বাংলার রাখালরা যখন উন্মুক্ত ফসলের মাঠে গরু, মহিষ কিংবা ছাগল ছেড়ে দিয়ে আনমনা হয়ে বসে থাকতো। অখন গবাদি পশুগুলোর পিঠে ফিঙে পাখিরা বসে উড়ে উড়ে ফড়িং, মৌমাছি, পিঁপড়া, ওলু পোকা, পতঙ্গ, মাজরা পোকা, মাকড়সা এবং পঙ্গপালের মতো ফড়িংসহ পোকামাকড়কে খেতে দেখা যেতো। আবার কৃষক যখন লাঙ্গলের হাল ধরে, এর পেছনে পেছনে ফিঙে পাখি জড়ো হয়ে উন্মুক্ত শুঁয়োপোকাগুলো তুলে তুলে খাওয়ার দৃশ্যও অন্যরকম লাগতো। বাংলা কবিতায় ছন্দের যাদুকর কবি সত্যেন্দ্র নাথ দত্ত "কোন দেশেতে" কবিতায় বাংলার রূপ নিয়ে লিখতে গিয়ে ফিঙ্গের নাচকে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলে লিখেছেন- "কোথায় ডাকে দোয়েল-শ্যামা; ফিঙে নাচে গাছে গাছে?; কোথায় জলে মরাল চলে, মরালী তার পাছে পাছে?" গায়ে নেই কোন রঙের বাহার, নেই ময়ূরের মতো পেখম কিংবা কোকিলের মতো মধুর কণ্ঠস্বর। কিন্তু একটি মাত্র তীক্ষ্ণ ডাকে সে থমকে দিতে পারে হিংস্র শিকারি পাখিকেও। সেই সাহসী পাখিটিই অতি পরিচিত পাখি ফিঙে। অথচ বিভিন্ন কারণে প্রায় বিলুপ্তির পথে ক্ষুদ্র দেহী সাহসী পাখি ফিঙে।
সরেজমিনে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা সকালের সময়কে জানান, উজ্জ্বল কুচকুচে কালো রং ও মিষ্টি সুরে ডাকা পাখি ফিঙে। এ পাখিটি আমাদের অঞ্চলে ‘হ্যাচ্ছা’ পাখি নামে পরিচিত। আগে গ্রামাঞ্চল ছাড়াও শহরাঞ্চলের বৈদ্যুতিক কিংবা টেলিফোনের তার, বাড়ির ছাঁদ ও বাড়ির আশপাশে দেখা যেতো পাখিটি। এরা বসতবাড়ির আশেপাশে খড়ের গাদা, বিদ্যুতের খুঁটি, টেলিফোন পোল, দালানের ফাঁক-ফোকর, গাছের কোঠর, ভেন্টিলেটর ইত্যাদির ভেতর বাসা বাসা বাঁধে। গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে এখন আর আগের মতো ফিঙের দুরন্ত গতিতে চলা ও ডাক তেমন শোনা যায় না।
কথা হয় বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (স্কুল ও কলেজ) বাংলা বিষয়ের সিনিয়র প্রভাষক বিজয় চন্দ্র দাসের সাথে তিনি বলেন, একসময়ে ভোরে গানের সুরে মানুষের ঘুম ভাঙ্গানো কিংবা কাক পাখি তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ানোর দৃশ্য গ্রামের মানুষের কাছে অতি পরিচিত। বনে-বাদাড়ে হিংস্র কোন প্রাণির উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যরকম সুর করে আশেপাশের পাখ পাখালিদের সতর্ক করার কাজটি করে এ পাখিটি। এছাড়াও সবচেয়ে যে মূল্যবান কাজটি করে তা হচ্ছে আমাদের ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় নিধন। যার ফলে তাকে ফসলের অতন্ত্র প্রহরি বলা হয়ে থাকে। ক্ষুদ্রদেহী হলেও এ পাখির সাহস, বুদ্ধিমত্তা আর বেপরোয়া গতির ছন্দের রাজা কিংবা পাখির রাজা বলেও তার পরিচিতি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আধুনিক যুগে এসে নগরায়ন, আকাশচুম্বী মোবাইল টাওয়ার, বৃক্ষনিধন, কৃষিক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার এবং বসতির বিস্তারের কারণে ফিঙেসহ অনেক দেশি পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাদের ডাক, তাদের ডানা মেলা, এমনকি তাদের সাহসিকতার গল্পও যেন আজ কেবলই বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় ফিঙেকে রক্ষা করা মানেই প্রকৃতিকে রক্ষা করা। ফিঙে শুধু একটি পাখি নয়! সে সাহসের প্রতীক, সংকটে আত্মরক্ষার কৌশলের প্রতিচ্ছবি। ফিঙে পাখি প্রকৃতির এক ক্ষুদ্র বলিষ্ঠ যোদ্ধা। মফস্বলের স্কুল মাঠে, গ্রামের পেছনের খোলা মাঠে কিংবা নদীর পাড়ে কেউ কেউ আজও ফিঙের সেই তীক্ষ্ণ ‘চ্যাঁচ’ ডাক শুনে চমকে ওঠে। মনে হয়, সেই ছোট পাখিটি যেন আমাদের মনের হারিয়ে যাওয়া সাহসকে আবার জাগিয়ে দিচ্ছে। তাই উপকারী এই পাখিটিকে বিলুপ্তির পথ থেকে রক্ষা করতে সন্মানিতভাবে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
বারহাট্টা সরকারি কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র প্রভাষক মজিবুল হকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ফিঙে পাখি ড্রোনগো (Drongo) পরিবারের একটি গায়ক পাখি। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা। এর বৈজ্ঞানিক নাম: 'Dicrurus macrocercus' ইংরেজি নাম ব্ল্যাক ড্রোনগো (Black Drongo)। শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে এ পাখির দেখা মেলে বেশি।পৃথিবীতে প্রায় ২৪ প্রজাতির ফিঙে রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে ৬ প্রজাতির ফিঙে পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই এ পাখির প্রাধান্য রয়েছে।
তিনি বলেন, এদের প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত। এরা তিন থেকে চারটি ডিম দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। ফিঙে লম্বায় লেজসহ প্রায় ২৮ থেকে ৩১ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। পুরুষ ও স্ত্রী ফিঙে সহজে আলাদা করা যায় না। ফিঙের খাবার তালিকায় রয়েছে- ঘাসফড়িং, হলুদ মাজরা পোকা, বাদামি ঘাসফড়িং, পামরি পোকা।
বারহাট্টা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কালের কন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ফিঙেসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। নির্বিচারে পাখি শিকার, বন-জঙ্গল উজাড় করে গাছ কাটার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এতে পাখির বিচরণ কমে যাচ্ছে। তা ছাড়াও ফসলে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলেও পাখির বিচরণক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। ফলে প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে অনেক প্রজাতির পাখি। এখনই পরিবেশ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ না নিলে পাখি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই ফিঙেসহ অন্যান্য জাতের পাখি সংরক্ষণের জন্য সামাজিক বনায়ন সৃষ্টি করার সঙ্গে সঙ্গে পাখি শিকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।
এমএসএম / এমএসএম

লোহাগড়ায় সরকারি রাস্তা দখল, ঘরবন্দি শিরিনা খাতুন

সান্তাহারে ইয়াবা ট্যাবলেট ও প্রাইভেট কারসহ দুইজন গ্রেপ্তার

নেত্রকোনা জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে গরুর গাড়ি মার্কা প্রার্থীর সমর্থনে সভা

কাউনিয়ায় এইচএসসি ব্যবহারিক পরীক্ষায় টাকা নেওয়ার অভিযোগে

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে গাজীপুরে গাছের চারা বিতরণ

দুই সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী ও প্রতিবাদ সমাবেশ পালিত

পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জন করে চটের ব্যাগ ব্যবহার করুন- কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সোনাগাজীতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গরু চোরসহ গ্রেফতার-০৪, চোরাই গরু উদ্ধার

সীমান্তে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

ভূরুঙ্গামারীতে বিএনপির নেতাদের নামে অপপ্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এভাবেই নষ্ট হচ্ছে পৌরসভার অর্ধ কোটি টাকার সম্পদ

টাকার বিনিময়ে সনদ বিক্রি, শিক্ষার্থী নেই তবুও চলছে এমপিওভুক্ত কলেজ
