রেলের যন্ত্রাংশ সংকটে চট্টগ্রামে রাস্তায় বিকল ১৮ ইঞ্জিন

রেলের যন্ত্রাংশ সংকট চরম আকারে পৌছেছে। জোড়াতালি দিয়ে কোনরকমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে রাস্তায় চলতি পথে বারবার বিকল হয়ে যাচ্ছে ইঞ্জিন। শুধু জুন মাসে চট্টগ্রামেই ১৮ ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটেছে। যাত্রী ভোগান্তি বাড়ছে চরমভাবে। অতিজরুরীভাবে যন্ত্রাংশ সরবরাহ না পেলে এই দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে লোকসানে থাকা সরকারি এই সেবা সংস্থাটি আরো নাজুক হয়ে পড়বে। যাত্রী বা মালামাল পরিবহনে আস্থা হারানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যন্ত্রাংশ ও ইঞ্জিন সংকটকে দায়ী করছেন সিএমই/ইস্ট। ইজিপি টেন্ডার ও বিদেশী যন্ত্রাংশ সররবরাহে এলসি জটিলতাকে বড় অন্তরায় হিসেবে দেখছেন সিসিএস।
জানা যায়, যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারনে চলতি বছরের জুন মাসে শুধু চট্টগ্রাম বিভাগে চলন্ত অবস্থায় রাস্তায় রেলের ১৮ টি ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের। অনাকাঙ্খিত বিলম্বের ফলে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারেনি। ফলে আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন অনেকে।
জানা যায়, গত ১ জুন ফাজিলপুর স্টেশনে ওয়াটার ডেলিভারি পাইপ লিকেজের কারনে ২৯২৪ নং ইঞ্জিন বিকল হয়, দেড় ঘন্টা লেইটে স্টেশন ছেড়ে যায়, একইদিনে বড়তাকিয়া স্টেশনে ৩০০৮ লোকো ইউনিট এলার্ম বাজিয়ে মুভ করা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১ ঘন্টা ১৭ মিনিট রেস্ট নিয়ে ঠান্ডা হলে মুভ করে। ২ জুন লাকসাম নাঙ্গলকোট সেকশন ওয়াটার ডেলিভারি পাইপ লিকেজের কারনে বিকল হয় ৩০২৪, মেরামত করে প্রায় ৫ ঘন্টা বিলম্বে ছাড়ে। ৬ জুন লাকসাম-লালমাই সেকশনে একই কারনে বিকল হয় লোকো ২৯১৩, মেরামত করে ২ ঘন্টা ১৩ মিনিট পরে ছাড়ে। একইদিনে আখাউড়া স্টেশনে লোড মিটার কাটার কারনে বিকল হয় লোকো ২৯৩১। লাকসাম স্টেশনে এল-৩ উইকফেল্ট জ্বলার কারনে বিকল হয় লোকো ২৯১৪। ৭ জুন আখাউড়া গঙ্গাসাগর সেকশনে আবারো বন্ধ হয়ে যায় ২৯৩১, চিনকি আস্তানা- বড়তাকিয়া সেকশনে বিকল হয় লোকো ২৭১৪। ১১ জুন ফাজিলপুর স্টেশনে মেইন জেনারেটরের ব্লোয়ার মিটার জ্বলার কারনে বিকল হয় লোকো ৩০২৭। ব্লোয়ার মিটার সরবরাহ না থাকায় ৩০২১ থেকে পরিবর্তণ করে লাগানো হলে সচল হয়। একইদিনে লাকসাম স্টেশনে ড্রাইভ শাফট কাপ্লিং ভাঙার কারনে অচল হয় ২৭০৪, পরে এটি ২৭১৯ থেকে পরিবর্তন করে লাগানো হয়। ১৩ জুন চিনকি আস্তানা বড়তাকিয়া সেকশনে ইঞ্জিন ওভার হিটের কারনে অচল হয় লোকো ৩০০১, ২ ঘন্টা রেস্ট নিয়ে পূণরায় যাত্রা করে। ১৫ জুন মেইন জেনারেটরের ব্লোয়ার মোটর জ্বলার কারনে ইসলামাবাদ স্টেশনে অচল হয় লোকো ৩০২০। যন্ত্রাংশটি সরবরাহ না থাকায় লোকোটি পাহাড়তলী লোকোসেডে আছে। ১৭ জুন আর৪ উইকফেল্ট জ্বলার কারনে লাকসাম স্টেশনে আচল হয় ২৯১৫। ১৮ জুন ওভারহিটের কারনে হাসানপুর নাঙ্গলকোট সেকশনে অচল হয় লোকো ৩০২৬, ১৯ জুন ভাটিয়ারি কুমিরা সেকশনে একই কারনে অচল হয় লোকো ৩০০৬, ২ ঘন্টা রেস্টের পর আবার চালু হয়। ১৯ জুন মেইন জেনারেটর ব্লোয়ার মিটার (সরবরাহ নাই) নষ্ট হওয়ার ফলে মন্দবাগ স্টেশনে অচল হয় লোকো ৩০২২। ২৫ জুন কুমিরা -সিতাকুন্ড সেকশনে ওভারহিটের কারনে অচল হয় লেকোে ২৯৩১ এবং ২৭ জুন এল ১ উইকফেল্ট নষ্ট হওয়ার ফলে লাকসাম স্টেশনে অচল হয় লোকো ২৬১৩। চট্টগ্রাম বিভাগের মতো সারাদেশেই ট্রেনের ইঞ্জি বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটছে অতিমাত্রায়।
রেলের ইঞ্জিন বিকল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই) কাজী মো. সেলিম বলেন, ”খুচরা যন্ত্রাংশ চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ দিতে পারছে না সরঞ্জাম শাখা, ফলে জোড়াতালি দিয়ে কোনরকমে মেরামত করতে হচ্ছে, যা অল্প সময়ের মধ্যে আবার অচল হয়ে যাচ্ছে। আবার চাহিদার চেয়ে ইঞ্জিনের সংখ্যাও কম। পূর্বাঞ্চলে প্রতিদিন ইঞ্জিনের চাহিদা রয়েছে ১১৬ টি। অথচ ১৩৫টি ইঞ্জিন থাকলেও জোড়াতালি দিয়ে গড়ে ৭৫ থেকে ৮০টি সার্ভিসের জন্য প্রস্তুত করা যাচ্ছে। বিরতিহীন চালাতে হচ্ছে একাধিক ইঞ্জিন, যার ফলে রাস্তায় বিকলের সংখ্যা বাড়ছে।”
রেল সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের সরকার বিরোধী আন্দোলন থেকে অর্থ সংকটে নিয়মিত চাহিদা অনুযায়ী যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। সরকার পতনের পর সিদ্ধান্তহীনতায় কাটে আরো কয়েক মাস। সংকটের বিষয়টি দৈনিক সকালের সময়ে একাধিকবার ছাপা হলে চলতি বছরে অর্থ ছাড় দেয় মন্ত্রণালয়। তবে যে অর্থ ছেড়েছে তা দিয়ে বকেয়া পরিশোধ, জ্বালানী কেনা ও এলসি বাবদেই চলে যায় বেশিরভাগ অর্থ। ফলে তেমন যন্ত্রাংশ কিনতে পারেনি সরঞ্জাম দপ্তর।
এব্যপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) মো. বেলাল সরকার বলেন, ”যন্ত্রাংশের প্রচুর চাহিদাপত্র জমা পড়েছে। কেনাকাটার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নেই। গত অর্থবছরে বরাদ্দ কম পেয়েছি, এবারও ৪০০ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে ২১০ কোটি বরাদ্দ দিয়েছে, এটা যথেষ্ঠ নয়। বকেয়া আছে ১৬০ কোটি টাকা। তবু বিদেশি মালের জন্য এলসি করা হয়েছে, অক্টোবরের মধ্যে কিছু যন্ত্রাংশ এসে পৌছাবে বলে আশা করছি।” লোকাল যন্ত্রাংশ কেনায় ইজিপি টেন্ডারকে বড় অন্তরায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ”শতভাগ ইজিপি করার নির্দেশ দিয়েছে হাই অথরিটি। এই প্রক্রিয়ায় অনেকেই না বুঝে অংশ নেয় এবং রেট কম দেয় কিন্তু সরবরাহের সময় নিম্নমানের যন্ত্রাংশ দেয়ার চেষ্টা করে। ফলে আবার রিটেন্ডার করতে হয় এভাবে টাইমকিল করার কারনে কেনাকাটায় বিলম্ব হয়ে থাকে। অতি জরুরী মালামালের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি শিথিল করা দরকার বলেও মনে করছেন তিনি।”
এব্যপারে জানতে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) আফজাল মিয়া ও এডিজি (আরএস) আহমেদ মাহবুব চৌধুরীর মোবাইলে কল দিলেও রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এব্যপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক, লোকো ইন্সপেক্টর এডভোকেট এমআর মঞ্জু বলেন, ”পতিত ফ্যাসিষ্ট সরকারের কতিপয় দোসর এখনো রেলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িতে আছেন। তারা না বুঝে হোক বা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হোক রেলকে অকেজো প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে চাইছে। রেলের স্বার্থে এসব চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। গড়ে প্রতিদিন ৫৫ থেকে ৬০ টি ইঞ্জিন অচল থাকে। এগুলো ভালো করে মেরামতের ব্যবস্থা করা জরুরী। রিপিয়ার করার জন্য প্রাইভেট কোম্পানীকে দিলে অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে এবং রেলও সচল হবে বলে তিনি মনে করছেন।”
এমএসএম / এমএসএম

পাঁচবিবিতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের সমাপনী

রোহিঙ্গা ইস্যুতে কক্সবাজারে ৩ দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

মির্জাগঞ্জে গাঁজাসহ মাদক কারবারি আটক

বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা মুন্সি আকতার হোসেনের সংবাদ সম্মেলন

পাকশীতে রেলওয়ে প্রকৌশলী বিভাগের কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের বারো দফা দাবি না মানলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা

অনির্বাণের আয়োজনে লেখক ও কবিদের চলনবিল ভ্রমণ ও সাহিত্য আড্ডা

জয়পুরহাটে বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের পুরস্কার বিতরণী

ভূঞাপুরে আসামি ধরতে গিয়ে পুলিশের ৪ সদস্য আহত

পাঁচবিবিতে উপজেলা স্কাউটের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীর উদ্বোধন

তাড়াশের ২ জন পাচারকারী র্যাব-১২’র অভিযানে মূল্যবান কষ্টি পাথরের তৈরি মূতিসহ গ্রেফতার

বাউফলে দুই বাড়িতে ডাকাতি; গণপিটুনিতে নিহত ১

কুড়িগ্রাম -১আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ডা:মো: ইউনুস আলী
