ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

বর্ষার শ্রাবণ যেন প্রকৃতির যৌবনবতী রূপ


বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি photo বারহাট্টা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৮-৭-২০২৫ দুপুর ৩:৩৬

ঋতুবৈচিত্র্যের ষড়ঋতুর বাংলাদেশে আষাঢ়-শ্রাবণ নিয়েই বাংলার প্রকৃতি জুড়ে আসে বর্ষাকাল। সব ঋতুর মতো বর্ষারও নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। বর্ষার রূপ-রস আর সৌন্দর্যে চারপাশের প্রকৃতি সজীব হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মের দাবদাহের তীব্রতা কাটিয়ে প্রকৃতিতে শীতলতার বার্তা নিয়ে আসে আষাঢ় আর এরপর প্রকৃতি জুড়ে বর্ষার ভরা যৌবন নিয়ে ঘটে শ্রাবণের আগমন। বর্ষার প্রকৃত রুপ ফুটে ওঠে শ্রাবণে। শ্রাবণ মানেই সারাদিন কালো মেঘে ঢাকা আকাশ। সকাল থেকে রাত অবধি রিমঝিম বৃষ্টি। চারদিক পানিতে থই থই। প্রকৃতি পায় নতুন রূপ।

ঋতুবৈচিত্র্যের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে আবহমান বাংলার প্রকৃতিতে আবির্ভুত হয় বর্ষাকাল। শ্রাবণ বর্ষার দ্বিতীয় এবং বৈচিত্রময় মাস। শ্রাবণের প্রকৃতি নিয়ে বাংলা সাহিত্যে যত প্রেম, ভালবাসা, গল্প, কবিতা, গান রচিত হয়েছে তা অন্য কোন মাসের প্রকৃতির বর্ণনায় তা স্থান পায়নি। 'শাওন রাত' 'শাওন ও বৃষ্টি', 'শ্রাবণ মেঘের দিন' সাহিত্যে এসেছে নানা প্রেক্ষিতে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, নোবেলজয়ী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ আরো অনেক কবি-সাহিত্যিকের সাহিত্যকর্মে শ্রাবণ-প্রকৃতি অংকিত হয়েছে ভাষার সুনিপুণ বুননীতে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামসহ অনেক কবি ও গীতিকার শ্রাবণ নিয়ে অসংখ্য গান লিখেছেন। শ্রাবণের রূপ-প্রকৃতির শোভায় মুগ্ধ হয়ে কবিগুরুর রবীন্দ্রনাথের লিখা- "ওগো আমার শ্রাবণ মেঘের খেয়াতরীর মাঝি, অশ্রুভরা পূরব হাওয়ায় পাল তুলে দাও আজি; উদাস হৃদয় তাকায়ে রয়, বোঝা তাহার নয় ভারী নয়; পুলক-লাগা এই কদম্বের একটি কেবল সাজি।" এই গানের সুরে তুলে ধরেছেন শ্রাবণের টান। কবি নজরুল শ্রাবণকে তুলে ধরে লিখেছেন- "এ ঘোর শ্রাবণ-নিশি কাটে কেমনে; হায়, রহি রহি সেই পড়িছে মনে; বিজলিতে সেই আঁখি চমকিছে থাকি থাকি, শিহরিত এমনই সে বাহু-বাঁধনে।" অন্যান্য কবি-লেখকদের কলমেও শ্রাবণ এসেছে বহুবার, বহুভাবে। কবি জীবনানন্দ দাস তার 'শ্রাবণরাত' কবিতায় লিখেছেন- "শ্রাবণের গভীর অন্ধকার রাতে; ধীরে ধীরে ঘুম ভেঙে যায়, কোথায় দূরে বঙ্গোপসাগরের শব্দ শুনে?" বৃষ্টির হাত ধরে আষাঢ়ে বর্ষা আসে বাংলার প্রকৃতি জুড়ে। আষাঢ়ে বর্ষার যে রূপ প্রস্ফুটিত হতে আরম্ভ করে, শ্রাবণে সেটি পূর্ণতা পায়। আর তাই শ্রাবণকে বলা হয় বর্ষার রানি।

শ্রাবণের অনুভূতি জানতে কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ও সংগীত শিল্পী কান্তি রঞ্জন রায়ের সাথে তিনি সকালের সময়কে জানান, প্রকৃতির নিয়মে আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস মিলে বাংলার প্রকৃতি জুড়ে চলে বর্ষাকাল। তবে আষাঢ় থেকে শুরু হয়ে বর্ষার বৃষ্টি চলে ভাদ্র পর্যন্ত। তবে প্রকৃত বর্ষার স্বাদ পাওয়া যায় শ্রাবণে। আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাসই বর্ষা ঋতু হলেও এই দুই মাসের প্রকৃতিতে বর্ষার পার্থক্য রয়েছে। প্রকৃতি নিজেই সে পার্থক্য করে দিয়েছে। আষাঢ়ের বর্ষা হলো বর্ষার শুরু এবং তখন সবে মাত্র শুকনো নদী-নালা, খাল-বিল নতুন বৃষ্টির পানিতে ভরতে শুরু করে। নদীতে তখনো বান ডাকে না। একুল-ওকুল দু’কুল ছাাপিয়ে পরতে শ্রাবণ এসে যায়। প্রকৃতির রূপে শ্রাবণ হলো পূর্ণ বর্ষা। গ্রামীণ জীবনের বৃষ্টিময় শ্রাবণের সন্ধ্যাটা যেন এক আনন্দময় মূহুর্ত। কিন্তু শ্রাবণের সেই চিরচেনা বৈশিষ্ট্য যেন এখন আর নেই। আকাশ জুড়ে কালো মেঘ নেই, বৃষ্টি নেই, প্রকৃতিতে চলছে শুধু দাবদাহ। তবুও আবহমান বাংলার প্রকৃতি জুড়ে যৌবনবতী বর্ষা মানে শ্রাবণ।

তিনি বলেন, হাজার বছরের বাঙালির সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে বর্ষা। আর বর্ষার প্রকৃত রূপ মানেই প্রকৃতিতে শ্রাবণের আমন্ত্রণ। তাই কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রাবণকে আমন্ত্রণ জানিয়ে লিখেছেন- "আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে দুয়ার কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে; ঘরের বাঁধন যায় বুঝি আজ টুটে।" এছাও নজরুল লিখেছেন- "শাওন–রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে; বাহিরে ঝড় বহে, নয়নে বারি ঝরে; ভুলিও স্মৃতি মম, নিশীথ–স্বপন সম; আঁচলের গাঁথা মালা ফেলিও পথ পরে।" এমন অনেক গান আছে যা আমরা এখনও মনের মাধুরি মিশিয়ে গাই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলালসহ বিভিন্ন কবির কবিতায় ও গানে বর্ষা রাণী শ্রাবণ বিশেষ স্থান পেয়েছে। ষড়ঋতুর মাঝে বর্ষা বিশেষ করে শ্রাবণ নিয়ে এত গান, কবিতা কিংবা সাহিত্য রচনা অন্য কোন ঋতু নিয়ে লেখা হয়নি।

কথা হয় সরকারি চাকুরিজীবী ও সাহিত্যমনা মানুষ কবি এনামুল হক পলাশের সাথে তিনি বলেন, বাংলার প্রকৃতিতে শ্রাবণ মানে কোনো ভরা যৌবনবতী কন্যা। গুম ধরা মেঘে একটানা বৃষ্টি। কখনো বা বাজের শব্দ, কখনো আবার উঠানে টলমলে জলের স্রোত। বৃষ্টি মানে একটা ছন্দ, বৃষ্টি মানে কবিতার লাইন মনে মনে আবৃত্তি করা অথবা কোন ভালো লাগা গানের লাইন। কাগজে কলমে বাংলার প্রকৃতিতে ছয়টি ঋতু থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে শীত, বসন্ত আর বর্ষার বাইরে অন্য সব ঋতুর উপস্থিতি যেন অনেকটা ম্রিয়মান হয়ে গেছে। লেখক, কবি, সাহিত্যিক, গায়ক থেকে শুরু করে বর্ষা রাণী শ্রাবণ আর বৃষ্টি ভেজা সকাল সকলের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়। বসন্ত ঋতুর রাজা হলেও বর্ষার ভালোবাসার সাথে তুলনা হয় না। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে প্রায় সব কবিই বর্ষা নিয়ে কবিতা লিখেছেন। শিশু সাহিত্যেক কবি সুকুমার রায় তার 'শ্রাবণে' কবিতায় প্রকৃতির সৌন্দর্য নিয়ে লিখেছেন- "জল ঝরে জল ঝরে সারাদিন সারারাত- অফুরান নামতায় বাদলের ধারাপাত;আকাশের মুখ ঢাকা, ধোঁয়ামাখা চারিধার, পৃথিবীর ছাত পিটে ঝমাঝম বারিধার।" আবার রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের 'একদিন জলসিড়িঁ নদীটির পারে' কবিতায় শ্রাবণের বিশেষ রূপ তুলে ধরে লিখেছেন- "বাংলার শ্রাবণের বিস্মিত আকাশ, চেয়ে রবে; ভিজে পেঁচা শান্ত স্নিগ্ধ চোখ মেলে কদমের বনে; শোনাবে লক্ষ্মীর গল্প-ভাসানের গান নদী শোনাবে নির্জনে।" বর্ষা রাণী শ্রাবণ কবির কলমে কবিতা হয়, লেখকের গল্প হয় আবার গায়কের কণ্ঠে গানও হয়। শ্রাবণ মানে এক বিশেষ অনুভূতি।

বারহাট্টা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, আমি পল্লীগাঁয়ের ছেলে। গ্রামেই কেটেছে আমার শৈশব। তাই বর্ষার প্রকৃতির রূপ এখনো রয়েছে আমার স্মৃতিপটে। শ্রাবণের কালো মেঘে ঢাকা আকাশ, টিনের চালে বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দ, গ্রামের কাদাময় পথঘাট, খাল-বিল পানিতে থৈ থৈ, ব্যাঙের ঘ্যাঙর..! ঘ্যাঙর..! ডাক কিংবা পড়ন্ত বিকেলে বৃষ্টিতে ভেজা কলমি লতার দোল, ফসলের ক্ষেতে অথবা মাঠে ফুটবল খেলায় মেতে ওঠা, পুকুরে ঝাপাঝাপি ও সাঁতার কেটে বৃষ্টি উপভোগ, কলার ভেলায় চড়ে আনন্দে মেতে ওঠা সব মিলে আরও একবার মনে করিয়ে দেয় ফেলে আসা দূরন্ত শৈশবের স্মৃতি।

বর্তমান জলবায়ুর বৈরী আচরণে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এবার ভরা শ্রাবণেও বৃষ্টি নেই, মেঘ নেই, প্রকৃতিতে চলছে টানা দাবদাহ। মধ্য শ্রাবণে এসেও দাবদাহে প্রাণীকুল ও প্রকৃতি যেন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। শুধু শ্রাবণ নয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুরো ষড়ঋতুতেই প্রকৃতি যেন খেয়ালি আচরণ করছে। এমন চলতে থাকলে ষড়ঋতুর বাংলাদেশে ঋতু বৈচিত্রের কথা ভুলে যাবে বাঙালি।

এমএসএম / এমএসএম

লোহাগড়ায় সরকারি রাস্তা দখল, ঘরবন্দি শিরিনা খাতুন

সান্তাহারে ইয়াবা ট্যাবলেট ও প্রাইভেট কারসহ দুইজন গ্রেপ্তার

নেত্রকোনা জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে গরুর গাড়ি মার্কা প্রার্থীর সমর্থনে সভা

কাউনিয়ায় এইচএসসি ব্যবহারিক পরীক্ষায় টাকা নেওয়ার অভিযোগে

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে গাজীপুরে গাছের চারা বিতরণ

দুই সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী ও প্রতিবাদ সমাবেশ পালিত

পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জন করে চটের ব্যাগ ব্যবহার করুন- কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সোনাগাজীতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গরু চোরসহ গ্রেফতার-০৪, চোরাই গরু উদ্ধার

সীমান্তে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

ভূরুঙ্গামারীতে বিএনপির নেতাদের নামে অপপ্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এভাবেই নষ্ট হচ্ছে পৌরসভার অর্ধ কোটি টাকার সম্পদ

টাকার বিনিময়ে সনদ বিক্রি, শিক্ষার্থী নেই তবুও চলছে এমপিওভুক্ত কলেজ

জয়পুরহাটে ব্র্যাকের উদ্যোগে ১৩৯ জন গ্রাহকের মাঝে তেলাপিয়া মাছের পোনা বিতরণ