রাঙ্গুনিয়ায় ‘ম্য্যানেজে’ বন নিধন

প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনায়নে সরকারের নির্দেশনা থেকে শুরু করে নানামুখী উদ্যোগ থাকলেও অবাধে বন নিধনের মহোৎসব চলছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের ডিঙ্গললোঙ্গা মৌজার রওশন পল্লীতে। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তাদের ম্য্যানেজ করার ফলে তদের নাকের ডগায় জোত পারমিট ছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই বন নিধন কার্যক্রম চললেও তাদের যেন কোনো করণীয় নেই ভাবেই চলছে দায়িত্ব পালন। দিনে-রাতে নির্বিচারে বন নিধনের এসব কাঠের কিছু কিছু পাচার হয় উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায়।
বনজদ্রব্য পরিবহন (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০১১-এ বলা হয়েছে, বেসরকারি মালিকানাধীন ভূমি থেকে বনজদ্রব্য আহরণের ক্ষেত্রে ফ্রি লাইসেন্স ব্যতীত চট্টগ্রামসহ মোট ১৩টি জেলা ও ১৮টি উপজেলার বেসরকারি ব্যক্তি বা মালিকানাধীন ভূমি হইতে কোনো বনজদ্রব্য আহরণ করা যাবেনা। এক্ষেত্রে ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমি থেকে গাছ কাটতে হলেও বনবিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে ফ্রি লাইসেন্স বা জোত পারমিট বাধ্যতামূলক। অথচ ফ্রি লাইসেন্স বা জোত পারমিট ছাড়া গাছ কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলেও অবৈধভাবে গাছ কাটার এ মহাযজ্ঞের পুরো প্রক্রিয়াটিই উপজেলার পোমরা বনবিটের দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিট কর্মকর্তারই যোগসাজশে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।
জানা যায়, এরশাদ সরকারের আমলে রাঙ্গুনিয়ার ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনে ১৯৮৭ সালে বেতাগী ইউনিয়নে গড়ে উঠে এই 'রওশন পল্লী'। এতে বনায়ন ও থাকার জন্য ৮১ পরিবারের মধ্যে প্রতি পরিবারকে ৪ একর করে অকৃষি ভূমির বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো এই রওশন পল্লীতে। এছাড়াও সে সময় "ভূমিহীন বহুমুখী বনায়ন" নামে একটি প্রকল্পও চালু করা হয়েছিলো বলে জানা যায়।
গত ৭ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের রওশন পল্লী এলাকায় নুরুল ইসলাম ও তারই স্ত্রী আমেনা খাতুনের অকৃষি ভূমিতে সেগুন, গর্জন, মেহগনি, শিয়রি ও তেলসুর'সহ মোট ৫ প্রজাতির মূল্যবান গাছের মোথ (গোড়া) রয়েছে। সেগুনসহ কিছুকিছু গাছ অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হলেও গর্জন, মেহগনি ও শিয়রিসহ এখনও প্রায় ৮ শত ঘনফুট গাছ ভূমিতে পড়ে আছে।
এ সময় আমেনা খাতুন (৬৫) বলেন, গত ৩ মাস আগে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে ২শ গাছ বিক্রি করি শান্তির হাটের আনোয়ারের কাছে। জোত পারমিট করেছিল কিনা- জানতে চাইলে বলেন, আমি শুধু গাছ বিক্রি করেছি। বাকি সব দায়িত্ব আনোয়ারের। এছাড়াও আমেনা খাতুনের পুত্রবধূ সাকিয়া (২৮) জানান, আনোয়ার বন বিভাগের অনুমতি নিল কিনা জানি না কিন্তু গত সপ্তাহে পোমরা বন বিটের দুজন লোক এসে হুমকি-ধমকি দিয়ে আমাদের থেকে কিছু টাকা নিয়ে বলেন গাছগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে।
ভূমিতে পড়ে থাকা এসব গাছ পাহারায় নিযুক্ত শ্রমিকের মধ্যে বেতাগী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড এলাকার শ্রমিক মো. নাসের (৩৫) ও সাইফুদ্দীন (৩০) জানান, আনোয়ার ও মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে জনপ্রতি দৈনিক ৬শত টাকা মজুরিতে আমরা দিনে ৫-৬ জন করে প্রায় ১৫-২০ দিন ধরেই গাছ কেটেছি। এসব গাছের মধ্যে ৩০ গোড়া সেগুন, গর্জন, শিয়রি, মেহগনি ও তেলসুর'সহ ৫ প্রজাতির মোট ২শত গোড়া গাছ কেটেছি। এতে সবমিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৫শত ঘনফুট গাছ হতে পারে। সেগুনসহ কিছুকিছু গাছ অন্যত্র সরিয়ে নিলেও বাকিগুলো এখনও ভূমিতে পড়ে আছে।
শান্তির হাট এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী আনোয়ার ও মহিউদ্দিন দুজনেই এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমেনা খাতুনের কাছ থেকে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে মোট ২০০ গোড়া গাছ কিনে নেন আনোয়ার। পরবর্তীতে এসব গাছ কিনে নেন মহিউদ্দিন। আনোয়ার ও মহিউদ্দিন জোত পারমিট ছাড়াই গাছ কাটতে পোমরা বনবিটের দ্বারস্থ হয়। পরে সামশুল আলমের মধ্যস্থতায় পোমরা বিটের বাগানমালী জুয়েলের মাধ্যমে দফায় দফায় টাকা দিয়ে পোমরা বিট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই এসব গাছ কাটতে সক্ষম হয় বলে জানান আনোয়ার ও মহিউদ্দিন দুজনেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পোমরা বিট কর্মকর্তা মাসুম কবীর তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন হলেও জোত পারমিট ছাড়া গাছ কাটা অবৈধ। গাছ কাটার বিষয়টি জানতে পেরে আমরা সরেজমিনে গিয়ে গর্জন ও মেহগনিসহ ১শত ৭৯ টুকরা গাছ জব্দ করেছি। সেখান থেকে প্রায় ২৫ টুকরা মতো বিটে নিয়ে আসি এবং বাকিগুলো সামশুল আলমের জিম্মায় রেখেছি। গাছগুলো স্পটে থাকা অবস্থায় টেন্ডার করে বিক্রি করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় জানান, কাঠ ব্যবসায়ী ও বিট কর্মকর্তাদের সাথে মধ্যস্থতার দায়িত্ব পালন করে পোমরা এলাকার ভোলার বাপের বাড়ির মৃত করিম বৎসের পুত্র সামশুল আলম সামশু (৫০)। যার নেতৃত্বেই এই এলাকায় গাছ কাটার জন্য রফাদফা হয় বিট কর্মকর্তার সাথে। আর এই সামশুল আলমের কাছেই রওশন পল্লী থেকে জব্দকৃত গাছ জিম্মায় রেখেছে পোমরা বিটে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামশুল আলম এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গাছ আমার জিম্মায় আছে। আর গোটা রাঙ্গুনিয়ার মধ্যে গাছ কাটতে হলে সবারই রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তাকে টাকা দিতে হয়। আমরাও দিছি। এছাড়াও আমাদের পোমরা নিয়ে আপনি মাথা ঘামাবেন না, এইটা নিয়ে আপনার সমস্যা কি? এসব বলে শাসান এই সামশুল আলম।
রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা (সহকারী বন সংরক্ষক) শীতল পাল বলেন, রওশন পল্লী থেকে গাছ কাটার বিষয়টি জানতে পেরে বিস্তারিত খতিয়ে দেখছি। গাছ কাটার সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বন আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জজানতে চাইলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (চট্টগ্র্রাম দক্ষিণ) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্স বা পারমিট ছাড়া গাছ কাটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএসএম / জামান

আশুলিয়ার জামগড়ায় সেনাবাহিনীর অভিযানে ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক

পাপ্পীর কানাডা ও আমেরিকার ভিসা বাতিলের আবেদন

চুয়াডাঙ্গায় বিষাক্ত মদে ছয়জনের প্রাণহানি

মধুখালী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে প্রেসক্লাবের সভাপতি সহ তিনজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ

বারহাট্টায় আন্তর্জাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

নোয়াখালী সুবর্ণচরে রাস্তায় প্রকাশ্যে যুবককে গলা কেটে হত্যা

টাঙ্গাইলকে ঢাকা বিভাগে রাখার দাবিতে উত্তাল যমুনা সেতু মহাসড়ক

আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে জয়পুরহাটে আলোচনা সভা

মাগুরায় আসন্ন কাবাডি ও ক্রিকেট লীগ উপলক্ষে মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠিত

পঞ্চগড়ে ঘরে ঘরে জনে জনে কর্মসূচি নিয়ে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির

বিরামপুরে দূর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত

নাচোলে তে-ভাগা আন্দোলনের বীরাঙ্গনা নেত্রী ইলামিত্রের ২৩ তম মৃত্যু বাষিকী পালিত
