শিক্ষা ব্যবস্থায় ফিরে আসুক পুরনো দিনের ঐতিহ্য

'শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড' এই গুরুত্বপূর্ণ উক্তিটি সুপ্রাচীন কাল থেকে শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শিক্ষা মানুষের মনুষ্যত্ব, বিবেক, নৈতিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায় এবং কুসংস্কার ও অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে দূরে রাখে। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অনেক অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞের মতে, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় যতটা উন্নতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি অবনতি ঘটেছে। নতুন শিক্ষা কারিকুলাম শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে বলে তাদের দাবি।
একসময় শিশুদের বাবা-মা ও শিক্ষকরা শেখাতেন নীতি-নৈতিকতা এবং কীভাবে ভালো মানুষ হতে হয়। এখন জিপিএ ৫ বাড়লেও শিক্ষার মান বাড়েনি। এটি দেখে প্রশ্ন জাগে, শিক্ষাব্যবস্থা কোন পথে হাঁটছে? বর্তমানে শিশুদের ওপর অতিরিক্ত বইয়ের চাপ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে বয়সে তাদের খেলাধুলা ও আদর-স্নেহ পাওয়ার কথা, সেই বয়সে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত অতিরিক্ত বই ও হোমওয়ার্কের বোঝা তাদের ওপর চাপানো হচ্ছে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে শিক্ষার্থীরা সকালে ও সন্ধ্যায় পড়াশোনা করত, বিকেলে খেলাধুলা করত এবং শ্রেণিকক্ষেই বেশিরভাগ পড়া বুঝে নিত। সেই সময়ের পাঠ্যবইয়ে মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শেখানো হতো, যা এখন উপেক্ষিত।
বর্তমানে পাঠ্যবই থেকে এমন কবিতাগুলো উঠে গেছে, যা শিশুদের বড়দের সম্মান করা এবং ভালো হয়ে চলার অনুপ্রেরণা দিত। আজ বড়দের সম্মান করা তো দূরের কথা, ছোটদের কাছেই প্রবীণরা অবহেলিত। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় শুধু প্রতিষ্ঠিত হতে, যা অনেক সময় অন্যায় পথে অর্থ উপার্জনের দিকে ঠেলে দেয়। এতে সমাজে অশুভ প্রতিযোগিতা বাড়ছে, এবং মানবিকতা বিলুপ্ত প্রায়। শিক্ষা আজ বাণিজ্যিক কারণে প্রকাশিত হচ্ছে। একসময়কার বইয়ে মা-বাবা ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার যে দিকগুলো ছিল, তা এখন হারিয়ে গেছে। এর ফলে সন্তানেরা রাত জাগা পাখিতে পরিণত হয়েছে, এবং মা-বাবার আশ্রয়স্থল এখন বৃদ্ধাশ্রম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য শেখানো হয় না, যার কারণে পারিবারিক সম্পর্কগুলো নষ্ট হচ্ছে।
আমাদের শৈশবে শিশুদের শেখানো হতো ফুল, ফল এবং আত্মীয়-স্বজনের সম্পর্কের কথা। বর্তমানে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কগুলোও বিলুপ্তপ্রায়। মানুষ নিজেকে নিয়ে এত ব্যস্ত যে অন্যের জন্য কিছু করার আগ্রহ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে পাঠ্যক্রমে এ বিষয়গুলো উপেক্ষিত হচ্ছে। এর ফলে সমাজে নানা অপকর্ম বেড়েই চলেছে, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। আশি-নব্বই দশকে বাংলার আবহমান চিত্র এবং বাংলাদেশের রূপ-লাবণ্য নিয়ে কবিতা শেখানো হতো, যা এখন অনুপস্থিত। বিজাতীয় সাংস্কৃতিক চর্চা নিয়ে পাঠ্যবই সাজানো হচ্ছে, যার ফলে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে ডিজিটাল যুগে শিক্ষার্থীরা বই পড়ার চেয়ে স্মার্টফোনে গেমসে বেশি আসক্ত। উন্মুক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে অশালীন কথাবার্তা শিখছে তারা। নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষাবিহীন ধারাবাহিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। তারা মনে করেন, এতে শিক্ষাব্যবস্থার মান নষ্ট হবে। সমাজের সুধীজন থেকে শুরু করে অভিভাবকদের একমাত্র চাওয়া হলো, শিক্ষাব্যবস্থায় যেন হারানো অতীত ফিরে আসে, যেখানে থাকবে আদবকায়দা, মানবিকতা ও মনুষ্যত্ব। পুরনো দিনের শিক্ষাব্যবস্থায় শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সৎ চিন্তা ও সৎ বাক্যের ওপর জোর দেওয়া হতো। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় সেই পুরনো দিনের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাণ ফিরে আসুক, এটাই সকলের প্রত্যাশা।
এমএসএম / এমএসএম

স্কুল-জীবনের স্মার্টফোন: শিক্ষার পথ সহজ, নাকি বাঁধার দেয়াল?

ডিজিটাল ইকোনমিতে তরুণদের অংশগ্রহণে বাড়ছে প্রবৃদ্ধির গতি

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে বাড়ছে অপরাধ

শিক্ষা ব্যবস্থায় ফিরে আসুক পুরনো দিনের ঐতিহ্য

মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা সংকট থেকে প্রযুক্তি বাজার: বাংলাদেশের করণীয় কি?

পিআর পদ্ধতি নিয়ে হঠাৎ এতো আলোচনা

আ-তে আলো, আ-তে আধাঁর

মোদির চীন সফর ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রভাব

রিসাইক্লিং থেকে রেভিনিউঃ চক্রাকার অর্থনীতির বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি

বিপদের বন্ধু লোকনাথ বাবা ও তাঁর অলৌকিক কাহিনী

অতিরিক্ত স্বাধীনতা জীবনে আধাঁর ডেকে আনে

বিএনপির ৪৭ বছরের পথচলা ও জিয়াউর রহমান
