স্কুল-জীবনের স্মার্টফোন: শিক্ষার পথ সহজ, নাকি বাঁধার দেয়াল?

বর্তমান বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্টফোন থাকা একটি সাধারণ চিত্র হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির সঙ্গে অনলাইন শিক্ষা, সহজতর যোগাযোগ এবং নানা তথ্যের সহজ প্রাপ্তির কারণে এই ডিভাইসটি কিশোর-কিশোরীদের জীবনযাপনে ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। তবে সুবিধার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানামাত্রিক চ্যালেঞ্জও। এই লেখায় স্মার্টফোনের কার্যকর ও ক্ষতিকর উভয় দিকের পাঠ তুলে ধরা হলো।
সুবিধা: শিক্ষার্থী জীবনে স্মার্টফোনের ইতিবাচক প্রভাব
স্মার্টফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস, ইউটিউব টিউটোরিয়াল, ই-বুক এবং বিভিন্ন অ্যাপের সাহায্যে পড়ালেখায় অগ্রসর হচ্ছে। শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে গ্রুপ তৈরি করে নোট ও মতামত বিনিময় করা সহজ হয়েছে। জটিল প্রশ্ন বা সমস্যা গুগল বা উইকিপিডিয়ায় সার্চ করে দ্রুত সমাধান পাওয়া যাচ্ছে। স্মার্টফোন শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপত্তা ও জরুরি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। পথিমধ্যে কোনো সমস্যা হলে বাবা-মায়ের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব এবং বিপদে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা জরুরি নম্বরে ফোন দেওয়া সহজ হয়েছে। এই ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অল্প বয়স থেকেই ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন করছে, যেমন আইটি, মোবাইল অ্যাপ, ভিডিও এডিটিং। এর ফলে তারা নানা হ্যাকাথন, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এবং ডিজিটাল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারছে।
অসুবিধা: স্মার্টফোন ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব
স্মার্টফোনের একটি বড় সমস্যা হলো আসক্তি ও সময় অপচয়। শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ দীর্ঘ সময় গেম, ইউটিউব ও ফেসবুকে ব্যয় করছে, যার ফলে তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ কমছে এবং পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হচ্ছে। অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অনেকের ঘুমের সমস্যা হচ্ছে, চোখে ও মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে এবং শারীরিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ায় ওজন বৃদ্ধি ও ঘাড়-পিঠে ব্যথার অভিযোগও বাড়ছে। সাইবার অপরাধ এবং নিরাপত্তার ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। স্মার্টফোন ব্যবহার করে সাইবার বুলিং ও অনলাইন হয়রানি বেড়েছে, যা মানসিক চাপ ও আত্মবিশ্বাসের সংকট তৈরি করছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীরা অনুপযুক্ত ওয়েবসাইট, বিপজ্জনক গেম বা মিথ্যা তথ্যের ফাঁদে পড়ছে। পারিবারিক ও সামাজিক দূরত্বও বাড়ছে। বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে আড্ডা, গল্প বা পারস্পরিক সম্পর্ক হ্রাস পাচ্ছে, কারণ সবাই নিজ নিজ ফোনে ব্যস্ত। শুধুমাত্র ভার্চুয়াল বন্ধুত্বে সন্তুষ্ট থাকায় সত্যিকারের সামাজিক দক্ষতা কমে যাচ্ছে।
করণীয়: নিরাপদ-সচেতন স্মার্টফোন ব্যবহার
শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্মার্টফোনের সীমিত ও কার্যকর ব্যবহারে স্বেচ্ছা নিয়ন্ত্রণ গড়ে তোলা প্রয়োজন। পড়াশোনার জন্য প্রযুক্তির সঠিক দিক বেছে নেওয়া এবং অপব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ থাকা উচিত এবং সাইবার নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিদ্যালয়ভিত্তিক কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে। মাধ্যমিক পর্যায়ে স্মার্টফোন শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে, তেমনই নানাবিধ সমস্যাও তৈরি করছে। তাই স্মার্টফোন ব্যবহারের গুণগত ও নৈতিক দিকটি তুলে ধরা জরুরি। অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের সম্মিলিত উদ্যোগে প্রযুক্তি শিক্ষার সহায়ক হবে, অন্তরায় নয়—এটাই প্রত্যাশিত।
এমএসএম / এমএসএম

স্কুল-জীবনের স্মার্টফোন: শিক্ষার পথ সহজ, নাকি বাঁধার দেয়াল?

ডিজিটাল ইকোনমিতে তরুণদের অংশগ্রহণে বাড়ছে প্রবৃদ্ধির গতি

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে বাড়ছে অপরাধ

শিক্ষা ব্যবস্থায় ফিরে আসুক পুরনো দিনের ঐতিহ্য

মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা সংকট থেকে প্রযুক্তি বাজার: বাংলাদেশের করণীয় কি?

পিআর পদ্ধতি নিয়ে হঠাৎ এতো আলোচনা

আ-তে আলো, আ-তে আধাঁর

মোদির চীন সফর ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রভাব

রিসাইক্লিং থেকে রেভিনিউঃ চক্রাকার অর্থনীতির বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি

বিপদের বন্ধু লোকনাথ বাবা ও তাঁর অলৌকিক কাহিনী

অতিরিক্ত স্বাধীনতা জীবনে আধাঁর ডেকে আনে

বিএনপির ৪৭ বছরের পথচলা ও জিয়াউর রহমান
