ঢাকা রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মুসলিম রাষ্ট্রকে নিয়ে বৈশ্বিক শক্তির ষড়যন্ত্র-মো. হাসিব


মো. হাসিব photo মো. হাসিব
প্রকাশিত: ১৪-৯-২০২৫ দুপুর ৪:২৭

বিশ্বের প্রভাবশালী কিছু শক্তি দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের বহু দেশ প্রাকৃতিক সম্পদে, বিশেষত জ্বালানি তেলে সমৃদ্ধ হওয়ায় এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করা তাদের অন্যতম কৌশলগত লক্ষ্য। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি, সরকার পরিবর্তনের গোপন প্রচেষ্টা, রাজনৈতিক বিভাজন এবং সশস্ত্র সংঘাত উসকে দেওয়া—সবই এই ষড়যন্ত্রের অংশ। ফলে বহু রাষ্ট্র স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে বৈশ্বিক শক্তির প্রভাববলয়ে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে।

মুসলিম বিশ্বকে ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, রোহিঙ্গা, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হতে দেখা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানরা আজ নিপীড়ন, দখলদারি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থার শিকার। ফিলিস্তিনের মানুষ প্রতিদিনই নিজের ভূমিতে হত্যার শিকার হচ্ছে, কাশ্মীরের মানুষ বছরের পর বছর অবরুদ্ধ অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে, রোহিঙ্গারা নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রয়হীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সিরিয়া ও ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধ, ধ্বংসযজ্ঞ ও খাদ্য সংকট ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। অথচ এসব ইস্যুতে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো একত্রে শক্ত কণ্ঠ তোলার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দ্বিধা ও বিভাজনের কারণে দুর্বল অবস্থানে থেকে যাচ্ছে।

মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের ওপর বৈশ্বিক শক্তির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বিস্তারের ফলে সাম্প্রতিক কয়েক দশকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র আরও স্পষ্ট হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ (Universal Declaration of Human Rights) অনুযায়ী প্রতিটি মানুষের রয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার, চলাচলের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষার অধিকার। বাস্তবে মুসলিম বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এসব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এই বঞ্চনার জন্য কেবল বাইরের আগ্রাসী শক্তিই দায়ী নয়—অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দুর্বলতা, স্বৈরতান্ত্রিক শাসন, দুর্নীতি ও নীতি অসঙ্গতিও সমানভাবে দায়ী।

বৈশ্বিক শক্তিগুলো প্রায়শই "সন্ত্রাসবাদ দমন", "মানবাধিকার রক্ষা" বা "গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা"র মতো শ্লোগানকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে মুসলিম রাষ্ট্রে সামরিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চালায়। কিন্তু বাস্তবে এসব পদক্ষেপ মানুষের অধিকার সীমিত করে, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করে এবং নাগরিক স্বাধীনতা সংকুচিত করে। ফিলিস্তিনে দীর্ঘস্থায়ী দখলদারিত্ব, কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত ক্ষমতা, কিংবা ইয়েমেনে মানবিক সংকট—সবই প্রমাণ করে, এই হস্তক্ষেপ মানুষের জন্য উন্নতি নয় বরং অধিক ভোগান্তি বয়ে আনে।

মুসলিম রাষ্ট্রগুলো অনেক সময় একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস পোষণ করে এবং রাজনৈতিক ঐক্যের অভাব প্রদর্শন করে। যৌথ কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণের পরিবর্তে তারা প্রায়ই আঞ্চলিক স্বার্থ ও ক্ষমতার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। এর ফলে বাইরের শক্তিগুলোর জন্য তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার ও বিভাজন সৃষ্টি করা সহজ হয়। দুর্নীতি, একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অভাব এবং জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সীমিত হওয়ার কারণে রাষ্ট্রগুলো ভিতর থেকেই দুর্বল হয়ে পড়ে।

মিডিয়া, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের চিন্তাধারায় ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করা হয়। তাদেরকে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি উদাসীন করে তোলা হয় এবং ভোগবাদী জীবনধারায় অভ্যস্ত করা হয়। ফলে জাতীয় ও ধর্মীয় ঐক্য ক্ষুণ্ণ হয় এবং মুসলিম রাষ্ট্রগুলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে বৈশ্বিক শক্তির স্বার্থে ব্যবহৃত হতে বাধ্য হয়।

এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে মুসলিম বিশ্বের প্রয়োজন বাস্তবসম্মত কৌশল, আন্তঃরাষ্ট্রিক সহযোগিতা এবং ইসলামের ন্যায় ও নৈতিকতার নীতি অনুসরণ। ইসলামে রাজনৈতিকভাবে ন্যায়, ইনসাফ, শান্তি এবং মানবিক মর্যাদা রক্ষার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর উচিত ইসলামের মূলনীতি অনুযায়ী নিজেদের শাসনব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনা করা।

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য নিশ্চিত করতে হলে পারস্পরিক অবিশ্বাস দূর করা, অভ্যন্তরীণ সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করা, দুর্নীতি দমন এবং জনগণের অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে মুসলিম বিশ্ব তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে এবং বিশ্বের অন্যান্য শক্তির সঙ্গে সমান মর্যাদায় কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।

যদি মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ইসলামের শিক্ষা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে পারে, তবে তারা কেবল পশ্চিমাদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হবে না—বরং বিশ্বে শান্তি, ন্যায় ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের আসনও পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

লেখক: মো. হাসিব

শিক্ষার্থী, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি। 

রিসার্চ এ্যাসিস্ট্যান্ট- জিপিআরএস,শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি।

এমএসএম / এমএসএম

মুসলিম রাষ্ট্রকে নিয়ে বৈশ্বিক শক্তির ষড়যন্ত্র-মো. হাসিব

শিশু হাসপাতালে সেবার পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে ও দালালদের দৌরাত্ম্য কমেছে

স্কুল-জীবনের স্মার্টফোন: শিক্ষার পথ সহজ, নাকি বাঁধার দেয়াল?

ডিজিটাল ইকোনমিতে তরুণদের অংশগ্রহণে বাড়ছে প্রবৃদ্ধির গতি

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে বাড়ছে অপরাধ

শিক্ষা ব্যবস্থায় ফিরে আসুক পুরনো দিনের ঐতিহ্য

মধ্যপ্রাচ্যের ভিসা সংকট থেকে প্রযুক্তি বাজার: বাংলাদেশের করণীয় কি?

পিআর পদ্ধতি নিয়ে হঠাৎ এতো আলোচনা

আ-তে আলো, আ-তে আধাঁর

মোদির চীন সফর ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রভাব

রিসাইক্লিং থেকে রেভিনিউঃ চক্রাকার অর্থনীতির বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি

বিপদের বন্ধু লোকনাথ বাবা ও তাঁর অলৌকিক কাহিনী

অতিরিক্ত স্বাধীনতা জীবনে আধাঁর ডেকে আনে