ঢাকা বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

গণপূর্ত সার্কেল-১

চট্টগ্রামে জাতিসংঘ পার্কের ফাটল মেরামতে অনিহা


এসএম পিন্টু photo এসএম পিন্টু
প্রকাশিত: ১৭-৯-২০২৫ দুপুর ১২:৫৮

চট্টগ্রামে গণপূর্ত সার্কেল ১ এর অধীনে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে জুলাই স্মৃতি উদ্যানের (সাবেক জাতিসংঘ পার্ক)। এই কাজে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হলেও নিম্নমানের সাগ্রী ব্যবহারের ফলে কিছু কিছু স্থানে ফাটল দেখা গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্ট্রাক্সেল ইঞ্জিনিয়ারস নিজ খরচে তা মেরামত করে দেয়ার কথা থাকলেও গণপূর্তের প্রকৌশলীদের সাথে আতাঁত করে পার পাওয়ার চেষ্টা করছে। উল্টো জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজটিও তাদের কবজায় নেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। 
জানা যায়, ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে করা সৌন্দর্যবর্ধন কাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী। উদ্বোধনের একবছরের মাথায় ফেটে গেছে বাউন্ডরী দেয়াল। নষ্ট হয়ে গেছে দামি টাইলসের রং, সামান্য বৃষ্টিতে ওয়াকওয়েতে জমে থাকে পানি। সিমেন্টের মিশ্রণে নিম্নমানের বালির ব্যবহারের ফলে দেখা দিয়েছে ফুসকুরি। প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে লাগানো গাছের চারা সংখ্যায় খুব কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব নষ্ট হয়ে যাওয়া স্থানগুলো দ্রুত মেরামতের কথা জানিয়েছিন নির্বাহী প্রকৌশলী। তবে ঠিকাদার বলছেন তাদেরকে কিছুই বলা হয়নি। আবার আরেকজন বলছেন জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান কাজের সময় তারা ফেটে যাওয়া স্থানগুলো মেরামত করে দিবেন।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তৎকালীন জাতিসংঘ পার্কের সৌন্দর্যবর্ধন কাজের জন্য বিগত ২০২২ সালে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। যেখানে ৩৫৩.৫৫ মিটার বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা অর্থাৎ প্রতি মিটারে খরচ হয়েছে ৬৯ হাজার ১৪২ টাকা। সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞদের মতে এধরণের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে মিটারপ্রতি সর্বোচ্চ ব্যয় (ঠিকাদারের লাভ ও ভ্যাট,ট্যাক্সসহ) হতে পারে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু অতিরিক্ত খরচের পরও বাউন্ডারী ওয়ালের অনেক জায়গা ফেটে গেছে। এগুলো মেরামত নিয়ে একে অপরের উপর দায় চাপাচ্ছে।
এছাড়াও ৪৪ টি আরসিসি বসার টুল বানানো হয়েছে ৩৫ লাখ ৯২ হাজার টাকায় প্রতিটির খরচ ৮১ হাজার ৬০০ টাকা, এধরণের একটি টুলের সর্বোচ্চ খরচ হতে পারে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। ১ টি ডিপ টিউবওয়েল বসানো হয়েছে ১৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকায়, যার সর্বোচ্চ ব্যয় হতে পারে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা। ২ টি মেটাল পারগোলার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। শিশুদের খেলাধুলার জন্য ৫ টি সরঞ্জাম কেনা হয়েছে ১৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা, শরীর চর্চার জন্য ২টি হরিজন্টাল বার কেনা হয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। পার্কের ভেতরে ছোট ছোট গাছের চারা লাগানো বাবদ ব্যয় করেছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। একটা স্ট্রীট লাইট খাম্বার ওপর লাগানো বজ্র নিরোধক ব্যবস্থার জন্য ব্যয় করেছে ১৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, একটি ৩০ কেভিএ ডিজেল জেনারেটরের জন্য ব্যয় করেছে ২০ লাখ টাকা। যা অস্বাভাবিক ব্যয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই পার্কের সৌন্দর্যবর্ধন কাজে যে ব্যয় দেখানো হয়েছে তা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের। ময়লা ও লবানাক্ত বালি ব্যবহার করা হয়েছে, ফলে ফুসকুরি দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় সিমেন্ট দেয়া হয়েছে কম। ফলে সিমেন্ট ছুটে যাচ্ছে। নিম্নমানের সামগ্রীর ফলে দেয়াল ফেটে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদার সিন্ডিকেট মিলে সরকারের বড় অংকের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে এই প্রকল্প থেকে।
এব্যপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের গণপূর্ত সার্কেল ১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা ঠিকাদারের সাথে কথা বলেছি, ওরা কিছু মেরামত করেছে বাকীগুলোও মেরামত করে দিবে বলে বলেছে। এর আগে গত জুলাই মাসে আগের নিউজে বলেছিলেন, বাউন্ডারী ওয়ালের ফাটলগুলো আমি দেখেছি, কিছু রড বাকা হয়ে গেছে, ফলে এমন ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য কিছু ত্রুটি আছে আমরা সমাধান করছি।
এব্যপারে জানতে চাইলে প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী মনোজ দে বলেন, এই পার্কের মধ্যে একটা জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার কথা আছে, সেটি করার সময় ফাটল ও ভাঙ্গাসহ যা ত্রুটি আছে সব মেরামত করে দিবে বলে ঠিকাদারের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারের পক্ষে প্রকৌশলী মো. ইফতেখার বলেন, ডিপার্টমেন্ট আমাদের কাজে সন্তুষ্ট, ফাটল, ভাঙ্গা বা  মেরামতের বিষয়ে তারা আমাদের কিছু বলেনি। তারা যেভাবে আমাদের ইন্সট্রাকশন দিবে আমরা সেভাবেই কাজ করব। তবে টাইলস নষ্ট হওয়ার ব্যপারে তিনি বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গণপূর্তের যে লোকবল দরকার সেই পরিমাণ লোক তাদের নেই, দেখাশোনার অভাবে অনেক কিছু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এগুলোর দায় আমাদের নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানান, এই কাজ থেকে প্রকৌশলীরা মোটা অংকের কমিশন নিয়েছে ফলে ঠিকাদার তাদের মতো করে কাজ করেছে। এখ ননষ্ট হলেও তারা কিছু বলতে পারছেনা। আবার জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ করার প্রস্তাবনা প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তা কবে নাগাদ অনুমোদন হবে বা আদৌ হবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই সেই অযুহাতে মেরামত না করে বসে থাকা মানে ফাঁকি দেয়া। নিউজ প্রকাশের কিছুদিন পর সব ঠান্ডা হয়ে যাবে আর তখন মেরামত না করলেও আর কিছু হবে না।
উল্লেখ্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত “চট্টগ্রাম জেলার পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান (বর্তমানে জুলাই স্মৃতি উদ্যান) উন্নয়ন”-শীর্ষক বিনিয়োগ প্রকল্পটি বিগত ২০২২ সালের ৪ জুলাই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। মোট ব্যয় ১১ কোটি ৭০ লাখ ১২ হাজার টাকা। বাস্তবায়নকাল জুলাই ২০২২ হতে জুন ২০২৪ পর্যন্ত।

এমএসএম / এমএসএম

মনোহরগঞ্জে যাত্রীবাহী ইজিবাইকের উপর বাসের চাপ নিহত ২ আহত ২

শারদীয় দূর্গাৎসব উপলক্ষে মান্দায় আনছার ও ভিডিপি সদস্য যাচাই-বাছাই

কুড়িগ্রামে ৩৩ হাজার মেট্রিক টন আলু অবিক্রিত

সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ডের আগুনে আট শ্রমিক দগ্ধ

রাজশাহীর গুদামে পচা চাল সরবরাহকারীদের নামের তালিকা উধাও

সাতকানিয়ায় হত্যা মামলার আসামির বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি

রৌমারীতে ডিলার ও ব্যবসায়ীর চালের গুডাউন সিলগালা করলেন ইউএনও

সিংগাইরে ৭৭টি পূজা মন্ডপে শিল্পপতি অনিরুদ্ধ কুমার রায়ের আর্থিক সহায়তা

শান্তিগঞ্জে গলায় ফাঁস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

বেনাপোল দিয়ে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু

চরবাগডাঙ্গায় নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

আসামি ধরতে গিয়ে মাদককারবারিদের হামলার শিকার পুলিশ

চট্টগ্রামে জ্বলন্ত সিগারেট থেকে গ্যাস সিলিন্ডারের গুদামে বিস্ফোরণ