শাস্তির বদলে পুরস্কৃত জেলার মাসুদ
ভূয়া ঠিকানায় চাকরি, সরকারি বাসায় পলাতক সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়া, চট্টগ্রাম কারাগারের ক্যান্টিনের অর্থ আত্মসাৎ, বন্দীদের অনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে অর্থ আদায়সহ বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ মাসুদ হাসান জুয়েল’র বিরুদ্ধে। নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকার পরেও তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকে পুরস্কার হিসেবে বদলী করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। এই নিয়ে সচেতন মহলে চলছে তীব্র সমালোচনা। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ণ করতে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা দুর্নীতির বরপুত্ররা কলকাঠি নাড়ছেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেকেই।
জানা যায়, গতবছরের ১০ নভেম্বর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ মাসুদ হাসান জুয়েল। সেসময় ডিআইজি মো: টিপু সুলতান ও এআইজি তালেবকে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে চট্টগ্রামে আসেন। সে কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার ফুলতলীর ভূঁইয়া বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা হলেও চট্টগ্রামের ভূয়া ঠিকানা ব্যাবহার করে বাংলাদেশ কারা অধিদপ্তরে যোগদান করেছেন। তার এনআইডিতে এখনও স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লা দেওয়া থাকলেও তার চাকরি ফাইলে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে চট্টগ্রাম দেয়া আছে, যা তাঁর বদলী আদেশে নিজ জেলা হিসেবে চট্টগ্রামের কথা উল্লেখ রয়েছে। বদলীর বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, জেলার মাসুদ হাসান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বদলী হয়েছেন, তবে এখনো চট্টগ্রামে আছেন, আজ (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চলে যাওয়ার কথা।
কারাগারে জেলারের অনিয়মের রাজত্ব:
কারাগারের বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে যোগদানের পর জেলখানায় শুরু করেন অনৈতিক বাণিজ্য। তার মামাতো ভাই মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে বিধিবহির্ভূতভাবে ব্যক্তিগত কাজে সহায়তার জন্য অর্ডারলি হিসেবে নিয়োগ করেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী ঠিকাদার আলম ও সালঅউদ্দীনের মাধ্যমে আটককৃত চট্টগ্রামের প্রভাবশালী বন্দী সাতকানিয়া আসনের সাবেক এমপি আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী, টেকনাফের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদি, রাউজানের সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরী, বন্দর পতেঙ্গার সাবেক এমপি এম এ লতিফ ও সিএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলামসহ বহু বন্দীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে তাদেরকে অনৈতিক সুবিধা দেয়া হতো। ফটিকছড়ি উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা কামালের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ আদায় করতেন। এমনকি অনেক মোটা একটি স্বর্ণের চেইন উপহার দেয়ায় বিষয়টি নিয়ে ব্যপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। জেলখানা সংলগ্ন আমানত শাহ(র.) মাজারের পাশে ঠিকাদার আলমের বাড়িতে বন্দীদের প্রতিনিধির সাথে গোপন বৈঠক করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। যা কারা আইনের পরিপন্থী। শুধু তা-ই নয়, সে চট্টগ্রাম কারাগারে এসে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বন্দীদের স্থানান্তর বাণিজ্য শুরু করেন। আর ওয়ার্ড ইনচার্জ টাকার বিনিময়ে কেনা বন্দীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতেন। কেউ টাকা দিতে না চাইলে তাদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হতো। কারা ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্ব নিজ হাতে রেখে, পণ্যের দাম বাড়িয়ে প্রতিমাসে লাভের প্রায় ৫০ লাখ টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ ভাটোয়ারা করতেন। এছাড়া বন্দীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবারের পরিমান কম দিয়ে তা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে।
আসামী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা:
গত ১ মে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক হাজতি আসামি (নং ৮৮৯১/২৫ মোঃ এমরান) পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আইনগত কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। পরে স্থানীয় বাকলিয়া থানার সহায়তায় তাকে আটক করা হলেও আদালতে হাজির না করে সরাসরি কারাগরে নেয়ার বিরল ঘটনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হলে গত ১০ মে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তারা গত আগষ্টে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এবিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য কক্সবাজার কারাগারের জেল সুপার জাবেদ মেহেদী বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করেছি। গত মাসে (আগষ্ট/২৫) প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এখন কি ব্যবস্থা নেয়া হবে তা কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, বান্দরবানের জেলার নাশির আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারের ডেপুটি জেলার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন।
সূত্র জানায়, কারাবিধি অনুযায়ী, বন্দী পালানোর ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে থানায় মামলা করতে হয় এবং নিকটস্থ থানা, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সুপারকে জানাতে হয়। কিন্তু ১ মে পালানোর ঘটনায় এসব কিছুই হয়নি। ঘটনার সময় বাজানো হয়নি অ্যালার্মও (পাগলা ঘণ্টা), যা কিনা বাধ্যতামূলক। এর আগে ২০২১ সালে বন্দী পালানোর ঘটনায় মামলার পর আদালত সাজা দিয়েছিলেন। সর্বশেষ এপ্রিল মাসে আদালত থেকে দুই বন্দী পালানোর ঘটনায়ও মামলা হয়। এই অপরাধেরও শাস্তি হয়নি বরং পুরস্কৃত বদলী করা হয়েছে।
অপরাধীর রক্ষকের দায়িত্বে জেলার:
সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে একাধিক মামলার আসামীকে তিনি সরকারি বাসায় আশ্রয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সে ২০০৮ সালে ছাত্রজীবনে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। সেই থেকে আওয়ামী লীগের প্রতি তার দুর্বলতা। তার আপন ভাই মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন কুমল্লিা নগর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি, বর্তমানে সে যুবলীগের পদে আছে। সে একাধিক মামলার আসামী হওয়া সত্ত্বেও জেনে শুনে তাকে রক্ষার জন্য নিজের সরকারি বাসায় আশ্রয় দিয়ে ফৌজদারী অপরাধ করেছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে ভারতে আত্মগোপনে চলে যান নাজমুল। বর্তমানে কোথায় আছে জানা সম্ভব হয়নি।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তার পিতার নাম মো: মনিরুল হক ভূইয়া। সে কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার ভূঁইয়া বাড়ির, ফুলতলী এলাকার বাসিন্দা। তিনি কারারক্ষীতে ভর্তি হয়ে পদোন্নতির মাধ্যমে সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর হয়ে অবসরে যান। তার চাচা অব. সিনিয়র জেল সুপার গিয়াস উদ্দীন তাকে নিয়োগ প্রদানের জন্য সুপারিশ করে। তার ওই চাচা তখন এআইজি হিসেবে নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন। ব্যক্তি জীবনে মাসুদ হাসান কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার আপন বড় বোনের স্বামী শাহীন কুমিল্লা কারাগারে সহ: প্রধান কারারক্ষী থাকাকালীন ১ লাখ পিস ইয়াবা সহ ধরা খাওয়ার কারনে চাকুরীচ্যুত হয় এবং জেল খাটে।
এসব বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে সদ্য বদলীকৃত জেলার মাসুদ হাসান জুয়েলের মোবাইলে কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
বদলীর বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ’সরকারি বাসায় সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়া মারাত্মক অপরাধ, এমনটি হলে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা উচিৎ। আর কারাগারে বন্দীদের সাথে অনৈতিক লেনদেন করার কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। গত মে মাসে আসামী পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আইনগত কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে কিনা তা নিয়ে একটা তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। ডিআইজি স্যারের কাছে রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা।’
এবিষয়ে কারা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজ মো. ছগির মিয়া বলেন, আমি নতুন এসেছি, ’এসব বিষয়ে এখনো অবগত হইনি। তবে দ্রুতই খোজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
এমএসএম / এমএসএম
বদলি আদেশের পরও বহাল হাটহাজারী পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী
মহাসড়ক এখন মৃত্যুফাঁদ: ৬ মাসে ৯ জনের প্রাণহানি, আতঙ্কে রায়গঞ্জবাসী
ধামরাইয়ে প্রকৌশলীর ওপর ইউপি চেয়ারম্যানের হামলা ও হুমকির অভিযোগ
জামগড়া আর্মি ক্যাম্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় মেডিকেল ক্যাম্পেইন এর আয়োজন
মানুষের জীবনমান ও শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে ৩১ দফার বিকল্প নেই: অভি
নওগাঁ-৩ আসনে বিএনপির পদচারনায় মুখর জনপদ
নরসিংদীর ঘোড়াশালে ট্রেনের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু
“চরিত্র হননের নোংরা খেলায় নেমেছে প্রতিপক্ষরা”— শওকত হোসেন সরকার
কুতুবদিয়ায় ছুরিকাঘাতে যুবক খুন; একজন আটক
কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাটের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে সাধারণ যাত্রীরা
গোপালগঞ্জ-১ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থীর মতবিনিময় সভা
বেনাপোল বন্দরে সন্ধ্যা ৬টার পর আমদানি-রপ্তানি বন্ধ