ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

বিএনপির ভাবনায় আগামীর শিক্ষা ব্যবস্থা: জ্ঞানভিত্তিক দেশ গড়ার দূরদর্শী রোডম্যাপ


নিজস্ব প্রতিবেদক photo নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪-১০-২০২৫ দুপুর ৪:৩৪

শিক্ষা হলো জাতির মেরুদণ্ড। যে জাতি শিক্ষিত, জ্ঞানভিত্তিক এবং চিন্তাশীল নাগরিক গড়ে তুলতে সক্ষম, সেই জাতিই সমৃদ্ধ, প্রগতিশীল এবং গণতান্ত্রিক সমাজের বিকাশ ঘটাতে পারে। আমাদের যুবসমাজে অগাধ সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। তবে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা সেই সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছে না। বিশ্বব্যাংকের তথ্য, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড এবং শিক্ষাবিদদের মূল্যায়নই এই বাস্তবতা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজন সুসংগঠিত নীতি, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ এবং যুগোপযোগী পরিকল্পনা। শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায়, গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য শিক্ষার মান উন্নয়ন অপরিহার্য।

সম্প্রতি আমি বিএনপির আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা: সমন্বিত ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা গঠনের জন্য গণতন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেখানে তরুণ রাজনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা, সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে। সেমিনারে অংশগ্রহণ করে নিজে দেখেছি, বিএনপির ভাবনায় একটি গণতান্ত্রিক সমাজের উন্নয়নে শিক্ষার মান এবং প্রসার কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যুবসমাজের উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা সত্ত্বেও তাদের বৈশ্বিক শিক্ষামঞ্চে অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একজন ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর অন্তত ১১ বছরের সমমানের শিক্ষাগত দক্ষতা থাকা উচিত। অথচ আমাদের শিক্ষার্থীরা মাত্র ৬.৫ বছরের দক্ষতায় সীমাবদ্ধ। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, আমাদের শিক্ষার্থীদের গড় স্কোর ৩৬৮, যেখানে ৩০০ হলো ন্যূনতম এবং ৬২৫ হলো উন্নত দক্ষতার সূচক। এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে মৌলিক পাঠ বোঝা, গণিত সমাধান এবং বিশ্লেষণ ক্ষমতায় আমরা যথেষ্ট পিছিয়ে আছি।

এই চিত্র শুধু শিক্ষার মান কম নয়, দেশের মানবসম্পদ এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। দেশের স্কুলগুলোতে অবকাঠামোর অপ্রতুলতা, শিক্ষাসামগ্রী ও পাঠাগারের দুর্বলতা শিক্ষার পরিবেশ সংকুচিত করে। শিক্ষকরা পেশাগত প্রশিক্ষণে পিছিয়ে থাকায় আধুনিক শিক্ষণ কৌশল আয়ত্ত করতে পারছেন না। পাঠ্যক্রম ভারসাম্যহীন ও অতিরিক্ত বোঝার কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার প্রকৃত স্বাদ পাচ্ছে না। শিক্ষা ব্যবস্থা সৃজনশীলতা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতাকে প্রাধান্য দেয় না। এই সব কারণে দেশের যুবসমাজের সম্ভাবনা পুরোপুরি বিকশিত হচ্ছে না।

বিএনপির ভাবনায় এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার জন্য স্পষ্ট ও যুগোপযোগী পরিকল্পনা রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিক্ষার গুরুত্ব এবং মানোন্নয়নে যে দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। তিনি শিক্ষা সম্পর্কে বরাবরই বলেছেন, গণতান্ত্রিক সমাজে শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো জ্ঞানভিত্তিক, সমন্বিত এবং মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন নাগরিক তৈরি করা। শিক্ষার মাধ্যমে যুবসমাজকে তথ্যনির্ভর, বিশ্লেষণধর্মী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করা সম্ভব। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিএনপি একটি সমন্বিত, ভবিষ্যৎমুখী এবং গুণগত শিক্ষাব্যবস্থা গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে।

বাজেটের ক্ষেত্রে বিএনপি শিক্ষার জন্য বরাদ্দ ১ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন বর্তমান হার থেকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। বাজেট বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পেশাগত ও কারিগরি প্রশিক্ষণ, তথ্যপ্রযুক্তি ও ভাষাগত দক্ষতা, গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা অর্জন নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যপুস্তক মুখস্থ করবে না, বরং বাস্তব সমস্যা সমাধানে সক্ষম হবে।

শিক্ষকদের অবস্থার উন্নয়নও বিএনপির অগ্রাধিকার। শিক্ষকদের সম্মানজনক বেতন নিশ্চিত করার পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাইমারি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত মানসম্মত শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। শিক্ষকেরা আর্থিক সমস্যার কারণে অন্য পেশায় জড়াতে বাধ্য হবেন না। এটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার স্থায়ী উন্নয়নে বড় অবদান রাখবে।

শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নের সঙ্গে যুবসমাজের নেতৃত্ব ও দেশপ্রেম চর্চার বিষয়ও বিএনপি গুরুত্ব দিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাউট, শিক্ষার্থী সামরিক ও নলেজভিত্তিক শিক্ষা এবং খেলাধুলা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। স্কুল-কলেজে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ‘কর্মমুখী শিক্ষার কোর্স’ চালু করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাজের অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তি দক্ষতা এবং নেতৃত্বগুণ বিকাশের সুযোগ তৈরি হবে। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে না, বরং যুবসমাজকে আত্মনির্ভর ও কর্মসংস্থানমুখী করে তুলবে।

বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফার মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থা এবং যুবসমাজের উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যুবসমাজের ভিশন, চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আধুনিক ও যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এক বছরব্যাপী বা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান, বিভিন্ন বাস্তবসম্মত কর্মসূচি গ্রহণ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ অর্জন লক্ষ্য করা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে মানবসম্পন্ন উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।

নিচ ও মধ্য পর্যায়ের শিক্ষাকে চাহিদাভিত্তিক এবং উচ্চশিক্ষাকে জ্ঞানভিত্তিক করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার সমান মান এবং মাতৃভাষায় শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়তে শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত ছাত্র সংসদে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করা হবে। শিক্ষা, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, উৎপাদনখাতের গবেষণা ও উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি ক্রীড়া, জাতীয় সংস্কৃতি ও নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভাষা শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি পূর্ববর্তী সময়ে বিভিন্ন বক্তব্যে বলেছেন, শিক্ষার্থীরা দেশের মধ্যে থাকুক বা বিদেশে, বহুভাষী দক্ষতা তাদের জীবনে বড় সুযোগ তৈরি করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রাথমিক পর্যায়ে এক বা দুইটি ভাষা শেখানো হবে, পরে মাধ্যমিকে অন্য ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। শিক্ষার্থীরা বাংলাসহ তিন-চারটি ভাষায় পারদর্শী হয়ে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হবে। এটি কেবল জ্ঞান বাড়াবে না, কর্মসংস্থান ও আত্মনির্ভরতার পথও সুগম করবে।

শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নের সঙ্গে যুবসমাজের নেতৃত্ব, দেশপ্রেম এবং মানবিক গুণাবলিও গড়ে তোলা হবে। স্কুলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, গবেষণায় গুরুত্ব, মাতৃভাষা ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার সমন্বয়, কর্মমুখী শিক্ষার আয়োজন এসব পদক্ষেপ দেশের যুবসমাজকে দক্ষ, মানবিক এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে।

যুগোপযোগী, জ্ঞানভিত্তিক ও মানবিক শিক্ষার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার যে স্বপ্ন বিএনপি এবং তারেক রহমান দেখিয়েছেন, তা দেশের জন্য এক প্রগাঢ় প্রেরণা। তাঁর নেতৃত্বে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও যুবসমাজের বিকাশের জন্য যে ভিশন দেখানো হয়েছে, তা প্রশংসনীয়। দেশের যুবসমাজের প্রতিটি অংশীদার যদি এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়, তবে আমরা একটি শিক্ষিত, মানবিক ও দক্ষ সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হব। 
তাঁর দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং জনমুখী শিক্ষানীতি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করবে এবং যুবসমাজকে দায়িত্বশীল, মানবিক ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। 

শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর কল্যাণ, কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, দক্ষ মানবসম্পদ গঠন এবং শিক্ষার আধুনিকীকরণ, গবেষণা ও ক্রীড়া-সংস্কৃতি বিকাশএই সকল উদ্যোগ দেশকে সমৃদ্ধ এবং প্রগতিশীল করতে সহায়ক হবে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠবে এবং যুবসমাজকে নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

লেখক:-শেখ রিফাদ মাহমুদ
ভিপি, কমনওয়েলথ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন

Aminur / Aminur

বিএনপির ভাবনায় আগামীর শিক্ষা ব্যবস্থা: জ্ঞানভিত্তিক দেশ গড়ার দূরদর্শী রোডম্যাপ

রেলের উন্নয়ন কেবল প্রকল্প নয়, দরকার র্কাযকর ব্যবস্থাপনা

অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি

টেকসই উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষা

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও বাস্তবতা

গাজায় যুদ্ধের নৃশংসতা ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালত

বন্ধ হোক অপসাংবাদিকতা

বিভাজনের রাজনীতি দেশের জন্য হুমকি হতে পারে

প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের স্বপ্নের সৌদি আরব

শারদীয় দুর্গোৎসবে সম্প্রীতির বাংলাদেশ ভাবনা

দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রয়োজন পর্যটন গন্তব্যগুলোর সামগ্রিক উন্নয়ন এবং শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং

গণতান্ত্রিক অধিকার ও নতুন নেতৃত্বের অন্বেষণ

দুঃখই সবচেয়ে আপন