তুরস্কের প্রত্যাবর্তন: মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির নতুন সম্ভাবনা
দীর্ঘ দুই বছরের ধ্বংসযজ্ঞ ও অনিশ্চয়তার পর গাজা উপত্যকায় অবশেষে দেখা দিচ্ছে শান্তির সূর্যোদয়ের আভাস। শতাধিক প্রাণহানি, অমানবিক অবরোধ ও ধ্বংসস্তূপের ভেতর দিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে শুরু হয়েছে নতুন এক শান্তি উদ্যোগের অধ্যায়। মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চলমান আলোচনায় এবার নতুন মাত্রা যোগ করেছে তুরস্ক—একটি দেশ, যার অবস্থান গাজা ইস্যুতে সবসময়ই স্পষ্ট ছিল, তবে এতদিন তা ছিল আড়ালে।
এবার আঙ্কারা আর পর্দার আড়ালে নয়। প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের দৃঢ় ও কৌশলগত পদক্ষেপে তুরস্ক আবারও মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। গাজার নিরাপত্তা ও ফিলিস্তিনি পুলিশ প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার ঘোষণা, পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (AFAD)-এর উদ্ধার দলকে সীমান্তে প্রস্তুত রাখা—এই দুটি উদ্যোগই স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, তুরস্ক এখন কেবল সহানুভূতিশীল দর্শক নয়, বরং সক্রিয় শান্তির স্থপতি হতে চায়।
এই উদ্যোগ কেবল মানবিক নয়; কূটনৈতিকভাবেও তা ঐতিহাসিক। গাজা পুনর্গঠন, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন ও বন্দি বিনিময়ের মতো সংবেদনশীল ইস্যুতে তুরস্কের সম্পৃক্ততা মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। শার্ম আল শেখ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের সঙ্গে এক মঞ্চে বসে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার চুক্তিতে স্বাক্ষর করা—এ যেন বহু দশক ধরে বিভক্ত মুসলিম বিশ্বের মধ্যে ঐক্যের এক প্রতীকী বার্তা।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে এরদোয়ান যখন কূটনৈতিক সমঝোতার পক্ষে অবস্থান নেন, তখন তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধান ইব্রাহিম কালিন কায়রো ও দোহায় হামাস, মিশর ও কাতারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকগুলোর মাধ্যমেই হামাসকে যুদ্ধবিরতি ও জীবিত এবং মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির প্রাথমিক চুক্তিতে রাজি করানো সম্ভব হয়।
সোমবার শার্ম আল শেখে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে এরদোয়ান ছিলেন চারজন স্বাক্ষরকারীর একজন—অন্য তিনজন ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং কাতারের আমির শেখ তামিম। তারা একসঙ্গে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন, যা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে—যদিও এর কিছু অস্পষ্ট ভাষা ভবিষ্যতে ভিন্ন ব্যাখ্যার সুযোগ রেখে দিয়েছে।
তবু সামনে পথ সহজ নয়। ইসরায়েল এখনো তুরস্কের ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান—বিশেষত আঙ্কারার হামাসপন্থী অবস্থান ও এরদোয়ানের কঠোর ভাষণের কারণে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যেসব দেশ হামাসের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ রাখতে পারে, তাদের মধ্যে তুরস্কই সবচেয়ে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রও এখন স্বীকার করছে, ইসরায়েল-হামাস উত্তেজনা প্রশমনে তুরস্কই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর মধ্যস্থতাকারী।
তুরস্কের এই সক্রিয়তা কেবল আন্তর্জাতিক সৌজন্যের অংশ নয়; এটি তার নিজস্ব নিরাপত্তা উদ্বেগের সঙ্গেও জড়িত। কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি হামলার পর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, একই ধরনের হামলা তুরস্কেও হতে পারে। তাই আঙ্কারা এখন শান্তি প্রতিষ্ঠায় যতটা আগ্রহী, ততটাই সচেতন নিজের ভূখণ্ডকে সংঘাতের ছায়া থেকে দূরে রাখতে।
আজ মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে উঠছে এক নতুন ভারসাম্য—যেখানে মিশর, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক একসঙ্গে বসে শান্তির মানচিত্র আঁকছে। যদি এই প্রক্রিয়া টেকসই হয়, তবে এটি শুধু গাজার নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যই হবে এক ঐতিহাসিক বাঁকবদল।
শান্তির এই উদ্যোগ সফল হলে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের নেতৃত্বে তুরস্ক শুধু একজন আঞ্চলিক খেলোয়াড় হিসেবেই নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের স্থায়ী শান্তির অন্যতম স্থপতি হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখাবে। গাজার মাটিতে শুরু হওয়া এই শান্তি প্রক্রিয়াই হয়তো হতে পারে দীর্ঘ অশান্ত এক অঞ্চলের নতুন ভোরের সূচনা।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতির বিশেষজ্ঞ
এমএসএম / এমএসএম
পুতিনের ভারত সফরে কী বার্তা পেল বিশ্ব
নৈতিক ও অস্তিত্বগত সংকটে বিশ্ব
পরিশুদ্ধ রাজনীতির পরিবেশ ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি
তারেক রহমানের প্রতিশ্রুতি ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা
জ্বালানি ব্যবস্থায় আমদানিনির্ভরতা কমাতে করণীয়
ইউরোপ আমেরিকার সম্পর্কের টানাপোড়েন
জুলাই সনদ, গণভোট ও নির্বাচন
বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের বিশ্রামাগার জরুরি
ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সচেতনতার বিকল্প নেই
ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক তারেক রহমান
তারেক রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা
গণতন্ত্র, সুশাসন এবং জনগণ