ঢাকা মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫

তিউনিসিয়ার ঐতিহ্যবাহী সাহাবা মসজিদ


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৩১-১০-২০২৫ দুপুর ১০:৪২

আফ্রিকা মহাদেশের একেবারে উত্তরে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী ছোট্ট দেশ তিউনিসিয়া। দেশটির উপকূলে অবস্থিত ইসলামের আলো ছড়ানো মসজিদ কাইরুয়ান। এ মসজিদ থেকে আফ্রিকা মহাদেশে প্রথম আজান শুরু হয়। ইসলামের আগমনি বার্তা প্রচারিত হয় সমুদ্র তীরবর্তী এ মসজিদ থেকে।
মুসলিম দিগ্বিজয়ী বীর উকবা বিন নাফে (রা.) এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। তার নামানুসারে এই মসজিদের নাম হয় উকবা বিন নাফে মসজিদ। মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রায় ১ হাজার ৩৫০ বছর আগে ৬৭০ সালে বা ৫০ হিজরিতে। তবে বিভিন্ন সময় এর সংস্করণ হয়েছে। এটি টিকে থাকার মতো স্থাপনা নির্মাণ করা হয় প্রায় নবম শতকে। প্রথম সংস্কার করা হয় আঘবালীয় রাজবংশের আমলে। জানা যায়, এই রাজবংশের রাজত্বকাল ছিল ৮০০ থেকে ৯১২ সাল পর্যন্ত। এরও বেশ পরে যোগ করা হয় মসজিদ স্থাপনার আরও কিছু অংশ। আরও বলা হয়, মসজিদটি নির্মাণ করা হয় উমাইয়া যুগে। উকবা ইবনে নাফে (রা.) নির্মাণ করেন এটি। তিনি হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর সময়ে আরব জাহানের একজন নামকরা সেনাপতি ছিলেন।
এই মসজিদ থেকে আফ্রিকা মহাদেশে প্রথম আজান উচ্চারিত হয়েছিল। তাই ইসলামের ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম। এটি সে সময়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রথম মসজিদ বলেও কথিত আছে। পরবর্তীকালে এটি ছিল সেখানের স্থাপিত অন্যান্য মসজিদের মডেল। অর্থাৎ সেদিকে প্রচুর মসজিদ নির্মাণ করা হয় এই মসজিদেরই আদলে। কারণ এর নকশা যেমন আকর্ষণীয় তেমনি মজবুত এর ভিত্তিপ্রস্তর।
উকবা (রা.) মসজিদটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, বাইরে থেকে মনে হবে একটি শক্তিশালী দুর্গ। আকর্ষণীয় মসজিদটি প্রায় ৯ হাজার বর্গকিমি আয়তনের বিশাল ভূমিতে বিস্তৃত। এতে রয়েছে একটি পরিবারের নামাজ কক্ষ আর একটা বর্গাকার মিনার।
মসজিদটিতে ৫টি গম্বুজ ও ৯টি প্রবেশ দ্বার রয়েছে। মসজিদের মেহরাবের কাছে নিচু ছাদবিশিষ্ট আরেকটি কক্ষ রয়েছে, যার নাম মাকসুরা। খলিফাদের নামাজ আদায় এবং তাদের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এই বিশেষ কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছিল। এই কক্ষের ভেতরে দাঁড়িয়ে মসজিদে অবস্থানরত মুসল্লিদের দেখা যাওয়ার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে এক জামাতে নামাজ আদায় করা যেত।
নামাজের উদ্দেশ্য ছাড়া ছোট কক্ষটিতে ঢোকার কোনো অনুমতি নেই। মসজিদের ভেতরটা বেশ গোছানো। নিরাপত্তাব্যবস্থা এখানে বিশ্বমানের কোনো ঐতিহ্যের তুলনায় কম নয়। অমুসলিম পর্যটকরা মসজিদের মূল আঙ্গিনায় প্রবেশ করতে পারেন, তবে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই। বাইরে থেকে জানালা দিয়ে নামাজ কক্ষ দেখতে পারেন এবং ছবিও তোলার অনুমতি আছে। মসজিদে প্রবেশ করতে হলে নারীদের মাথা ঢেকে যাওয়া আবশ্যক। তাই তাদের স্কার্ফ বা ওড়না পরে আসতে হয়। ২৭ হিজরিতে ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর শাসনামলে তিউনিসিয়া দেশটি ইসলামি শাসন বলয়ের অধীনে আসে। ১৯ শতকের শেষের দিকে ১৮৮২ সালে ফ্রান্স তিউনিসিয়ার ওপর হামলা চালিয়ে তা দখল করে নেয়। প্রায় পৌনে এক শতক পর্যন্ত তিউনিসিয়ার ওপর ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসন বহাল থাকে। এই দীর্ঘকাল ফ্রান্সের শাসনাধীন মরক্কো এবং আলজেরিয়া ইত্যাদি এলাকার মতো ফরাসি ভাষাই এখানকার সরকারি ভাষা হিসেবে চালু থাকে। ভাষার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপিয়ান কৃষ্টি-কালচারের প্রাধান্যও দেশটিতে বৃদ্ধি পায়। তা সত্ত্বেও আজও তিউনিসিয়ার আনাচে-কানাচে মধ্যযুগের সেই ইতিহাস, ইসলামি স্থাপত্য ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের স্মৃতি রোমন্থন এই মসজিদকে অন্য মাত্রা ও মর্যাদা দেয়।

Aminur / Aminur