ঢাকা মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫

ইসলামি সংস্কৃতির ভিত্তি বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততা


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৩১-১০-২০২৫ দুপুর ১০:৪৩

দুনিয়া ও আখেরাতের সামগ্রিক চিন্তার একটি সমন্বিত চেতনায় উদ্ভাসিত মুসলমানদের সংস্কৃতি। ইসলাম মানবজাতির সুষ্ঠু জীবনযাপনের যে নিয়মনীতি বা বিধিব্যবস্থা প্রণয়ন করে তার ব্যবহারিক দিকগুলোকে ইসলামি সংস্কৃতি বলে। অন্যভাবে বলা যায় যে, ইসলামি সংস্কৃতি বলতে সেই ভাবধারাকে নির্দেশ করে যা মহানবী (সা.) কর্তৃক প্রবর্তিত ইসলামি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ইসলামি আচার-আচরণ, জীবনদর্শন, শিক্ষা, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বোপরি মানব জীবনের সামগ্রিক ব্যবস্থায় ইসলামি পদ্ধতি অনুসারে জীবন পরিচালনা করা। মুসলমানদের অনুশীলিত ধর্মাচার, স্থানীয়, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক নিয়ম-পদ্ধতি, জীবন-প্রক্রিয়া ও ঐতিহ্যের যা কিছু ইসলামের নিয়মাবলি অনুমোদন ও প্রতিফলিত হয় সেগুলোকেই ইসলামি সংস্কৃতি বলে।
মুসলিম জাতির পরিচিত, অস্তিত্ব, স্বকীয়তা, জাতিসত্তা, স্বাতন্ত্র্য, সাফল্যÑএ সবকিছুই ইসলামি সংস্কৃতির অধ্যয়ন, অনুশীলন ও অনুকরণের ওপর নির্ভরশীল। মুসলিম জাতির সমগ্র জীবনে তাই ইসলামি সংস্কৃতির গুরুত্ব অসীম। ইসলামি সংস্কৃতির মূল ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততার ওপর, যাকে আরবিতে বলা হয় ‘ঈমান’। পারিভাষিক অর্থে, নবীজির প্রতি আল্লাহর পক্ষ হতে প্রণীত সব বিষয়ের প্রতি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা, মৌখিক স্বীকারোক্তি প্রদান এবং সে অনুযায়ী আমল করা। ইসলামি সংস্কৃতি হলো ঈমানের চূড়ান্ত পর্যায়। কেননা এখানে ইসলামের নীতি ও দর্শন বাস্তব রূপ লাভ করে। আর তাই ইসলামি সংস্কৃতি ঈমানের পূর্ণতা প্রদান করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে না।’ (সুরা বাকারা : ২০৮)
বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততা রক্ষা করা ইসলামি সংস্কৃতি চেতনার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ইসলামি সংস্কৃতি সম্পূর্ণ ঈমানভিত্তিক। আর তাই এই সংস্কৃতি মুমিনের ঈমান অক্ষুণ্ন রাখার রক্ষাকবচ। তাওহিদ, রিসালাত, আসমানি কিতাব, ফেরেশতা, আখেরাত প্রভৃতি বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন এবং ঈমান সংশ্লিষ্ট অনুশীলন এ সংস্কৃতির মূল উপাদান। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আহলে কিতাবদের কোনো দলের অনুসরণ করো তা হলে ঈমান থেকে বিচ্যুত করে তারা তোমাদের কাফির হিসেবে প্রত্যাবর্তন করাবে’ (সুরা আলে ইমরান : ১০০)। এ জন্য অমুসলিমদের সঙ্গে আমার আচরণ কেমন হবে, সেটিও ইসলামি সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ইসলামের বিশ্বাস মতে মানুষের জীবন দুটোÑদুনিয়া ও আখেরাত, পার্থিব ও পরকালীন। ইসলামি সংস্কৃতি একই সঙ্গে দুনিয়ামুখী এবং আখেরাতমুখী, একই সঙ্গে পার্থিব ও পরকালীন। ইসলামি সংস্কৃতিতে দুনিয়ার জীবনকে উপেক্ষা বা অবজ্ঞা করা হয়নি বরং যথার্থ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আখেরাতের জীবনকে বলা হয়েছে মূল বিবেচ্য বিষয়। এভাবে ইসলামি সংস্কৃতি অনুশীলন ও অনুকরণের মাধ্যমে ঈমানদাররা অর্জন করে পার্থিব সাফল্য ও পরকালীন মুক্তি।
ইসলামি সংস্কৃতি মহান আল্লাহর বাণী ও রাসুল (সা.)-এর জীবনাদর্শভিত্তিক। এর প্রধান উৎস হলো কুরআন ও সুন্নাহ। তাই এই সংস্কৃতির অনুশীলন বলতে বোঝায় আল্লাহর নির্দেশ পালন ও রাসুল (সা.)-এর জীবনাদর্শের অনুশীলন। এটি অনুশীলনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ও রাসুল (সা.)-এর প্রতি ব্যক্তির আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং তাঁদের ভালোবাসা লাভ করা যায়। আল্লাহ বলেন, ‘মুহাম্মদ,  আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহর ভালোবাসা চাও তা হলে আমাকে অনুসরণ করো’ (সুরা আলে ইমরান : ৩১)। নবীজির আদর্শ এড়িয়ে কেউ আধুনিক হতে পারে না। ইসলামকে উপেক্ষা করে কেউ আধুনিক হতে পারে না।
সংস্কৃতি জাতির পরিচিতির প্রতীক। ইসলামি সংস্কৃতিতে মহান আল্লাহ তায়ালার বিধিবিধান ও রাসুল (সা.)-এর পরিচালিত জীবনব্যবস্থা অনুসারে পরিচালিত হয়। এগুলো ব্যতীত কোনো মুসলিম যদি অন্য কোনো জাতির সংস্কৃতি অনুসরণ করে তা হলে সে মুসলিম থাকে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুসরণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (মুসনাদে আহমদ)
আর তাই ইসলামি সংস্কৃতি হলো মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্ব রক্ষার প্রধান উপায়। সুতরাং বলা যায় যে, মুসলিম জাতির জীবনে ইসলামী সংস্কৃতি এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যা পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ এবং মুক্তি লাভ করতে পারবে।

Aminur / Aminur