ঢাকা মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫

মানুষের আত্মার প্রকার


ডেস্ক রিপোর্ট  photo ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ৩-১১-২০২৫ দুপুর ১১:৩৭

মানুষের মন বা আত্মা অনেক প্রকার। কুরআনে ‘নফস’ বা আত্মার তিনটি স্তর বর্ণিত হয়েছে—১. নাফসুল আম্মারাহ : যে আত্মা মানুষকে পাপে প্ররোচিত করে (সুরা ইউসুফ : ৫৩)। ২. নাফসুল লাওয়ামাহ : যে আত্মা ভুলে অনুতপ্ত হয় (সুরা আল-কিয়ামাহ : ২)। নাফসুল মুতমাইন্নাহ : যে আত্মা আল্লাহর স্মরণে প্রশান্ত হয় (সুরা আল-ফজর : ২৭)। কুরআনের এসব আয়াত মানুষের অন্তর, বিবেক ও আত্মার গভীর জগতে আলো ফেলে। 
কুরআনের সুরা কিয়ামাহ শুরু হয়েছে কেয়ামতের বাস্তবতা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে। প্রথম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা কসম করেছেন কেয়ামতের দিনের, আর দ্বিতীয় আয়াতে কসম করেছেন ‘নাফসুল লাওয়ামাহ’-এর, সেই আত্মার, যে অন্যায় করলে নিজেকে ধিক্কার দেয়। 
‘নাফসুল লাওয়ামাহ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ এমন আত্মা, যে নিজের দোষ বুঝে অনুতপ্ত হয়, পাপ করলে অন্তরে কষ্ট অনুভব করে। এটি সেই জাগ্রত আত্মা, যা ভালো-মন্দের পার্থক্য বোঝে এবং ভুল করলে নিজেকে প্রশ্ন করে, ‘আমি কেন এমন করলাম?’—এই আত্মাই মানুষের বিবেক, যা আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত। ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘নাফসুল লাওয়ামাহ হলো সেই আত্মা, যা তার প্রতিটি কাজের হিসাব করে; ভালো করলে আনন্দিত হয়, মন্দ করলে অনুতপ্ত হয়।’ অন্যভাবে বললে, এটি সেই অন্তরের কণ্ঠস্বর, যা মানুষকে তওবার পথে ফিরিয়ে আনে।
আল্লাহ তায়ালা কেন এমন আত্মার শপথ করেছেন? কারণ এই আত্মাই কেয়ামতের সাক্ষ্য বহন করে। মানুষের ভেতরে যদি কোনো বিচারবোধ না থাকত, তবে কেয়ামতের ধারণা অর্থহীন হতো। কিন্তু প্রতিটি মানুষই অন্তরে অনুভব করে—অন্যায় করলে অনুশোচনার আগুন জ্বলে ওঠে, যা মনে করিয়ে দেয় যে প্রতিটি কাজেরই জবাব কোথাও না কোথাও দিতে হবে। এই অভ্যন্তরীণ ধিক্কারই প্রমাণ করে, মানুষের ভেতর জবাবদিহিতার বোধ আছে, আর সেটিই কেয়ামতের বাস্তবতার ইঙ্গিত।
এই আয়াতে দ্বিতীয় স্তরের আত্মার কথা বলা হয়েছে—সংগ্রামী আত্মা, যে কখনো ভুল করে, কিন্তু আবার তওবা করে ফিরে আসে। যতক্ষণ মানুষ নিজের ভুলে অনুতপ্ত হয়, ততক্ষণ সে ঈমানের পথে আছে। কারণ আত্মার ধিক্কারই মানুষকে আল্লাহর দিকে টেনে আনে।
আজকের সমাজে এই আত্মধিক্কার প্রায় নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই অন্যায় করেও অনুতপ্ত হয় না, ফলে হৃদয় কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ এই অনুশোচনাই ঈমানের প্রাণশক্তি। তাই আয়াতটি আমাদের শেখায়—আত্মার ধিক্কারকে মূল্য দাও, বিবেককে জাগ্রত রাখো। অনুশোচনাই হলো তওবার সূচনা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে ফিরে আসার প্রথম ধাপ। 
‘নাফসুল লাওয়ামাহ’ আল্লাহর এক মহান অনুগ্রহ। এটি সেই আলোকিত চেতনা, যা মানুষকে অন্যায় থেকে ফেরায় এবং পরকালের জবাবদিহিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যে আত্মা ভুলে নিজেকে ধিক্কার দেয়, সে-ই প্রকৃত জীবিত আত্মা আর তার ভেতরই কেয়ামতের প্রমাণ নিহিত।

Aminur / Aminur