ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

রোগ প্রতিরোধে দরকার হার্ড ইমিউনিটি: ভ্যাকসিনের বিকল্প নেই


অধ্যাপক ডা. (লে. কর্নেল) সরদার মাহমুদ হোসেন photo অধ্যাপক ডা. (লে. কর্নেল) সরদার মাহমুদ হোসেন
প্রকাশিত: ১৬-১০-২০২১ দুপুর ১:৫৩

একটা গল্প দিয়েই শুরু করি। যদিও বিজ্ঞানে গল্পের স্থান সীমিত। আর আমাদের অভিজ্ঞতার সমন্বয় হতে থাকে প্রতিকুলতার মাঝে। তখন ছাত্র আমি। সত্তরের শেষের দিকে মেডিসিনের একজন প্রফেসর গল্পচ্ছলে বললেন-“শুনবি, পঞ্চাশের দশকে ডাইরিয়ার চিকিৎসায় আমরা স্যালাইন বা পানি দিতাম না। তখনকার ধারনা ছিল, শরীর যত পানি পাবে তত বেশী পায়খানা হবে”। ডাইরিয়ার নাম ছিল ওলা বিবি। কেউ কেউ বলত বেদ বমি। বহুত মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল এই ওলা বিবি।

সে সময়ের আতঙ্কের আরেক নাম ছিল গুটি বসন্ত। যথাযথ ভ্যাকসিনের কারণে পুরো পৃথিবী থেকে গুটি বসন্ত নাই হয়ে গেছে । আমরা জলাতঙ্ক রোগের কথা অনেকেই জানি। এক সময় এর প্রকোপ বেশ দেখা যেত। পাগলা কুকুরে কামড়ে দিলে এ রোগের আক্রমন হয়-প্রথম দিকে এর যে ভ্যাকসিন বের হলো- নাভির চারপাশে ১৪ দিনে ১৪টি নিতে হত। বেশ বেদনাদায়ক। তাতেও শতকরা একশত ভাগ নিশ্চয়তা ছিল না প্রতিরোধের। সেই ভ্যাকসিন এখন সহজতর থেকে সহজতর করে বিজ্ঞান আমাদের উপহার দিয়েছে। শুধু কুকুর কেন, বিড়াল কিংবা বন্য প্রাণী কামড়ালেও জলাতঙ্ক হতে পারে যদি প্রাণীটি রোগাক্রান্ত হয়ে থাকে। আর আক্রান্ত মানুষ পিপাসায় ছটফট করতে করতে মারা যায়। কারণ পানি পান তো দূরের কথা, দেখলেও তার গলায় প্রচন্ড খিচুনি এবং ব্যথা হয়। আর উন্নয়নশীল বিশ্বে বাংলাদেশেই এক সময় শিশু মৃত্যুর প্রধান কারন ছিল ডিপথেরিয়া, পারটুসিস, টিটেনাস, যক্ষা, পলিও, ইনফ্লুয়েনজা ইত্যাদি। আল্লাহর অশেষ রহমতে ইপিআই (ঊচও) এর ভ্যাকসিন কার্যক্রম মূলতঃ বেশিরভাগ রোগকে নিয়ন্ত্রণ করেছে সফলভাবে। এগুলো আর মহামারী আকারে দেখা যায় না। শিশু এবং প্রসূতির গর্ভকালীন টিটেনাস নিঃসন্দেহে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।

এবার আসা যাক নোভেল করোনা ভাইরাসের কথায়। হঠাৎ করেই ২০১৯ এর ডিসেম্বরে চিনের উহানে এই ভাইরাসকে সনাক্ত করা হলো। বর্তমান বিশ্বে ব্যবসা-বানিজ্য ও যোগাযোগ সহজতর হওয়ায় বিশ্বমহামারীর এ ভাইরাস বিভিন্ন দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো। প্রথমে পুরো বিশ্ব এর ব্যাপকতা বুঝতে সময় নেয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা তৎপর হয় দ্রুত। গবেষণা শুরু হয় বিভিন্ন পর্যায়ে। করোনা ভাইরাস মহামারিতে বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়ে। অর্থনৈতিক মন্দা, ব্যবসা-বানিজ্যে অচলাবস্থা যেন নিত্যদিনের সংগী হয়ে উঠে। আর এ ভাইরাস সংক্রমনে লোকের ভোগান্তি, অর্থের অপচয়, মৃত্যু যেন নিত্য দিনের ছায়াসংগী। বিগত ০১ এপ্রিল ২০২১ করোনা আক্রমনে বাংলাদেশ বিপর্যস্ত হয়। কোন এক পর্যায় দৈনিক মৃত্যু গড়ে ২০০জন অতিক্রম করে। করবস্থান গুলো ভরে উঠে দ্রুত। মানুষের মধ্যে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ কোটি, ৫০ লক্ষ্যের অধিক, মৃত্যু ৪৮ লক্ষাধিক, সুস্থ হয়েছে সোয়া ২১ কোটি মানুষ। অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো হলেও এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫,৫৭,৯৬৪, সুস্থ হয়েছে ১৫ লক্ষাধিক আর মৃত্যু হয়েছে ২৭,৫৭৩ জনের। প্রতি একশত বছরে বিশ^ এক একটা বিশ্ব মহামারীর মোকাবিলা করছে। কিন্তু এবারেরটার জন্য আমাদের প্রত্যেকের অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নিলে এবং আল্লাহর দেয়া জ্ঞান বিজ্ঞানের পথ ধরে না হাঁটলে বিশ্ব বিপর্যয়ের মুখে পরতে বাধ্য। 

সে জন্যই বিজ্ঞানিরা বিভিন্ন পর্যায়ে তোড়জোড় শুরু করে কার্যকর ভ্যাকসিন আবিস্কারের জন্য। কোন কোন কোম্পানি আশ্চর্য্য দ্রুততার সাথে সফল ট্রায়াল শেষ করে ভ্যাকসিন বাজারজাত করতে পেরেছে। এদের মধ্যে ফাইজার, মডার্ণা, অক্সফোর্ড ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। যেহেতু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানী “অংঃৎধমবহবপধ” কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন অতউও২২২ তৈরী এবং বাজারজাত করছে এবং এটা আমাদের দেশেও ব্যবহার করা হয়েছে সবার প্রথমে তাই এই ভ্যাকসিন সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। যদিও আরো অনেক ধরনের ভ্যাকসিন বর্তমান টিকাদান প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের সেলে প্রোটিন লেগে থাকে আর তাই সে মানুষের সেলে প্রবেশ করতে পারে। এই ভ্যাকসিনটি ৮২.৪% কার্যকরী যদি ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে দু’টি ডোজ দেয়া হয়। গবেষকরা করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন এডিনোভাইরাসের সাথে মিশিয়ে দেয়। এডিনোভাইরাস কেবল মাত্র সাধারণ ফ্লু করার ক্ষমতা রাখে। যদিও বিজ্ঞানীরা পরিবর্তিত সিম্পাঞ্জি এডিনোভাইরাস (ঈযঅফঙী১) ব্যবহার করেছেন। সুবিধা হলো এ ভাইরাস মানুষের সেলে প্রবেশ করতে পারে কিন্তু সংখ্যায় বাড়তে পারে না। এবং এর শক্ত প্রোটিন কোট (ঈড়ধঃ) তার ভিতরের জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালকে রক্ষা করে। এডিনোভাইরাস শরীরে প্রবেশ করালে সংখ্যায় না বাড়লেও তারা করোনা ভাইরাস প্রোটিন চিনতে পারে এবং পর্যায়ক্রমে করোনা ভাইরাসকে প্রতিরোধের শক্তি সঞ্চয় করে।

কাজেই বাতাসে যে সব কথা ভ্যাকসিনকে নিরুৎসাহিত করার জন্য কখনো কখনো শোনা যায় তাতে কান দেয়া ঠিক হবে না। ইসলামেও কিন্তু যে কোন বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে শুধু ধারনার বশবর্তী হয়ে কোন কথা না বলতে বলা হয়েছে। ভ্যাকসিনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, যেমন শরীর ব্যথা হতে পারে, সাথে জ্বরজ্বর ও মাথা ব্যথা। জ্বর সামান্য বেশীও হতে পারে। যেমন কারো করো সামান্য মাথা ব্যথা ও পিপাসা হয়। এমন কোন ভ্যাকসিনকি আমরা দেখেছি বা জানি যার পার্শ¦প্রতিক্রিয়া নেই? ছোট বাচ্চাদেরও যে ভাকসিন দেই- তাতেও ব্যথা ও জ্বর হয়। চিকিৎসা সাধারণ, প্যারাসিটামল এবং প্রয়োজনে বিশ্রাম। তবে জীবননাশী পার্শপ্রতিক্রিয়ার কথা কালে ভদ্রে শোনা গেলেও সঠিক কারণ নিশ্চিত করা হয়নি।

এবারের বিশ্বমহামারী সাহসাই যে শেষ হবে এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। এর মাঝেই আমাদের সুস্থভাবে বাঁচার জন্য রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাইতো প্রশ্ন এলো টিকার। যদি আমরা সারা দেশের মানুষের শতকরা ৮০ ভাগকে টিকা দিতে সমর্থ হই তাহলে আমাদের হার্ড ইমিউনিটি (ঐবৎফ ওসসঁহরঃু) তৈরী হবে। তখন রোগ বিদায় না হলেও নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে। আর রোগ নিয়ন্ত্রন মানে হাসপাতালে সহনীয় চাপ, কলকারখানা চলবে, ব্যবসা-বানিজ্য গতি পাবে, বৈশ্বিক চলাচল শুরু হবে। আমরা তখন অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক সুস্থ জীবনে চলে আসবে জাতি। কে না তা চায়। চলুন না ----- সবাই মিলে করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন গ্রহন করি। সরকারের এ সঠিক উদ্যোগে আমরা সবাই সহযোগী হই এবং টিকা কর্মসূচীকে সাফল্যমন্ডিত করি।

এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া