ঢাকা বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫

মৎস্য আহরণে পাইকগাছার জেলেদের সুমুদ্রে যাত্রা শুরু

জীবনের ঝুঁকি ও ঋণের বোঝা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা জেলেদের


শেখ সেকেন্দার আলী, পাইকগাছা  photo শেখ সেকেন্দার আলী, পাইকগাছা
প্রকাশিত: ২৭-১০-২০২১ দুপুর ২:৩৩

খুলনার পাইকগাছায় জীবনের ঝুঁকি ও ঋণের বোঝা নিয়ে মাথায় নিয়ে মৎস্য আহরণ করতে সুন্দরবনে যাচ্ছে জেলেরা। করোনায় মানবতার জিবন যাপন করতে থাকা জেলেরা সুন্দরবনে মৎস্য আহরণকে ঘিরে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে তারা। ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় জিবনের মায়া ত্যাগ করে আগামী ১লা নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে দুবলার চরের শুটকি মৌসুম। তাই শেষ মুহুর্তের ব্যস্ততায় উপকূলের জেলে-মহাজনেরা। সাগরে যেতে যে যার মত প্রস্তুত করছেন জাল, দড়ি, নৌকা-ট্রলার। কেউ কেউ গড়ছেন নতুন ট্রলার, আবার কেউ পুরাতনটিকে মেরামত করে নিয়েছেন। প্রস্তুতি অনুযায়ী অনেকেই আগেভাগেই রওনা দিচ্ছেন যে যার মত।
উপজেলার বিভিন্ন নদী পলি জমে ভরাট হওয়ায় শুধুমাত্র সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে ও নানা প্রতিকূলতায় ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারেনি উপজেলার জেলে পরিবারগুলো। বরং দিন দিন তাদের অবস্থার অবনতি ঘটেছে। ক্রমবর্ধমান ক্ষতির মুখে ইতিমধ্যে পুঁজি ও জাল-নৌকা হারিয়ে পেশা হারিয়েছেন অনেকে। আবার অনেকে চড়াহারে মহাজনদের সুদের মাশুল গুণে এ পেশায় টিকে থাকার জন্য কঠোর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার বোয়ালিয়া, হিতামপুর, মাহমুদকাটী, নোয়াকাটি, কপিলমুনি, কাটিপাড়া, রাড়ুলী, শাহাপাড়া, বাঁকাসহ বিভিন্ন গ্রামের জেলে পল্লী থেকে অন্তত আড়াই’শ ট্রলার সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য যাত্রা শুরু করেছে।

জানা গেছে, ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা শুটকি পল্লীর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে মগ বা সন্দীপ ও চট্রগ্রামের উপকূলীয় জেলেরা সুন্দরবনের চরে অস্থায়ী বাসা তৈরি করে মৎস্য আহরণ করতো। আশির দশক থেকে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ফিরোজপুর, বরগুনা ও পটুয়াখালীর জেলেরা সুন্দরবন এলাকায় শুটকির জন্য বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায় মৎস্য আহরণ শুরু করেন। সেই থেকে নানান প্রতিকূলতার মধ্যে জেলেরা মৎস্য আহরণ করে আসছে। ডাঙ্গায় বাঘ, জলে কুমির-হাঙ্গর, বনদস্যু-জলদস্যুর উৎপাত ও বনরক্ষীদের হয়রানির মধ্যেও তাদের পেশা টিকিয়ে রেখেছেন।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ৭ হাজার ৩২৫ জন শুটকি পল্লীর জেলেদের কাছ থেকে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮১৯ টাকা বনবিভাগ রাজস্ব আদায় করেন। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৭ হাজার ৭৮৭ জন শুটকি পল্লীর জেলেদের কাছ থেকে ২ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪৮ টাকা সরকারিভাবে আদায় করা হয়েছে। যা বিগত বছরের তুলনায় বেড়ে ২৭ লাখ টাকারও বেশী রাজস্ব আদায় হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। এবারও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সমপরিমাণ কিংবা তার চেয়ে বেশী রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে বলে বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

সরকার ও বনবিভাগের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা, সুন্দরবনের দস্যুমুক্ত করায় ও বনবিভাগের অসাধু সদস্যদের হয়রানি কিছুটা বন্ধ হওয়ায় এবং নজরদারি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবন ও উপকূলীয় শুটকি পল্লী থেকে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার এলাকার প্রায় ২ শতাধিক বহরদার নৌকা নিয়ে সুন্দরবন থেকে মৎস্য আহরণ করে থাকেন। তার মধ্যে অনেকেই চড়া সুদে ঋণ নিয়ে গেছে বলে জানান জেলেদের পরিবার। অথচ তফশীলি ব্যাংক থেকে জেলেদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করার কথা থাকলেও বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেওয়ায় তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। 

জেলে পল্লীর বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছর আমরা বিভিন্নভাবে ঋণ করে সমুদ্রে যাই। সরকারিভাবে আমরা তেমন কোন সাহায্য সহযোগীতা পাই না। সুন্দরবনে জলদস্যু-বনদস্যুর উৎপাত ও মুক্তিপণ আদায়সহ আসাধু বনরক্ষীদের দৌরাত্ম্য কিছুটা বন্ধ হলেও এখনও সীমাহীন সমস্যায় জর্জরিত আমরা।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা প্রতিবছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র থেকে মাছ ধরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব সরকারকে দেই। কিন্তু আমরা সহজ শর্তে কোন ঋণ পাই না। জেলেদের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণসহ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।

এ বিষয়ে সেভ দ্যা সুন্দবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, সুন্দরবন আমাদের প্রকৃতিক রক্ষা কবজ। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মায়ের মত আগলে রেখেছে। কিন্তু আমাদের লোভের বলি হয়ে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ এ বন। এ বনকে রক্ষা না করলে আগামীতে এ এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে বিপন্ন হতে পারে। এজন্য বনের বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম রক্ষায় সরকারি বেসরকারিভাবে সকলকে সমান উদ্যোগ গ্রহণ করে এগিয়ে আসতে হবে। জেলেরা যাতে বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করে শুটকির জন্য মৎস্য আহরণ করতে পারে সেজন্য বনবিভাগের ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য তিনি সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের দাবি জানান।

 

এমএসএম / এমএসএম

টেকনাফে আপত্তি জানিয়ে মুছে ফেলা হলো ‘জেন্ডার সমতা’ গ্রাফিটি

চৌগাছায় এক মাদকে বিক্রেতাকে ভ্রাম্যমান আদালতের জেল জরিমানা

চৌগাছায় থানা পুলিশ চুরি যাওয়া ৪টি গরু উদ্ধারের

চিলমারীর চরে স্বপ্ন বুনছেন হাজারও ভূমিহীন কৃষক

সাবেক এমপির ঘনিষ্ঠদের দখলে হাতিয়ার তমরদ্দি ঘাট

কুলাউড়ায় ফুটপাত দখলমুক্তের চেষ্টা ব্যর্থ, ভোগান্তি অব্যাহত

পঞ্চগড়ে প্রশিক্ষনে না থেকেও ভাতা নেওয়ার অভিযোগ শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে

কুড়িগ্রামে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ইফতার ও দোয়া মাহফিল

কেশবপুরে আআগরহাটি ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল

নিউমার্কেট মাছ বাজার স্থানান্তরে ব্যবসায়ীদের আপত্তি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে ৯ শিক্ষক ও ২৮৯ শিক্ষার্থী বহিষ্কার।

কাউনিয়া হারাগাছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে শিল্পপতি ভরসা পরিবারের ইফতার মাহফিল

শিবগঞ্জে আগুনে পুড়ল দুই ঘর-গরু, ৫ লাখ টাকার ক্ষতি