ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

মরণ নেশা মাদক নির্মুলে সরকারকে আরো কঠোর হওয়া দরকার


এম.এ.কাদের photo এম.এ.কাদের
প্রকাশিত: ২৭-১০-২০২১ দুপুর ৪:০

মরণ নেশা মাদকের ছোবল থেকে পরিবার, সমাজ, জাতি, দেশ ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য, মাদককে সবাই না বলি। সারাদেশে মাদক পাচারকারী চক্রের শক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে উঠার কারনে দিন দিন মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারের পাঁচটি সংস্থা মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা জমা দিয়েছে তা পর্যালোচনা করে ১৪ হাজার মাদক ব্যবসায়ীর সন্ধান পাওয়া গেছে।

এরমধ্যে সারাদেশে মাদকের গডফাদার রয়েছেন ৯০০ শতাধিক। শুধু রাজধানীতে আছেন ৩৭ গডফাদার। মাদকের বেশিরভাগ গডফাদার দুবাই, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছেন। চিহ্নিত গডফাদাররা গা-ঢাকা দিলেও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ‘হোম ডেলিভারি’ হচ্ছে বিভিন্ন মাদক। মাদক ব্যবসায় ব্যবহার করা হচ্ছে সুন্দরী টিনএজ মেয়েদের। বিশেষ করে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে বানের জলের মতো  মরন নেশা ইয়াবা এদেশে ঢুকছে। বর্তমানে দেশে মাদক সেবনকারীর সংখ্যা প্রায় ৭৫ লক্ষ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫%(পাঁচ-শতাংশ)। মাদক সেবনকারীরা প্রতিদিন এই মাদকের পেছনে যে পরিমান অর্থ ব্যয় করছে তার বাজার মুল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা, যা বছরে বেড়ে দাড়াচ্ছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখিত অপচয় কমানো গেলেই ঐ টাকা দিয়ে প্রতি বছর পদ্মাসেতুর মত ২টি সেতু বাস্তবায়ন করা সম্ভব। ক্ষমতাধর চোরাকারবারীরা দেশের বিভিন্ন সীমানা দিয়ে বিশেষ করে ভারত ও মায়ানমার থেকে চোরাই পথে শক্ত নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে মদ, গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন, ফেন্সিডিল, আফিম, আইস, এলএসডি, ডিএমটি, কোকেন, এনপিএস, ম্যাজিক মাশরুম সহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ংকর মরন নেশা আমদানী করে দেশের অভ্যন্তরে হাজার হাজার মাদকদ্রব্য বিক্রয়ের আখড়া গড়ে তুলেছে। মাদকদ্রব্য সহজপ্রাপ্য হওয়ায় যেখানে সেখানে বিশেষ করে বস্তি, পানের দোকান, চায়ের দোকান, মুদি-দোকান, ঔষধের দোকান, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, ওভার-ব্রীজ, আন্ডার-গ্রাউন্ড বাইপাসে অহরহ বিক্রি হচ্ছে। বাহন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিছু কুরিয়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, মানুষের পেট, সবজির গাড়ী, প্রাইভেট গাড়ী সহ বিভিন্ন যানবাহন।

মাদক সেবনকারীদের অধিকাংশই তরুন , গার্মেন্টস শ্রমিক, গাড়ীচালক ও হেলপার, স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী ও ধন্যাঢ্য। ইদানিং চোরাচালানের সাথে জড়িত দরিদ্র শিশু ও মহিলারাও মাদকদ্রব্য সেবন করছে। মাদক সেবনে ড্রাইভারের বেপরোয়া গাড়ী চালানোর কারনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষের জীবনহানী ঘটছে। ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ, জাতীর ভবিষ্যৎ। নেশার টাকা জোগাড়ের  জন্য বৃদ্ধি পাচ্ছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন এর মত জঘন্য কর্মকান্ড। চরম উৎকন্ঠার মধ্যে ভুগছে অভিভাবক মহল। নেশাগ্রস্থ সন্তানের এলামেলো চলাফেরা, অসংলগ্ন কথাবার্তা পিতামাতা অভিভাবক মহল যখন বুঝতে পারে তখন আর  কিছুই  করার থাকে না। এদিকে নেশার টাকার জন্য বাড়ীতে চলে ভাংচুর, মুল্যবান জিনিস গোপনে বিক্রি। লেখাপড়ায় অমনোযোগী হওয়ার কারণে প্রথমে রেজাল্ট খারাপ, শেষে বন্ধ হয়ে যায় পড়াশুনা। 

মরন নেশা শহর হতে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তার লাভের কারনে সহজে নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। এই চরম সত্যটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপলব্ধি করে মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছেন।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপরাধী যে দলেরই হোক, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। কারো মুখের দিকে চেয়ে নয়, বরং মাদক, জঙ্গি, নারী নির্যাতন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। গত কিছুদিন মাদক বিস্তার অনেকটা কমে আসলেও বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না, আবার যেন নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মাদক ব্যবসায় লাভের পরিমান অনেক গুন বেশি হওয়ায়, মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়েও এই ব্যবসা ছাড়তে পারছে না। মাঝে মাঝেই শোনা যায় লক্ষ লক্ষ পিছ ইয়াবা ও ভয়ংকর আইস, এলএসডি, ডিএমটি, কোকেন, এনপিএস, ম্যাজিক মাশরুম ধরা পড়ছে।  মাদক নির্মূলে ছোট খাট কিছু ব্যবসায়ী নির্মুল করা গেলেও গডফাদারদের তেমন কাউকে ধরা সম্ভব হয়নি। মাদকে জড়িত গডফাদারদের নির্মূল করা না গেলে দেশ থেকে মাদক বিস্তার রোধ করা আদৌও সম্ভব নয়। বেশ কিছু দিন ধরে ধড়পাকড়ের জোরালো ভূমিকা না থাকায়, পলাতক মাদক ব্যবসায়ীরা আবার নিজ স্থানে  তৎপরতা শুরু করেছে। তাছাড়া যারা প্রতিহত করবে তাদেরই কিছু অসাধু ব্যক্তি মাদক ব্যবসায়ীদেরকে সহযোগিতা করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাদক নির্মূলের ভুমিকা সারাদেশে দলমত নির্বিশেষে প্রসংশিত হয়েছে।  

মাদক নির্মূল অভিযানে দেশের ৯৫% মানুষের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও, মাদক নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না কেন, এটা ভেবে দেখার দরকার। সন্ত্রাস দমনের মতো সরকারকে এ ব্যাপারেও কঠিন ভূমিকা নিতে হবে। মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত যে দলেরই হোক না কেন, মাদকের ভয়াবহতা নির্মূল করার জন্য সরকারকে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে মাদক ব্যবসায়িদের নাম ঠিকানার তালিকা প্রকাশ করতে হবে, যাতে সামাজিক ভাবে মানুষ তাদেরকে ঘৃণা ও প্রতিরোধ করতে পারে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে বেশীর ভাগ প্রভাবশালীরাই এই ব্যবসার সাথে জড়িত অথবা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এই ব্যবসার বিস্তার লাভ করছে। যোগানদাতা  ও গডফাদারদের দেশ, জাতির শত্র“ হিসাবে চিহিৃত করে স্বল্প সময়ে বিচার করে মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করতে হবে।

সেবনকারীদের চিকিৎসার জন্য সরকারী ভাবে নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। দেশে ৭৫ লক্ষ মাদক সেবনকারীদের চিকিৎসার জন্য সরকারী নিরাময় কেন্দ্র আছে মাত্র ৫টি, প্রয়োজনের তুলনায় এটা একেবারেই অপ্রতুল। চাহিদা মাফিক মাদক নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে এবং মাদকসেবীদের সরকারী উদ্যোগে নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসায় ব্যবস্থা করতে হবে। সাথে সাথে কাউন্সিলিংয়েরও ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোন ভাবেই যেন মাদকদ্রব্য দেশে ঢুকতে না পারে তার জন্য বিশেষ বাহিনী র‌্যাবকে দায়িত্ব দিতে হবে। মাদক নির্মূলে পরীক্ষিত সৎ লোক দিয়ে বিশেষ বাহিনী তৈরি করে সাদা পোশাকে অভিযান পরিচালনা করলে মাদকের সাথে জড়িত প্রভাবশালী, গডফাদারদের তৎপরতা অনেকাংশে বন্ধ হয়ে যাবে। ইদানিং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদকের ভয়াবহতা অনুধাবন করে প্রশাসনকে কঠোর হতে বলেছেন। মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া, ও জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সরকার অনুমোদিত মদ বিক্রির কেন্দ্র, বার, মদ পানের অনুমোদন (পারমিট) ইত্যাদি বাতিল করতে হবে। কারন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রায়ই লাইসেন্সের আড়ালে নানা অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়ে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের জনবল একেবারেই কম।

মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরকে আর ঢাল-তলোয়ার বিহীন নিধিরাম সর্দারের মতো রাখলে হবে না , জনবল বৃদ্ধির সাথে সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসাবে অস্ত্র, যানবাহন অনুসাঙ্গিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনের তৎপরতা, আন্তরিকতাই পারে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও ভারত থেকে ফেন্সিডিল আসা বন্ধ করতে। মাদকসেবীদের সরকারী ভাবে সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মাদকের ভয়াবহতা প্রচার, অভিভাবকদের সচেতনতা সৃষ্টি ও ডোপ টেষ্টের মাধ্যমে সকল চাকরীতে নিয়োগের বিধান রাখলে দেশ থেকে মাদক বিস্তার ৮০ ভাগ কমে যাবে এতে কোন সন্দেহ নাই।   

এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া