পাঠকক্ষ সংকটে জবি শিক্ষার্থীরা, দেখার কেউ নেই

প্রতিষ্ঠার ১৬ বছরে এসেও উন্মুক্ত পাঠকক্ষ সংকটে ভুগছেন দেশের স্বনাম্যধন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। পুরান ঢাকায় অবস্থিত আবাসনসহ নানা সংকটে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উন্মুক্ত পাঠকক্ষের অভাবে পড়ালেখা করতে পারছেন না ঠিকমতো। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রবেশেও বাইরে থেকে বই নেয়া নিষেধ থাকায় শিক্ষার্থীরা নিতে পারছেন না গ্রন্থাগারের সুবিধাও। শিক্ষার্থীদের এই সংকটে পাশে নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। নানান সময়ে দাবি জানিয়ে এলেও জায়গা সংকটের বাহানা ও আশার বাণী ছাড়া মেলে না আর কিছু।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানায়, দেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থী পুরান ঢাকার জনবহুল পরিবেশে মেস বাসায় বসবাস করেন। আলো বাতাসের অপ্রাচুর্যতাসহ নানা কারণে মেসগুলোতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সুযোগ নেই বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আবাসিক হল না থাকায় এ সংকট দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই শিক্ষার্থীদের মাঝে উন্মুক্ত পাঠাগারে পড়তে আসার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশকে ফিরে যেতে হচ্ছে উন্মুক্ত পাঠকক্ষে জায়গা নে পেয়ে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সুযোগ না থাকার এ অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে দিন দিন। উপরন্তু নামমাত্র উন্মুক্ত পাঠাগারগুলো ব্যবহার করা যায় খুবই অল্প সময়ের জন্য। বিভাগগুলোর কার্যক্রম শেষ হলে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পেলেও মাঝেমধ্যে কর্মচারীদের রোষানলে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বজলুর রহমান মিলনায়তনের নিচতলার একটি এবং দুইতলার দুইটি কক্ষ শিক্ষার্থীদের পড়ার জন্য খুলে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৩ টি কক্ষে পড়াশোনার ব্যবস্থা থাকায় হতাশ শিক্ষার্থীরা। জায়গা সংকটে অনেক শিক্ষার্থী বারান্দায় বসে পড়ালেখা করলেও সেখানেও অনেকের সেখানেও মিলেনা সুযোগ। পড়তে এসে জায়গা না পেয়ে হতাশা নিয়ে ঘুরে যায় অনেকে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে পড়াশোনার সুযোগ থাকলেও বাইরে থেকে বই নিয়ে যাওয়ার নিয়ম না থাকায় সেখানে যাওয়ার আগ্রহ নেই শিক্ষার্থীদের। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে চাহিদামতো বই না থাকায়ও শিক্ষার্থীদের আগ্রহ নেই তাতে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ উঠেছে জবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও। তাদের মতে, গ্রন্থাগার নিয়মের বাইরে নয় তবে জবি শিক্ষার্থীদের সংকট বিবেচনায় সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি না করলে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার কোনো কাজেই আসবেনা। নিয়মের চাপে শিক্ষার্থীরা পড়ার সুযোগ না পেলে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রতিকী অর্থে সাজিয়ে রাখার বস্তু ছাড়া আর কিছু নয় বলেই মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ ঘোষ বলেন, আমরা পড়তে চাই কিন্তু আমাদের পড়তে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের স্থায়ী রিডিং রুম প্রয়োজন কিন্তু প্রশাসন সেই ব্যবস্থা করছে না। কোনোদিন সকালে, কোনোদিন বিকালে এভাবে উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে পড়ার মনমানসিকতা থাকে না।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রিপা মনি বলেন, উন্মুক্ত লাইব্রেরি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও সবার জায়গার ব্যবস্থা নাই। রুমে জায়গা না থাকলে বাসায় ফিরে যেতে হয় নয়তো বারান্দায় পড়তে হয়। অনেক সময় তো বারান্দাতেও জায়গা পাওয়া যায় না। অথচ আমাদের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিটি বেশিরভাগ সময় ফাঁকা পড়ে থাকে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের করোনাকালীন সময় হতেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৯ টা রুমে পড়তে দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু ক্যাম্পাস খোলার পর শুধুমাত্র তিনটা রুম বিকাল তিনটার পর খুলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখন পড়বো কোথায়? কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতেও বই নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না আবার পরীক্ষা চলাকালীন উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে ঢুকতে পারছি না, এমনকি পরীক্ষা না থাকলেও রুমগুলো আমাদের জন্যে খুলে দেওয়া হচ্ছে না।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুইটি মন্ডল বলেন, আমাদের এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকার ব্যবস্থা হয় নাই, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে পড়ার ব্যবস্থা তো করতে পারে। উন্মুক্ত লাইব্রেরির রুমগুলোতে ক্লাস বা পরীক্ষা থাকলে আমাদের পড়ার জায়গা থাকে না, এভাবে ধীরে ধীরে পড়ার ইচ্ছা কমে যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক মো. এনামুল হক বলেন, গ্রন্থাগারের কিছু নিয়মকানুন থাকে। বাইরে থেকে বই নিয়ে আসলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তখন একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতেই বাইরে থেকে বই নিয়ে প্রবেশের নিয়ম নেই। তবে এখানে শিক্ষার্থীরা হ্যান্ডনোট বা শীট নিয়ে প্রবেশ করতে পারে।
শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত পাঠকক্ষের সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি অনেকদিন ধরে দেখছি শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্টে পড়ালেখা করছে। তাদের উন্মুক্ত পাট কক্ষের সংকট। আমার খুব ইচ্ছা আছে তাঁদের জন্য কিছু করার। ক্যাম্পাসে তো অনেক জায়গার সংকট। তারপরেও কোনোভাবে বিভিন্ন বিভাগের ক্লাসরুমগুলোকে বা অন্য কোনোভাবে ম্যানেজ করে শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত পাঠকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা সেটা নিয়ে ভাবছি। এজন্য আমি আলোচনা করে দেখবো। আমাদের জায়গা দিলে সেটা শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে আমরা তদারকি করতেও রাজি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, আমরা এখন শুধুমাত্র বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত লাইব্রেরি রেখেছি। সাবেকদের দায়িত্ব তো বিশ্ববিদ্যালয় নেবে না। তবুও সাবেকরা তিনটার পরে এসে পড়বে এতে তো আমরা বাঁধা দেই না। আমি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে দেখেছি শিক্ষার্থীরা সেখানে যায় না, সেখানে বই নিয়ে ঢুকতে দেয় না। আমি এই বিষয়ে কথা বলবো।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে রুমের সংকট হলে আমাকে শিক্ষার্থীরা এসে বললে আমি রুমের ব্যবস্থা করে দিবো।
এমএসএম / জামান

শিক্ষার্থীদের অধিকার ও রেজিস্টারের পদত্যাগের দাবিতে চবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ৷

সামুদ্রিক শৈবাল দিয়ে পুষ্টিকর স্যুপ উদ্ভাবন শেকৃবির গবেষকের

প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ

নজরুলকে নিয়ে যথাযথ গবেষণা হয়নি: কবির মৃত্যুদিবসে জাককানইবি ভিসি

হত্যাচেষ্টা মামলায় ডাকসু ভিপি প্রার্থী জালাল গ্রেপ্তার

জবির সিন্ডিকেটে জকসু সংবিধির প্রস্তাব গৃহীত

রুমমেটকে ছুরিকাঘাত, ডাকসু ভিপি প্রার্থী জালাল হল থেকে বহিষ্কার

ইবিতে নভেম্বরে ইকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা

ডিআইইউতে হল থেকে হাতেনাতে গাঁজা উদ্ধার, কিন্তু তদন্তে লাগবে ১২ দিন

কম্বাইন্ড ডিগ্রি দাবিতে অচলাবস্থা, উদ্বেগে বাকৃবির পশুপালন অনুষদের শিক্ষকরা

ইবিতে আ'লীগপন্থী শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

চবি মেডিকেলে প্যাথলজি বিভাগ উদ্বোধন, করানো যাবে ২১ ধরনের পরীক্ষা
