মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ জনপ্রতিনিধি লাঞ্ছিত, নির্বাহী অফিসারের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এসিল্যান্ড অফিস ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হাতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ লাঞ্ছিত হওয়ার প্রতিবাদে ও ইউএনওর অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় সদর উপজেলার জাহাঙ্গাহীরনগর ইউনিয়নের কাইয়ারগাঁও স্কুল মাঠে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রইছ মিয়ার সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সেলিম আহমদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম (মানিক), অ্যাড. শামিম আহমদ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মকবুল হোসেন, ফারক মিয়া, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইমরান শাহরিয়ার, সদর ভূমি অফিসের সহকারী তহসিলদার মো. কামাল হোসেন, এসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার আনোয়ার হোসেন এবং সদর উপজেলা কার্য়ালয়ের অফিস সহকারী সিদ্ধার্থ বাবু কর্তৃক ধোপাজান নতীর তীরে বিভিন্ন সময় অভিযানের অজুহাতে এলাকার নিরীহ ব্যাক্তিদের ওপর শারীরিক নির্যাতনসহ মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে বাড়ির ঘাট থেকে খালি নৌকা ধরে নিয়ে লাখ লাখ টাকা জরিমানাসহ এলাকার সাধারণ মানুষকে মারপিট করা হয় ইউএনও ইমরান শাহরিয়ারের নেতৃত্বে। প্রতিবাদ করতে গেলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ সাধারণ মানুষ এবং জনপ্রতিনিধিকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।

মানব বন্ধনে অংশগ্রহণ করেন ২২টি গ্রামের শতশত মানুষ জনেরা। নির্বাহী অফিসারের এমন আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ নির্বাহী অফিসারের অপসারণের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি পালণ করা হবে বলে ও হুঁশিয়ারি দেন মানববন্ধনের বক্তারা ।

উল্লেখ্য, গত ৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকেল অনুমানিক ৪টার দিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান শাহরিয়ার ও সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী তহসিলদার মো. কামাল হোসেন, এসিল্যান্ড অফিসের সদর উপজেলা অফিস সহকারী  সিদ্ধার্থ বাবু, এসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার আনোয়ার হোসেন মিলে সদর উপজেলায় অবস্থিত ধোপাজান চলতি নদীর পাশে  কাইয়ারগাঁও  এলাকায় জব্দকৃত বালু-পাথর নিলামের জন্য যান।  

ধোপাজন চলতি নদীর তীরে বারকী শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের বসতবাড়ি রয়েছে। এলাকার অনেকের নিজ মালিকানাধীন ছোট ছোট স্টিলের নৌকা নিজ বাড়ির ঘাটে  বাঁধা থাকে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্প্রতিবার দুপুর ২টার সময় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে  খালি নৌকাগুলো ধরে নিয়ে আসেন এবং উনার সাথে থাকা সহকারী তহসিলদার মো. কামাল হোসেন, সদর উপজেলা অফিস সহকারী  সিদ্ধার্থ বাবু,  এসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার আনোয়ার হোসেন মিলে এলাকার অনেক নিরীহ শ্রমিককে মারধর করেন। পরবর্তীতে ৪টি খালি নৌকা সদর উপজেলা ঘাটে নিয়ে আসেন এবং শ্রমিকদের হাতে ওঠানো নদীর পাড়ে থাকা কিছু পাথর জব্দ করে আসেন।

এ সময় এসিল্যান্ড অফিসের মো. কামাল হোসেন ও সদর উপজেলা অফিস সহকারী  সিদ্ধার্থ বাবু, এসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার আনোয়ার হোসেন মিলে কয়েকজনের কাছে নৌকা ছাড়ানোর জন্য ঘুষ দাবি করেন। তাদের দাবিকৃত ঘুষের টাকা না দেয়ায় মকবুলের ওপর কিপ্ত হয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দিয়ে ৪টি খালি নৌকার ওপর ৬ লাখ টাকা জরিমানা করানো হয়। জরিমানা পরিশোধ করে নৌকাগুলি ছাড়িয়ে নিয়ে বাড়ির ঘাটে বেঁধে রাখেন এলাকার মানুষ।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টার সময় পূর্বের জব্দকৃত পাথর নিলাম করতে গিয়ে আবার জরিমানার খালি নৌকা ঘাটে বাঁধা দেখে নৌকার মালিক খুঁজতে থাকেন ইউএনও। এ সময় নিলামের খবর শুনে নদীর ঘাটে যান কাইয়ারগাঁও এলাকার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মকবুল। তাকে দেখেই ভূমি অফিসের কামাল কাছে যাওয়ার জন্য ডাক দিলে মকবুল তাদের কাছে গিয়ে দেখতে পান আবার তাদের খালি নৌকা কেন নিজ বাড়ির ঘাটে বেঁধে রেখেছে সেজন্য গালিগালাজ করতে থাকেন ইউএন ও তার সাথে থাকা অন্যরা।

মকবুল বলেছিলেন, স্যার, এটা আমাদের বাড়ির ঘাট। এখানে না রাখলে কোথায় রাখব? এ কথা বলতেই তার ওপর বেআইনিভাবে ইউএনওসহ সাথে থাকা অন্যরা হাত তুলে মারধর শুরু করেন মকবুলকে এবং অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে আসতে চাইলে তার বড় ভাই বর্তমান জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জিজ্ঞাসা করতে গেলে তার শার্টের কলারে ধরে টেনে-হিঁচড়ে লাঞ্ছিত করা হয় কয়েকশ মানুষের সামনে।

নির্বাহী অফিসারের এমন কাণ্ড দেখে এলাকার সাধারণ মানুষ হতভম্ভ হয়ে পড়েন। এছাড়াও ওই এলাকার সাধারণ মানুষকে আরো কয়েকবার মারধর করার কথাও জানান মানববন্ধনে বক্তারা। তাই ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য নির্বাহী অফিসারের অপসারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট জোর দাবি জানান তারা।