ইটভাটায় অবৈধ কাঠ বন্ধ হোক

সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই নির্মাণ কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে ইট। আর এই ইট তৈরীর প্রধান কাঁচামাল হল কাঁদামাটি। তবে এই কাঁদা মাটিকে মজবুত ও ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তুলতে প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে জ্বালানী। যা আসে কয়লা ও কাঠ থেকে।
ইট উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। বাংলাদেশের প্রায় ৬,০০০ ইট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ইট তৈরি করে।যার জন্য ব্যাপক হারে জ্বালানীর প্রয়োজন।ইট মজবুত করতে প্রধানত জ্বালানী হিসেবে কয়লা ব্যবহার করা হয়।তবে বর্তমানে কয়লার দাম বেশি হওয়ায় খরচ কমাতে গাছ পোড়ানো হচ্ছে। এক লাখ ইট ভালো করে পোড়ানোর জন্য প্রয়োজন হয় ১৪-১৫ টন কয়লা। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা। সমপরিমাণ ইট পোড়ানোর জন্য প্রয়োজন হয় ৫৬ টন খড়ি। যার বাজার মূল্য দুই লাখ ২৪ হাজার টাকা। এতে ইট প্রস্তুতিতে খরচের হার প্রতি লাখে কমে এক লাখ ৬ হাজার টাকা।
কয়লার দুষ্প্রাপ্যতা এবং কাঠের সহজলভ্যতার কারণে কাঠের ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলেছে।ফলশ্রুতিতে উজার হচ্ছে বন।পরিবেশদূষণ রোধে সরকার ২০১২ সালে ইটভাটায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দিলেও তা কাজে আসেনি।বাংলাদেশের ইট ভাটার ২৫% জ্বালানী সরবরাহ করা হয় কাঠ থেকে।আর এই কাঠ পোড়ানোর ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পরছে। নির্বিচারে গাছ নিধন জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পরছে পরিবেশের ওপর।আগামীদিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সারা বিশ্বে যেখানে বৃক্ষরোপন ও বনায়নের দিকে বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে, সেখানে দুঃখজনকভাবে আমাদের দেশে অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক বৃক্ষনিধন দিন দিন বেড়েই চলছে।
একটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে যেখানে মোট আয়তনের ২৫% বনভূমির প্রয়োজন, সেখানে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্যসংস্থা (FAO) এর মতে আমাদের দেশে মাত্র ১৩% বন অবিশিষ্ট রয়েছে। তবে বড় বড় বনাঞ্চল থেকে কাঠ এনে এভাবে অবাধে ইটভাটায় পোড়ানো হলে অচিরেই হয়তো ধ্বংস হতে পারে অবিশিষ্ট বনাঞ্চলও। ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন গড়ে ২২৫ হেক্টর ভূমি এবং বছরে ৮২০০০ হেক্টর ভূমি নষ্ট হচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আবাসন তৈরি ও ইটভাটার জন্য মাটি সংগ্রহ করা।
নিয়ম অনুযায়ী কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও মূলত কাঠ দিয়েই ইট পোড়ানো হয় অধিকাংশ ইট ভাটাগুলোতে। একটি বড় ইটভাটায় একবারে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ ইট পোড়াতে ২২-২৫ দিন সময় লাগে। এ সময় কমপক্ষে ১১ হাজার মণ জ্বালানির প্রয়োজন।এক মৌসুমে পাঁচ-ছয়বারে ৪৫-৫০ লাখ ইট পোড়ানো সম্ভব। এ পরিমাণ ইট পোড়াতে ৬৫ থেকে ৬৭ হাজার মণ (প্রায় দুই হাজার ৭০০ মেট্রিক টন) জ্বালানি কাঠ পোড়াতে হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে মোট ইটভাটার সংখ্যা ৮ হাজার ৩৩টি। এগুলোর মধ্যে ২ হাজার ৫১৩টির পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। অর্থাৎ বেশিরভাগ ইটভাটাই অবৈধ। গড়ে প্রায় ৩ টি ইটভাটার মধ্যে একটি ইটভাটাই অবৈধ।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, হাইব্রিড হফম্যান, জিগজ্যাগ ও ভার্টিক্যাল শ্যাফট কিলন পদ্ধতির চিমনি বা পরীক্ষিত নতুন প্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। এ ছাড়া ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানী কাঠ ব্যবহার করলে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।তবে এ আইন প্রণয়ন হলেও দেখা যায় কারখানাগুলোতে অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে জ্বালানী কাঠ পোড়ানোর দায়ে অবৈধ ইটভাটা মালিকদের অর্থদন্ডের পাশাপশি সতর্ক করা হলেও ভাটা মালিকরা তা না মেনে অবাধ সবুজ বৃক্ষ উজাড় করে কাঠ পুড়িয়ে যাচ্ছেন। ২০১৩ সালের আইনের উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা। এর জন্য ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এ আইনে বলা হয়, জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা যাবে না।তবে এর বিকল্প কোনো ব্যবস্থার কথা আইনে বলা হয় নি।
দিনদিন এসব ইটভাটায় গাছ পোড়ানো বন্ধ হওয়া উচিত।ইটভাটায় জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহারকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।গাছের ব্যবহার যাতে বন্ধ হয়, এমন একটি যুগোপযোগী আইন করতে হবে।সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধের পদক্ষেপ নিতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই ফাপা এবং না পোড়ানো ইটের ব্যবহার হচ্ছে বর্তমানে।পোড়ানো ইটের ব্যবহার কমিয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ইট ব্যবহারের প্রচলন করতে হবে। বৃক্ষরোপণ প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে।
সর্বোপরি শুধু রাষ্ট্রীয় নয় ব্যক্তিপর্যায়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।ইলেকট্রনিক মিডিয়া,পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী তৈরির বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারের যথাযথ পরিকল্পনা অবৈধ কাঠ পোড়ানো বন্ধ করে পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখকঃ শারমিন জাহান সায়লা
শিক্ষার্থী,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
