বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, বাঙালি জাতির মুক্তির আলোকবর্তিকা
বাঙালি জাতির মুক্তির অনুপ্রেরণা ও আলোকবর্তিকা ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, যা বাঙালি জাতির জন্য প্রেরনার চিরন্তন দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকায় রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) ১০ লক্ষাধিক লোকের সামনে পাকিস্তানি দস্যুদের হুমকির মুখে ১৮ মিনিটের ভাষণে তিনি মোট ১১০৮ টি শব্দ চিরাচরিত ভঙ্গিতে উচ্চারণ করেন। ভাষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণার বাণীটি ছিল 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' যার মাধ্যমেই বাংলার স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে পাকিস্তানিদের শাসন শোষণের বিরুদ্ধে চারটি দাবি তুলে ধরেন; মার্শাল ল' প্রত্যাহার, সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফেরত নেওয়া, নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করণ এবং যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা; এই চারটি শর্ত দিয়ে আলোচনার পথ উন্মুক্ত রাখলেন অন্যদিকে পরোক্ষ ভাবে স্বাধীনতার ঘোষনা দিলেন এবং সবশেষে 'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়ে ভাষনটি শেষ করলেন। ভাষনের পরদিনই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার আইএসআই এর সদর দপ্তরে রিপোর্টে বলা হয়, 'চতুর শেখ মুজিব চতুরতার সাথে বক্তৃতা করে গেলেন, একদিকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেলেন, অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হওয়ার দায়িত্বও নিলেন না, নিরব দর্শকের ভূমিকা ছাড়া আমাদের কিছুই করার ছিল না।' সত্যিই ৭ ই মার্চের ভাষটি ছিল প্রকৃতপক্ষেই সুচতুর ভাষন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বিরল দৃষ্টান্ত।
ঐতিহাসিক এই ভাষণটিকে এ পর্যন্ত মোট ১২টি ভাষায় ভাষণটি অনুবাদ করা হয়েছে।১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল নিউজউইক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দিয়ে লিড নিউজে তাঁকে 'পয়েট অব পলিটিক্স’ বা ‘রাজনীতির কবি’ আখ্যায়িত করা হয় । ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের জন্যই তাকে এ উপাধি দেওয়া হয়। ফ্রান্সের প্যারিসে ২৪-২৭ অক্টোবর ২০১৭ ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সংস্থাটির আন্তর্জাতিক পরামর্শক কমিটি (IAC) বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পাঠানো ১৩০টি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল, নথি ও বক্তৃতাকে যাচাই-বাছাই করে ৭৮টি বিষয়কে সংস্থার Memory of the World Register-এ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করে। এরপর ৩০ অক্টোবর ২০১৭ UNESCO’র মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ঐ ৭৮টি বিষয়কে Memory of the World Register-এ অন্তর্ভুক্তির কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অন্যতম। এটাই UNESCO’র এ যাবৎ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ৪২৭টি প্রামাণ্য ঐতিহ্যের মধ্যে প্রথম অলিখিত ভাষণ।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ‘বিশ্ব প্রামাণ ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে UNESCO-কে প্রয়োজনীয় তথ্য ও দলিল সরবরাহ করেন ফান্সের প্যারিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. শহিদুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। এ জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ঐ স্বীকৃতির স্বপক্ষে ১০টি প্রয়োজনীয় নথি, প্রমাণপত্র ও তথ্য জমা দেয়া হয়। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে তথ্য মন্ত্রণালয়।
৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি চেয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১২ পৃষ্ঠার এক আবেদন করা হয়েছিল, যাতে এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। ঐ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করে দুই বছরের প্রক্রিয়া শেষে একে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ একটি অনিন্দ্য সুন্দর ভাষণ, বাঙালি জাতির জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা, যা নতুন প্রজন্মের প্রেরনার চিরন্তন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
লেখক: আরিফুজ্জামান রঞ্জুশিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এমএসএম / এমএসএম
জ্বালানি ব্যবস্থায় আমদানিনির্ভরতা কমাতে করণীয়
ইউরোপ আমেরিকার সম্পর্কের টানাপোড়েন
জুলাই সনদ, গণভোট ও নির্বাচন
বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের বিশ্রামাগার জরুরি
ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সচেতনতার বিকল্প নেই
ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক তারেক রহমান
তারেক রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা
গণতন্ত্র, সুশাসন এবং জনগণ
বৈষম্য ও দারিদ্র্য কমাতে সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়
গ্রামীণ ঐতিহ্য ও শীত কালীন রসদ সুমিষ্ঠ খেজুর রস
প্রতিশোধের রাজনীতি জাতির জন্য এক অভিশাপ
জলবায়ু সম্মেলন ও বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী
দেশ ও দল পরিচালনায় একই ব্যক্তি নয়
Link Copied