ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

জাতীয় শিশু দিবসে শিশুদের যত্ন আরো সম্প্রসারিত হোক


একরামুল হক বুলবুল, কুড়িগ্রাম  photo একরামুল হক বুলবুল, কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ১৭-৩-২০২২ দুপুর ১০:৪৮

আজ জাতীয় শিশু দিবস,১৯২০ সালের এই দিনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মুল স্তপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মলাভ করেছেন।তার জন্মবার্ষিকী পালনের জন্য বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে মুজিব শতবর্ষ  উদযাপন করছে। ১৯২০ সালের একটি শিশুই বদলে দিয়েছে একটা জাতিকে,এক তর্জনীতে এনেছেন বিশ্বের শক্তিশালী সাময়িক বাহিনীর হাত থেকে স্বাধীনতা,বিশ্বকে দিয়েছেন কাঁপিয়ে,দেশের ভৌগোলিক সীমানা পেরিয়ে বিশ্বমঞ্চে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা যেমন দিয়েছেন তেমনি নির্যাতিত, নিপীড়িত ও স্বাধীনতাকামী জাতির অনুপ্রানীত হয়েছেন।

 এ দেশকে তাই বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাঁড়াতে এ রকম শিশুর জন্ম দিতে হবে আর এই রকম শিশু যাতে প্রত্যেক ঘরে ঘরে জন্ম নেয় সে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম”ভালো থাক মা ও শিশু”এই উদ্দেশ্য স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের আওতায় “ স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক” সরাসরি বাস্তবায়িত "ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্যা পুওরেষ্ট(আইএসপিপি)- যত্ন প্রকল্প। দেশের সবচেয়ে অতিদরিদ্র্য ও অপুষ্টিতে ভোগা সাত জেলার ৪৩ টি উপজেলায় ৪৪৪ টি ইউনিয়নে অতিদরিদ্র্য অন্তঃসত্বা নারী,০-৬০ মাস বয়সী শিশু ও তাদের মাদের সেবা গ্রহনের বিপরীতে এ প্রকল্প নগদ অর্থ প্রদান করে।

এ প্রকল্পের অর্থ পেতে হলে উপকারভোগী মাদের তিনটি সেবা নিতে হয় যেমন-

১.অ্যান্টি-নেটাল কেয়ার (এএনসি)ঃ
বাংলাদেশে এখনো এক লাখ শিশু জন্মদিতে গিয়ে ১৬৫ জন মায়ের মৃত্যু ঘটে,৩৯ শতাংশ মা অপুষ্টিতে ভোগে তাই যত্ন প্রকল্প গর্ভবতী মা দের প্রয়োজনীয় এএনসি,জিএমপি ও সিএনসিডি প্রশিক্ষন দিয়ে থাকে।

২.গ্রোথ মনিটরিং অ্যান্ড প্রোমোশন(জিএমপি)ঃগবেষনায় প্রমানিত যে শিশুর খর্বাকায়নের পিছনে পুষ্টিহীনতা দায়ী,২০১৩ সালে ইউনিসেফের একটি জরিপ অনুযারী "মাদের নিম্ব শিক্ষার হার এবং সামাজিক ও আর্থিক সংকটের বড় সম্পর্ক রয়েছে শিশুর পুষ্টিহীনতার সাথে।দেশের ৫ বছর বয়সী শিশুর ৩৬ শতাংশ বেটে,ফলে যত্ন প্রকল্প মাসিক ও ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে শিশুদের ওজন,উচ্চতা এবং গ্রোথ পর্যবেক্ষণ করে থাকে।

৩.চাইল্ড নিউট্রেশন অ্যান্ড কগনিটিভ ডেভেলপমেন্ট (সিএনসিডি)ঃ
জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনেসেফের তথ্যমতে"শিশু জন্মের ৬ মাসের মধ্যে মস্তিস্কের অর্ধেক গঠিত হয়,এবং একটা শিশুর ৯০ শতাংশ মানসিক বিকাশ ৫ বছরের মধ্যে হয়ে যায় আর এই সময়টাতেই শিশুর বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যক উপাদান পুষ্টি,উদ্দিপনা,সুরক্ষা ও শিক্ষা অর্জনে যত্ন প্রকল্প সিএনসিডি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে যা উপকারভোগী মাদের অংশগ্রহন বাধ্যতামুলক। 
(সিএনসিডি সেশনে বাচ্ছারা)

এ প্রকল্প দেশের অন্যান্য প্রকল্পের থেকে ব্যতিক্রম কারন এখানে মা’দের সেবা গ্রহন বাধ্যতামুলক,মা সেবা নিলে অর্থ পাবে নতুবা অর্থ পাবে না।
উপরোক্ত সেবা”এএনসির” জন্য একজন গর্ভবতী মা পাবেন ১০০০ করে টাকা তাহলে গর্ভকালীন ৪ বারের জন্য পাবেন মোট ৪০০০ হাজার টাকা এবং প্রত্যেক মাসে সিএসসিডি করার জন্য পাবেন ৭০০ টাকা, পরপর তিনবার এই সেবা গ্রহন করলে বোনাস হিসাবে আরো অতিরিক্ত পাবেন ৭০০ টাকা,অর্থাৎ একজন গর্ভবতী মা সকল সেবা গ্রহন করলে প্রতি তিনমাস পর পাবেন ৪,৮০০ টাকা।

০-২৪ মাস বয়সী বাচ্ছার মায়েরা প্রতিমাসে সিএনসিডি করার জন্য ৭০০ টাকা এবং জিএমপি করার জন্য ৭০০ টাকা, পরপর তিনমাস সেবা গ্রহন করলে বোনাস হিসাবে অতিরিক্ত ১৪০০(সিএনসিডি ৭০০+জিএমপি ৭০০) অর্থাৎ প্রতি তিনমাস পর একজন মা পাবেন ৫,৬০০ টাকা।
২৪-৬০ মাস বয়সী মায়েরা প্রত্যেক মাসে সিএনসিডি করার জন্য ৭০০ টাকা পরপর তিনমাস উপস্থিত হলে বোনাস হিসাবে অতিরিক্ত ৭০০ টাকা এবং একবার ত্রৈমাসিক কিউজিএমপি করার জন্য পাবেন ১৫০০ টাকা অর্থাৎ একজন মা প্রতি তিনমাস পর পাবেন ৪,৩০০ টাকা।
উপকারভোগী মায়েদের ৬০ মাস বয়সী প্রথম বা দ্বিতীয় সন্তান,প্রথম সন্তান ও দ্বিতীয় জমজ সন্তান অথবা প্রথম জমজ সন্তান শ্রেনীবিন্যাসের ভিত্তিতে সেবা ও অর্থ পেয়ে থাকে।(টাকা হাতে মা)

এই সেবা নেয়ার জন্য একজন মা নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে থাকেন ফলে কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মপরিধি ও কর্মচাঞ্চল্যতা বহুগুনে বিস্তৃত হয়েছে এবং বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাকের সহযোগীতায় উপকারভোগীর বাড়ীর উঠানে ছোট ছোট দলে সিএনসিডি সেশন নেয়া হয় সেখানে শিশুর পুষ্টি ও মনোদৈহিক বিকাশের উপর বিশেষ প্রশিক্ষন দেয়া হয়। উপকারভোগীদের সেবা গ্রহনের উপস্থিতি ফিঙ্গার ভেইন স্ক্যানারের সাহায্যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিশ্চিত করা হয়।

উপকারভোগীদের প্রাপ্ত অর্থ প্রদানের জন্য প্রথমে ভার্চুয়ালী একাউন্ট খোলা হয় এর পর ক্যাশ কার্ড প্রদান করা হয় আর এই ক্যাশ কার্ড ও আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে প্রতি তিনমাস অন্তর পোষ্ট অফিসের ব্যবস্থাপনায় অর্থ প্রদান করা হয় যা শতভাগ ডিজিটাল,অত্যাধুনিক ও দুর্নিতিমুক্ত পদ্ধতি।দেশের হতদরিদ্র্য প্রায় ৬ লাখ মা এই প্রকল্প থেকে এই ভাবে নগদ অর্থ সহায়তা পাচ্ছে যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত উন্নত জাতিগঠনে ১০ বিশেষ উদ্যেগের অন্যতম ডিজিটাল বাংলাদেশ,শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম,নারীর ক্ষমতায়ন,সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচি, কমিউনিটি ক্লিনিক ও শিশুর বিকাশ ছাড়াও গ্রাম হবে শহর,দরিদ্র্য নির্মুল,মা ও শিশুর মৃত্যুহার হ্রাস,ডাক বিভাগের কর্মচঞ্চলতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্পুর্ন ডিজিটাল পদ্ধতিতে শক্তিশালী ”সেফটিনেট সেল” গঠনে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করছে।

যার মধ্য দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্ন, সোনার বাংলার সোনার নাগরিক ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০৪১ এ উন্নত জাতি গঠনে  মুল নিয়ামক হিসাবে ভুমিকা পালন করছে।শিশুদিবসে তাই দেশের সর্বস্তরের সচেতন মহলের দাবি,বর্তমান শিশুবান্ধব সরকারের শিশুদের সুরক্ষায় দেশের সর্ববৃহৎ এই প্রকল্প দ্রুত দেশব্যাপী সম্প্রসারণ করা এবং প্রত্যেক শিশুকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসা এবং শিশুদের সুরক্ষায় কর্মরত যত্ন প্রকল্প সহ সকল প্রকল্প কর্মীদের বিভিন্ন প্রকার বৈষম্য ও অনিশ্চয়তা দুর করে ২০৪১ সালের উন্নত জাতিগঠনের লক্ষ্যে তাদেরকে  রাজস্বখাতের মাধ্যমে সম্পৃক্ততা করা এখন সময়ের দাবি।
আর তা না হলে ব্যাহত হবে” জাতির পিতার স্বপ্ন, সোনার বাংলার সোনার মানুষ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন" ভিশন ২০৪১" এ উন্নত জাতি গঠন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সৃষ্ট দক্ষজনবলকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে এ জাতিকে মেধাশুন্য করে তলাবিহীন ঝুড়িতেই যারা রাখতে চায় তারাই শিশুদের সম্পদ না বানিয়ে বোঝা বানিয়ে রাষ্ট্রীয় অগ্রগতি স্তম্ভিত করে দিতে চায় এবং বর্তমান সরকারের সকল মহৎ কর্মসুচিকে পরিকল্পিত ভাবে  বিঘ্নতা ঘটাচ্ছে,বিভিন্ন কৌশলে  প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে শিশুদের সুরক্ষায় সকল কর্মসুচিকে আরো বিস্তৃত করতে হবে তাহলেই এ জাতি অগ্রগতির শীর্ষশিখড়ে পৌছে যাবে এই আশাবাদ আবালবৃদ্ধবনিতার।১৮ কোটি মানুষের আজ একটাই স্লোগান হউক”
শিশু দিবস দিচ্ছে ডাক
প্রত্যেক শিশু নিরাপদে থাক।

 
লেখক
মোঃ শফিকুর রহমান 
সেফটিনেট প্রোগ্রাম অ্যাসিস্ট্যান্ট(এসপিএ)
ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্যা পুওরেষ্ট(আইএসপিপি)- যত্ন প্রকল্প
মেইলঃ mpsafikul@gmail.com 

 

এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া