ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

ঐতিহ্যের আরেক নাম টাঙ্গাইল জনপদ


শিউলী আক্তার photo শিউলী আক্তার
প্রকাশিত: ২১-৩-২০২২ দুপুর ১:৪০
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জনপদ গুলোর মধ্যে টাঙ্গাইল অন্যতম একটি জনপদ। এই টাঙ্গাইলকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বহুল পরিচিত অতীত ঐতিহ্য এবং লোক-সংস্কৃতি। বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যে টাঙ্গাইল জেলার অবস্থান অনেক উঁচুতে। বলা হয়ে থাকে, "চমচম, টমটম ও শাড়ি, এই তিনে টাঙ্গাইলের বাড়ি।"
 
টাঙ্গাইলের বিখ্যাত পোড়াবাড়ির চমচমকে বলা হয় মিষ্টির রাজা। এই পোড়াবাড়ির চমচমের কথা শুনেনি এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই আছে। টাঙ্গাইল শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রামের নাম পোড়াবাড়ি। সেখানেই তৈরি হয় এই বিখ্যাত চমচম। এর কাছেই রয়েছে ধলেশ্বরী নদী। বলা হয়ে থাকে, পোড়াবাড়ির চমচম বানানোর ক্ষেত্রে ধলেশ্বরী নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ বিশেষ প্রভাব ফেলে। প্রায় দুশো বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য এই চমচম। বাংলা-বিহার ছাড়িয়ে ভারতবর্ষ তথা সারা বিশ্ব জুড়ে এই চমচমের অগাধ সুনাম রয়েছে। অতি সুস্বাদু ও লোভনীয় ছানার তৈরি এই চমচম মিষ্টির ভেতরের অংশ খুবই রসালো এবং নরম। বাইরে থেকে দেখতে লালচে পোড়া ইটের রঙের মতো। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই চমচম তৈরি করা হলেও, এর আসল স্বাদ একমাত্র টাঙ্গাইলেই পাওয়া যায়। চমচমের প্রথম কারিগরের পরিচয় জানা না গেলেও ধারণা করা হয়, যশোরথ হালই নামক কারিগর এই বিখ্যাত চমচমের স্রষ্টা। এই চমচমের অসাধারণ এবং স্বাতন্ত্র‍্য বৈশিষ্ট্যই বিশ্ববাজারে টাঙ্গাইল জেলাকে সুপরিচিত করেছে।
 
বাংলাদেশের ঐতিহ্যের তালিকায় টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্পের কোনো জুড়ি নেই। এর ইতিহাস অতি প্রাচীন। দেশের সর্ববৃহৎ কুটির শিল্প হিসেবেও এর অসামান্য খ‍্যাতি রয়েছে। টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্প আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বাহক। জানা যায়, বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা এবং হিউয়েন সাং এর ভ্রমণ কাহিনীতেও টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্প স্থান পেয়েছে। টাঙ্গাইল জেলার নামানুসারেই এই শিল্পের নামকরণ করা হয়। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি পৃথিবী বিখ্যাত। বর্তমানে এই তাঁত শাড়ির জন্যই টাঙ্গাইলের সুনাম বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশের নাম পৃথিবীর মানচিত্রে অতি উজ্জ্বল। অসাধারণ বুননশৈলী এবং ডিজাইন এই টাঙ্গাইল শাড়ির প্রধান বৈশিষ্ট্য, যা সবার নজর কাড়ে। অতি প্রাচীনকাল থেকেই টাঙ্গাইলের দক্ষ কারিগররা বংশ পরম্পরায় এই তাঁত শিল্পের কাজ করে আসছে। এই কারিগরদের অধিকাংশই টাঙ্গাইল, কালিহাতী এবং গোপালপুর এলাকার ছিল। টাঙ্গাইলের তাঁতিরা একসময় মসলিন শাড়ি তৈরি করলেও তা আজ কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। কিন্তু তার সার্থকতা হিসেবে আজও টিকে আছে টাঙ্গাইলের জামদানি, বেনারসী এবং তাঁতের শাড়ি। ভারত  ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের অনেক দেশে টাঙ্গাইল শাড়ি রপ্তানি করা হয়। তাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতেও টাঙ্গাইল তাঁত শিল্পের অবদান অপরিসীম।
 
বিশ্বের পুরাকীর্তির ইতিহাসে '২০১ গম্বুজ মসজিদ' একটি অনন্য স্থাপনা। এই মসজিদটি টাঙ্গাইল জেলা শহর থেকে ৪৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গোপালপুর উপজেলার দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত। এ গ্রামের ঝিনাই নদীর তীর ঘেঁষে প্রায় ১৫ বিঘা জমির উপর এই ২০১ গম্বুজ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গম্বুজ এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনার বিশিষ্ট মসজিদ হলো এই ২০১ গম্বুজ মসজিদ। এই মসজিদের নকশায় সজ্জিত করা হয়েছে ৯ টি মিনার। সবচেয়ে উঁচু মিনারটির উচ্চতা ৪৫১ ফুট। পাথালিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম এই বিশ্ববিখ্যাত ২০১ গম্বুজ মসজিদের নির্মাতা। ১৪৪ ফুট দৈর্ঘ‍্য এবং ১৪৪ ফুট প্রস্থের এই মসজিদটির নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে একসঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন করে মসজিদের দেয়ালে পূর্ণ পবিত্র কুরআন শরীফ অঙ্কিত করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষের উপচে পড়া ভিড় এই মসজিদটিকে অধিক খ‍্যাতিসম্পন্ন করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ থাকলেও, বাংলাদেশে অবস্থিত এই ২০১ গম্বুজ মসজিদটি মুসলিম বিশ্বে এক অনন্য স্থাপনা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। অতি দক্ষতা এবং নান্দনিকতার সাথে এই মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে। ঐতিহ্যের তালিকায় ২০১ গম্বুজ মসজিদটি এক অপূর্ব নিদর্শন।
 
টাঙ্গাইল জনপদের আরেকটি অন্যতম নিদর্শন হল আতিয়া জামে মসজিদ। এই মসজিদটি টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় অবস্থিত। আরবি শব্দ 'আতা' থেকে এই মসজিদের নামকরণ করা হয়েছে আতিয়া জামে মসজিদ। জানা যায়, করটিয়ার বিখ্যাত জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা সাঈদ খান পন্নী ১৬০৮ সালে আতিয়া মসজিদটি নির্মাণ করেন। বাংলার সুলতানি ও মুঘল উভয় স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে এই আতিয়া জামে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটিই টাঙ্গাইল জেলার সর্ব প্রাচীন মসজিদ। বাংলাদেশে যে সকল মুসলিম ঐতিহ্য রয়েছে, তার মধ্যে আতিয়া জামে মসজিদ একটি অন্যতম পুরাকীর্তি।
 
এসব ঐতিহ্য এবং নিদর্শন ছাড়াও আরো অনেক কিছু টাঙ্গাইলকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। সেখানে আছে বিভিন্ন জমিদারদের বিভিন্ন নান্দনিক স্থাপত্যকর্ম। জমিদাররা তাদের মনের মাধুর্য দিয়ে একেকটা স্থাপত্য গড়ে তুলেছেন। মহেরা জমিদার বাড়ি তার মধ্যে অন্যতম। এটি অত্যন্ত সুন্দর এবং একটি বৃহৎ জমিদার বাড়ি, যেখানে প্রত‍্যহ হাজার মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। মানুষ সৌন্দর্যের খোঁজে এবং মানসিক তৃপ্তি লাভের আশায় মহেরা জমিদার বাড়িতে ছুটে আসে। শিক্ষা-সংস্কৃতিতেও টাঙ্গাইলের জমিদারদের অবদান অনস্বীকার্য।
তাই বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ঐতিহ্যের আরেক নাম টাঙ্গাইল। টাঙ্গাইল শুধুমাত্র বাংলাদেশের বুকেই একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা বা জনপদ হিসেবে পরিচিত নয়, বরং বিশ্বের বুকেও টাঙ্গাইল একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো স্থান করে নিয়েছে।
 
নামঃ শিউলী আক্তার 
সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া