২১ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে বর্বর পুলিশী হামলার বিভৎস স্মৃতি

আজ ২১ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে বর্বর পুলিশী হামলার ২৯ তম বার্ষিকী। ১৯৯২ সালের এই দিনে তৎকালিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কুখ্যত পুলিশ বাহিনী জাতীয় প্রেসক্লাবের পবিত্র অঙ্গনে ন্যাক্কার জনক সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ৫০ জন সাংবাদিককে আহত করেন। তাদের মধ্যে ২১ জন সাংবাদিক ও ফটো সাংবাদিককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। প্রথম দিকে প্রায় এক দশক সাংবাদিক সমাজ এই দিনটিকে সংবাদ পত্র শিল্পের কালো দিবস হিসাবে পালন করতো। কালের বিবর্তনে সেই কালো দিবস পালন এখন থেমে গেছে। তবে সেই দিন পুলিশের হামলায় গুরুতর আহত সাংবাদিকদের হৃদয়ে সেই দুঃসহ সৃতি আজো অমলিন রয়েছে।
সেদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে পুলিশের বর্বর অমানবিক হামলার প্রথম শিকার ছিলাম আমি গাজী আবু বকর সিদ্দিকী। বর্তমানে গাজী আবু বকর নামে পরিচিত।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আহত সাংবাদিকদের যে ছবি পরেরদিন আজকের কাগজে প্রকাশিত হয় সেই ছবির ১৫তম জন ছিলাম আমি। আজ থেকে উনত্রিশ বছর আগে ১৯৯২ সালের এই দিনে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদার নির্দেশে পুলিশ জাতীয় প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুরসহ এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।আমি তখন তৎকালিন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ”আজকের কাগজের” স্টাফ রিপোর্টার। দিনটি ছিলো রবিবার।পালিত হচ্ছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল জাতীয় কমিটি আহুত দেশ ব্যাপী পূর্ণ দিবস হরতাল। হরতালের শেষ পর্যায়ে পল্টন মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির সভা চলছিলো। আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আব্দুুর রাজ্জাক এমপির বক্তৃতার পর যখন নূরুল ইসলাম নাহিদের নাম ঘোষনা করা হয়,তখন সমাবেশের কাছে হাতবোমার বিস্ফোরন ঘটে। এখানে দু’ব্যক্তি আহত হয়। এর পর পরই এখানে পুলিশের প্রহারে তৎকালিন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রয়াত শ্রদ্বেয় সাইফুল ইসলাম তালুকদার ভাই গুরতর আহত হন। তাঁর মাথা ফেটে দর দর করে তাজা রক্ত বের হতে থাকে। তাঁর পাশেই আমি তখন দণ্ডায়মান। মূহুর্তে তাঁকে উদ্ধার করে বাসস অফিসে নিয়ে যাই। তখন মোবাইলের যুগ না হওয়ায় সাইফুল ভাইকে বাসস অফিসে বসিয়ে রেখে আমি গাড়ি নেবার জন্য প্রেসক্লাবের দিকে ছুট দেই। সাইফুল ভাইয়ের তাজা রক্তে তখন আমি সিক্ত। বাম হাতের নোট বুক রক্তে ভেজা। সচিবালয় এবং প্রেসক্লাবের মধ্যবর্তী সড়কের মোড়ে একদল পুলিশ আমার গমন পথ রোধ করলে আমি তাদেরকে আমার পরিচয় পত্র দেখিয়ে বলি ”আমি সাংবাদিক্ প্রেসক্লাবে যাচ্ছি।” একথা বলার সাথে সাথে একজন পুলিশ বলে ”সাংবাদিকইতো খুজছি।” একথা বলেই পুলিশের ৮৮৫৮ নম্বরধারি কনষ্টেবল আমাকে পেটাতে শুরু করে। তখন প্রেসক্লাবের সামনে কর্তব্যররত সাংবদিক ও ফটো সাংবাদিকদের মধ্য থেকে শ্রদ্বেয় আব্দুুর রহমান খান ভাই ও ফটো সাংবাদিক শ্রদ্বেয় বুলবুল ভাই আমাকে উদ্ধার করে প্রেসক্লাবের ভেতরে নিয়ে মাথায় পানি ঢালতে থাকেন। প্রেসক্লাবের সামনে কর্তব্যররত সাংবদিক ও ফটো সাংবাদিকরা তাৎক্ষনিক এঘটনার প্রতিবাদে পুলিশের গাড়ির সামনে বসে পড়েন। তার পরই শুরু হয় সাংবদিক ও ফটো সাংবাদিকদের উপর পুলিশী তান্ডব।
পুলিশ প্রথমে বাইরে থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে তারা হুড়মুড় করে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে ঢুুকে পড়ে এবং নির্বিচারে কাঁদানে গ্যাস ও গুলি নিক্ষেপ করে। সেই সাথে চলতে থাকে নির্বিচারে বেধড়ক লাঠিচার্জ। এরই এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারাই। যখন জ্ঞান ফেরে তখন আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে। পরে দেখি আমার ডাইনে বায়ের বেড গুলোতে শুয়ে আছেন, দৈনিক সংবাদের সাইফুল আমিন ভাই, রূপালির স্বদেশ রায় দাদা,ফটো সাংবাদিক হাবিবুর রহমান হাবিব জয়,ডেইলি স্টারের হুমায়ুন কবির হীরা, নওরোজের হাফিজুর রহমান বাদল ও একরামুল হক চঞ্চল,ইত্তেফাকের প্রয়াত ফটো সাংবাদিক শ্রদ্বেয় মীর মহিইদ্দিন সোহান ভাই, সমাচারের খায়রুল আলম খায়ের ভাই, আজকের কাগজের ফটো সাংবাদিক মামুনুর রশিদ,মর্নিং সানের ফটো সাংবাদিক আবু তাহের খোকন ভাই, মিল্লাতের ফটো সাংবাদিক নুরুদ্দিন ভাই,আজাদের অজিত রায় দাদা ও আশরাফ আলী। ঐদিনের হামলায় আরো আহত হন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক নেতা শ্রদ্বেয় ইকবাল সোবহান চৌধুরী ভাই, নঈম নওরোজ ভাই জনপদের কুদরত-ই-খোদা ভাই, শ্রদ্বেয় নঈম নিজাম ভাই ও আমান উদ দৌলা ভাই,বন্ধু কিবরিয়া চৌধুরী নিউজ ডের ফটো সাংবাদিক গোর্কি,আল আমিন ও শামসুল ইসলাম টেংকু।
সন্ধার পর ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে জাতীয় সংসদের তৎকালনি বিরোধী দলীয় নেত্রী আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহত সাংবাদিকদের দেখতে যান।মনে পড়ে জাতীয় সংসদের তৎকালনি বিরোধী দলীয় নেত্রী আজকের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন আমার বেডের পাশে দাড়িয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন আর আমার মুখ থেকে শুনছিলেন কিভাবে পুলিশ আমাকে লাঠিপেটা করে প্রেসক্লাবে হামলা করেছিলো সেই ঘটনা।জননেত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতাল ত্যাগ করার কিছুক্ষন পর তৎকালনি সরকারপন্থী সাংবাদিক নেতারা হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে আহত সাংবাদিকদের জানান প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আহত সাংবাদিকদের দেখতে আসবেন। আমাদেরকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। কারণ ঢাকা মেডিকেলের পরিবেশ ভালো না। আমি তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ করে ঢাকা মেডিকেল ছাড়তে অস্বীকার করি। বলি সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী এখানে এসে আমাদের দেখে যেতে পেরেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের জন্য আহত অবস্থায় আমরা কেন হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে যাবো? আমাদেরকে জানানো হয় যেতেই হবে। আমি যেতে অস্বীকার করলে জানানো হয় আহত কাউকে ঢাকা মেডিকেলে রাখা হবে না। আমি নিজ দায়িত্বে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র না নিয়ে পালিয়ে বাসায় চলে আসি। সেদিন আহতদের মধ্যে সিংহভাগ সাংবাদিক হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চলে যান।
সেদিনের এই নারকীয় ঘটনায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশা ও রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দ বিবৃতি দেন। তবে তৎকালীন ডাকসুর জিএস সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতা খায়রুল কবীর খোকনের প্রতিক্রিয়াটি ছিলো উল্লেখযোগ্য। ডাকসু জিএস পুলিশের নারকীয় হামলার বর্ণনা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, "স্বৈরাচারী এরশাদের আমলেও পুলিশ এমন আচরণ করেনি।"
পরেরদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে অভিন্ন সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিবাদ সভায় সাংবাদিকদের মধ্যে তৎকালীন ক্ষমতাসীন অংশের উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সভায় সাংবাদিকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় সিনিয়র সাংবাদিক ও দৈনিক মিল্লাত পত্রিকার ইউনিট চীপ আহত হন। রমনা থানায় দায়ের করা হয় একটি হত্যা প্রচেষ্টা মামলা। আসামি আবুল হোসেন (বাংলার বাণী) সানাউল্লাহ লাবলু (ভোরের কাগজ) আইয়ুব ভুঁইঞা এবং মহিউদ্দিন পলাশ। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন রমনা থানার সেকেন্ড অফিসার আব্দুল হামিদ।পরে মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়।
এই ঘটনায় একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। আমরা ভুক্তভোগিরা তদন্ত কমিটির নিকট বক্তব্য প্রদান করি। সেই কমিটির রিপোর্ট আজ অবধি আলোর মুখ দেখিনি। আর এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে পরের বছর বিভক্ত হয় সাংবাদিক ইউনিয়ন।অসমাপ্ত......
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
