সিন্ডিকেট এবং চাঁদাবাজী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ

সম্প্রতি ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট তৈরির দায়ে দেশের সিটি এডিবল ওয়েল লিমিটেড, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল লিমিটেড (বিইওএল), মেঘনা ও ইউনাইটেড এডিবল ওয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, বসুন্ধরা ওয়েল রিফাইনারি মিল, শবনম ভেজিটেবল ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এস আলম সুপার এডিবল ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড, প্রাইম এডিবল ওয়েল লিমিটেড ও গ্লোব এডিবল ওয়েল লিমিটেড এই আট কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশন আইনের ১৫(২)-এর ‘খ’ ধারা অনুযায়ী উৎপাদন, সরবরাহ, বাজার, কারিগরি উন্নয়ন, বিনিয়োগ বা সেবার সংস্থানকে সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি এখন হরহামেশাই হচ্ছে। প্রতিমাসেই বা প্রতিবছরই নয় এখন প্রতিদিনই জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পায়। ফলে জনজীবন হচ্ছে দুঃখ ও ভোগান্তির শিকার। মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ ঘটনা হলেও বিপরীতে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়েনি। বর্তমান সরকারের উন্নয়নমুখী নানা উদ্যোগের ফলে আমাদের জীবনযাত্রার মান যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে ব্যয় ক্ষমতাও। এটা হয়েছে সময়ের চাহিদার কারণে। কিন্তু সেই চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় হয়নি সেভাবে।ধানের ভরা মৌসুমেও দাম বাড়ছে চালের শুধু চাল নয় ডাল আটা ভোজ্যতেল শুকনা মরিচ পিঁয়াজ ও চিনিসহ প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখন বাড়তির দিকে। হঠাৎ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্তসহ স্বল্পআয়ের মানুষ। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পরামর্শে গ্যাস পানি বিদ্যুৎ ও পরিবহনের মত সেবা সার্ভিস এর মূল্য দফায় দফায় বেড়ে যাওয়ায় দেশের ক্রেতা ভোক্তা ও সাধারণ মানুষ আরো বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে। দারিদ্রসীমার সীমার নিচে অবস্থানরত মানুষের জন্য তা এক অভিশাপ হিসেবে বিবেচ্য । কেননা দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির সাথে তাদের উপার্জনের বৃদ্ধি হয়নি। সাই কেন্দ্র ঘুরে তথ্য অনুসন্ধান করে দেখা গেছে কোন ব্যবসায়ী বাজারে পণ্যের অভাব আছে বলে জানায় নি। খুচরা ব্যবসায়ীরা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সাফাই গেয়ে জানায় যে তারা পাইকারি বাজার থেকে উচ্চ মূল্যে পণ্য ক্রয় করছে। পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীদের ও একই সুর। আসলে বাজারের পরিস্থিতি এমন যে,মজুমদারেরা নিজেরাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তাদের দেখাদেখি সকল ব্যবসায়ীরা মুনাফার পথ বেছে নিয়েছে।
২০২২ সালের বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০ সালের ধারাবাহিকতায় ২১ সালের জানুয়ারি থেকেই চড়া ছিল নিত্যপণ্যের বাজার। যা শুরু হয় বছরের প্রথম সপ্তাহেই চাল ও তেলের দাম বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে। তখন এক মাসের ব্যবধানে আরেক দফা বেড়ে ৫৫ টাকার মিনিকেট চাল ৫৮-৬০টাকার মধ্যে এবং এক লিটারের সয়াবিন তেলে প্রায় ১৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছিল ১২৫ টাকা দরে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছিল চিনি, আদা, রসুনসহ সব ধরনের আমদানিকৃত পণ্যের দাম। এদিকে জানুয়ারি মাসে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির এমন প্রবণতা অব্যাহত থাকে বছরের শেষ দিন পর্যন্ত। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে হাসকি বা মোটা জাতের যে চালের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি, সে চালের দাম ডিসেম্বরে হয়েছে ৪৮ টাকা থেকে ৫২ টাকা কেজি, বর্তমানে ৫৫টাকা।চিকন চাল বা নাজির শাইল চালের দাম বছরের শুরুতে ছিল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৪ টাকার মধ্যে, সে চালের দাম বছর শেষে হয়েছে ৬৪ থেকে ৭০ টাকা কেজি। ২০২০ সালে যে চিনির দাম ছিল ৫০ টাকা কেজি তা ২০২১ সালের শুরুতে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়।এ বছর চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে। ভোজ্যতেলের বাজার ছিল খুবই অস্থির। ২০২০ সালে ভোজ্যতেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২০২১ সালের শুরুতে লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা লিটার বিক্রি হয়েছে। বছর শেষে সে তেলে দাম হয়েছে ১৬০ টাকা বর্তমানে ভোজ্য তেল ২০০ ছুঁই ছুঁই, তবুও তেলশুণ্য বাজার। গত বছর মুসুর ডালের দামও ব্যাপক বেড়েছে। বছরের শুরুতে ডালের দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এ বছর ১২০ টাকা কেজি।বছরের শুরুতে প্রতি কেটি আটার ৩৬ টাকা কেজি বর্তমানে ৪০ টাকা কেজি। ২০২১ সালে ব্রয়লার মুরগির দামও অস্বাভাবিক বেড়েছে। বছরের শুরুতে ১০০থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে। এ বছর সেই মুরগি ১৫০টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি। ২০২১ সালে গরুর মাংস ছিল ৪৮০-৫০০ টাকা কেজি এবছর ৬০০ টাকা কেজি। এভাবেই বছরজুড়ে বাজারে অস্থিরতা। চাল, ডাল, চিনি, আটা, তেল, মুরগি, ছাড়াও পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডিমসহ অন্যান্য পণ্যের দামও সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে সব ধরনের সবজি কেজিতে গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজ প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। বিভিন্ন এলাকা থেকে পণ্য দ্রব্য ঢাকা বা অন্যান্য জায়গায় যাওয়ার সময় চাঁদাবাজির ঘটনা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
এসব অনিয়ম রুখতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও অদৃশ্য সিন্ডিকেট শুধু একটি নির্দিষ্ট পণ্য নয়,মানুষের দৈনন্দিন চাহিদার প্রায় সব পণ্যের দামই বাড়ছে। কখনো কখনো তা হয়ে যাচ্ছে লাগামছাড়া। এটা বলার অপেক্ষা রাখে যে, ব্যবসায়ী ও উৎপাদক শ্রেণি হচ্ছে অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এদের মধ্যে যথাযথ সমন্নয় প্রয়োজন। বিশেষ করে উৎপাদক শ্রেণির মধ্যে আস্তা ফিরিয়ে আনা সবার আগে জরুরি। বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে, তারা যে পণ্য উৎপাদন করবেন তার সঠিক ও ন্যায্যমূল্য পাবেন। কোনো সিন্ডিকেটের কাছে তাদের প্রাপ্য মূল্য চলে যাবে না। থাকবেন না জিম্মি হয়ে। আরও একটি বিষয় খুবই জরুরি। সেটা হলো ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। যা আমরা শুধু রমজান মাসেই বেশি দেখি। বাস্তবতা হলো ভেজাল খাদ্যের বিষয়ে যেমন অভিযান প্রয়োজন তেমনি অতিরিক্ত মজুত ও ইচ্ছে মতো মূল্যবৃদ্ধি রোধেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান এখন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। এখন সরকারকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে। আমদানির ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট একটি কমন বিষয়। অধিকাংশ সময়ে আমাদের দেশে মূলত রাজনৈতিক কারণে আমদানির অনুমতি মেলে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। রাজনৈতিক ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্টতার কারণে সিন্ডিকেটগুলো বেশি মুনাফালোভী মানসিকতা সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয় এক্ষেত্রে। এখন ওই সিন্ডিকেটগুলো ভাঙার ব্যবস্থা করাই হচ্ছে সরকারের প্রথম ও প্রধান কাজ। কারণ এটা পরিষ্কার আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেটের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই এসব অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। কোনো একটি নিদিষ্ট সময়ে অভিযান পরিচালনা না করে সারা বছরই অভিযান পরিচালনার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তবেই আমরা হয়তো অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্তি পাব।
এমএসএম / এমএসএম

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া
