হাবিপ্রবি বাসে বহিরাগত যাত্রী : ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিবহন বাসে নিয়মিত বহিরাগত যাত্রী যাতায়াত করছে বলে অভিযোগ করেছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে দিনাজপুর শহর (গোর-এ শহীদ বড় ময়দান) পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করছে বহিরাগতরা। অপরদিকে বাসে জায়গা না পেয়ে সময়মতো ক্যাম্পাসে পৌঁছতে পারছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকসা কিংবা লোকাল বাসে করে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, যা একজন শিক্ষার্থীর জন্য সময়ের অপচয় এবং আর্থিকভাবে ব্যয়বহুল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্নভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন বাসে যাতায়াতকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে বহিরাগত যাত্রীদের যাতায়াতের বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহের নিগার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে বহিরাগত যাত্রীদের যাতায়াত বিষয়টি আসলেই আশ্চর্যজনক। যেখানে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করি, মাঝে মাঝে তো জায়গার অভাবে একটি বাস মিস করে পরের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয় (অপেক্ষার প্রহর এক ঘণ্টা), সেখানে বহিরাগত এসব যাত্রীর অধিকারবোধ দেখে মনে হয় আমরাই বহিরাগত। শহরের দিকের বেশকিছু পয়েন্টে এই দৃশ্য আরো ভয়াবহ। ক্লাস আওয়ারগুলোতে একে তো শিক্ষার্থীদের ভিড়, সাথে আবার বহিরাগতদের সাথে প্রতিযোগিতা করে বাসে উঠতে হয়। সিটগুলো বেশিরভাগ সময় তাদেরই দখলে। ভাবুন তো, স্কুল কিংবা কলেজের শিক্ষার্থীরা আপনার ক্যাম্পাসের বাসে বসে অথচ আপনি দাঁড়িয়ে। যারা বয়সে বড় তাদের কিছু বলা একটু খারাপ লাগে তাই ব্যক্তিগতভাবে তাদের কিছু বলি না। কিন্তু আমি চেষ্টা করে দেখেছি, যারা বয়সে ছোট তাদের বুঝিয়েছি যে, আমাদের বাস মিস হলে ক্লাস মিস হয়ে যায় । কিন্তু একা বলে আসলে কোনো লাভ হয়নি। এতসব ভিড়ের মধ্যে শহরের শেষ পিকআপ পয়েন্টে এসে যখন একেবারেই জায়গার সংকুলন হয় না তখন অনেক শিক্ষার্থীকে বাস মিস করতে হয় এবং বিকল্প হিসেবে অটোতে ক্যাম্পাসে আসতে হয়, যা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ও অনেকের কাছেই ব্যয়বহুল। অন্যদিকে আবার ক্লাসে লেট হয়ে যাচ্ছে- এরকম একটা মানসিক চাপ। কারণ একবার বাস মিস হলে অটো ঠিক করে ক্যাম্পাসে আসা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, আবার বাসের চেয়ে বেশি সময় লাগে।
তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা ১৫ বা ততোর্ধ্ব সাধারণ শিক্ষার্থী গিয়েছিলাম তারা আমাদের সাথে কথা বলে বাসের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে চেয়েছিল এবং বহিরাগত যাত্রীদের যাতায়াতের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চেয়েছিল। পরে অবশ্য আর কোনো ফলাফল আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনারা আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের এসব ভোগান্তির কথা চিন্তা করে উত্তম এবং শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নিন।
এ বিষয়ে ইলেকট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী আজিজুল হাকিম বাপ্পী বলেন, “ আমরা যারা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যারা ক্যাম্পাসের বাসে যাতায়াত করি তারা প্রতিনিয়ত এই সমস্যার সম্মুখীন হই। ক্যাম্পাস থেকে শহরে যাওয়ার সময় তেমন সমস্যা হয় না, তবে বড়মাঠ থেকে বাস ছাড়ার সময় অনেক সিভিলিয়ান বাসে উঠে। কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাচ্চাদের সাথে বাঁশেরহাট এলাকার স্থানীয় অনেক স্কুল ছাত্র বাস ব্যবহার করে, ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাসের বসার সিট তো পায়ই না, বরং জীবন ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশা কিংবা লোকাল বাসে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতে হয়। তাছাড়া বর্তমান বাস সিডিউলের প্রতি ট্রিপে বাস অনেক কম, ৫ টি ব্যাচ অধ্যয়নরত থাকার কারণে এ সমস্যায় আরো বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
এই সমস্যার থেকে উত্তোরণের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, বাসে উঠার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সবাইকে সাথে আইডি কার্ড রাখতে হবে, আইডি কার্ড না থাকলে আইডি কার্ডের ছবি দেখানো যেতে পারে, আইডি কার্ড ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের না থাকলে তারা ভর্তির সময় যে কাগজটি দেয়া হয়, সেটির ছবি দেখতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে ডিজিটালাইেশনের মাধ্যমেও এই সমস্যা সমাধান করতে পারে। এর জন্য আরএফআইডি (RFID) কার্ড স্ক্যানিং বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্কানিং এর ব্যবস্থা রাখতে পারে। আর প্রতিটি ব্যবস্থার অলটারনেটিভ হিসেবে আইডি কার্ড, বা লাইব্রেরী কার্ড দেখানোর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে”।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে বহিরাগত যাত্রী হিসেবে এবং শিক্ষার্থী বাসে যাতায়াত করার বিষয়ে জানতে এক যাত্রীকে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে শিক্ষার্থী এবং যাত্রীর মধ্যে বাকবিতন্ডার এক ঘটনা ঘটে ক্যাম্পাস থেকে শহরের উদ্দেশ্যে রবিবারের (১৯ জুন) দুপুর ১ টা ১৫ মিনিটের ২১ নম্বর বাসে। জানা যায়, কর্মচারীর স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ৩ জন ভদ্রমহিলা ৩ জন ছোট বাচ্চা নিয়ে বাসের মোট ৬ টি সিট দখল করে বসে আছে। এ দিকে সাধারণ শিক্ষার্থী বসার জায়গায় না পেয়ে দাড়িয়ে থাকায় এক শিক্ষার্থী তাদের একজন বাচ্চাকে কোলে নিতে বলায় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে বাসের মধ্যে তাদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তারা উত্তর বলে, “আমার স্বামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করে, তোমরা থাকবা এখানে চার (৪) বছর আমরা থাকবো এখানে বিশ(২০) বছর”।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিবহন শাখার সাথে যুক্ত বিভিন্ন বাস ড্রাইভার ও কয়েকজন ব্যক্তির কাছে বহিরাগত যাত্রী যাতায়াতের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, আসলেই অনেক দিন এভাবে বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে যাতায়াত করে, আমরা গাড়িতে ওঠার সময় কাউকে এরকম দেখে সন্দেহ মনে হলে জিজ্ঞাস করেছি। তারপরও অনেকেই যাতায়াত করে। সব থেকে বেশি সমস্যা হলো বাসে ওঠার সময় কাউকে চেনা কিংবা সন্দেহ করে বা জিজ্ঞাসা করে বাসে তোলা আসলেই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আমরা এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন শাখায় দায়িত্বরত ব্যক্তিদের অনেকবার অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু আশানুরূপ কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
তারা আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি শিক্ষার্থীদের বাসে যাতায়াতের জন্য তাদের প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আমাদের সুবিধা হবে বহিরাগত যাত্রীদের শনাক্ত করতে। এতে করে বাসের মধ্যে ছিনতাই, হয়রানি সহ অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও কমে আসবে”।
শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা থেকে উত্তরোণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কিনা- এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র মেরামত ও পরিবহন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. খালেদ হোসেন বলেন, আমি ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজার এবং প্রক্টরের সাথে কথা বলেছি, শিক্ষার্থীরা যেন প্রত্যেকে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দেখিয়ে বাসে যাতায়াত করে, এ বিষয়ে দু-এক দিনের মধ্যে একটি নোটিস প্রকাশ করা হবে। তাহলে বহিরাগত যাত্রীদের শনাক্ত করতে সুবিধা হবে।আর অভিযোগের বিষয়টি আমার কাছে সরাসরি আগে কেউ জানায়নি, আমি বিষয়টি তোমার মাধ্যমে গত সপ্তাহে জানতে পেরেছি এবং একই সাথে আমি এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসনিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
এছাড়াও কর্মচারীর স্ত্রী পরিচয় দিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে বাকবিতণ্ডার বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো কর্মচারী কিংবা কর্মচারীর স্ত্রীর পরিচয়ে কাউকে আমরা শিক্ষার্থীদের বাসে যাতায়াতের অনুমতি দেব না। আজ যে বাসে এই ঘটনা ঘটেছে, সে ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে কথা বলব।
জামান / জামান

ইবিতে নভেম্বরে ইকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা

ডিআইইউতে হল থেকে হাতেনাতে গাঁজা উদ্ধার, কিন্তু তদন্তে লাগবে ১২ দিন

কম্বাইন্ড ডিগ্রি দাবিতে অচলাবস্থা, উদ্বেগে বাকৃবির পশুপালন অনুষদের শিক্ষকরা

ইবিতে আ'লীগপন্থী শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

চবি মেডিকেলে প্যাথলজি বিভাগ উদ্বোধন, করানো যাবে ২১ ধরনের পরীক্ষা

ইবিতে (ইকসু)গঠনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

জাকসুতে শিবির ও বাগছাসের প্যানেল ঘোষণা, বিলম্ব ছাত্রদল ও বাম সংগঠনের

জকসু নীতিমালা জমা আজ আগামী বুধবার বিশেষ সিন্ডিকেট সভা

চাঁদাবাজির ঘটনায় আলোচিত সেই আফ্রিদির বিরুদ্ধে মানহানীর অভিযোগ

জবি রোভার স্কাউটের বৃক্ষরোপণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি

গকসু নির্বাচন: গঠনতন্ত্র ভেঙে ‘একক প্রার্থী বানানোর খেলা’, পণ্ড বৈঠক

১২৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিটিসিএলের আড়াই কোটি টাকার বিল বকেয়া
