ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

কুরবানি একটি ওয়াজিব ইবাদত


রুমানা আক্তার রনি photo রুমানা আক্তার রনি
প্রকাশিত: ১২-৭-২০২২ দুপুর ৪:৫৭
ইসলামে কুরবানির ইতিহাস বেশ প্রাচীন।  কুরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গূরুত্বপূর্ন ইবাদত যা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অনন্য মাধ্যম। কুরবানি শব্দটি এসেছে  'কুরবুন' মূলধাতু থেকে যার অর্থ হলো সান্নিধ্য অর্জন করা, নৈকট্য লাভ করা, প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য উৎস্বর্গ করা। শরিয়তের পরিভাষায়- একমাত্র মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত নিয়মে হালাল পশুকে আল্লাহপাকের নামে জবাই করাই হলো কুরবানি।
 
কুরবানির বিধান শুরু হয়েছিল হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের সময়কাল থেকে।হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর ৯৯ বছর বয়সে তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ঈসমাইল (আ.) কে আত্ননিবেদনের পরিক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তিনি মিনা প্রান্তরে আল্লাহ তাআলার সেই কুরবানির নির্দেশ পালন করেছিলেন। আল্লাহর এই বিধান বাস্তবায়নে তাঁর মানসিকতা আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে গিয়েছিল।তিনি তাঁর সেই পুত্র আত্ননিবেদনের পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। আর এই বিধানটি বিশ্বের সমগ্র  মুসলিম জনগোষ্ঠী প্রতিবছর অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ মাস জিলহজের ১০-১২ তারিখ এই তিনটি দিনের যেকোনো একদিন পালন করে থাকে। 
 
১০ ই জিলহজ মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদের দিয়েছেন ঈদুল আযহা। মুসলমান সম্প্রদায় এ দিনে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানি করে থাকেন। কুরবানির পশুটি হালাল হতে হয়। কুরবানি মানেই পশু জবাই করা আর গোশত খাওয়া নয়। কুরবানির মূল শিক্ষা তাকাওয়া অর্জন ও আত্নার সংশোধন, কুরবানির পশুর সাথে সাথে নিজেদের অন্তরের পশুকেও কুরবানি করা, নিজেদের অন্তর থেকে ক্রোধ - হিংসা- বিদ্বেষ পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা। কার অন্তর কতটা পরিষ্কার,  কতটা সুন্দর,  কতটা স্বচ্ছ আল্লাহর কাছে তা পরিক্ষা দেওয়ার উপযুক্ত সময় কুরবানি।
 
ঈদ মানেই আনন্দ যা একটি ধর্মীয় উৎসবের দিন।সেই উৎসব টা নিজের জন্য নয়,অন্যকে আনন্দ দেওয়ার জন্য, অন্যকে উৎসবে শামিল করার জন্য। ঈদের নামাজ ঘরে বসে পড়া যায়না,জামাআতের সাথে মসজিদে বা ঈদগাহ মাঠে পড়তে হয়। ঈদের দিন অন্তত একবার ধনী- গরিব, বড়লোক - ফকির সবাই এক কাতারে দাঁড়ায়, কোলাকুলি করে। নিজের আনন্দে গরিব মানুষদের কে শরিক করতে পারাটাও অন্যরকম আনন্দের বিষয়। কুরবানির ঈদের দিন গরিবদুঃখীদের যথার্থ সম্মান ও সহানুভূতির সাথে খাবার বিতরণ করে উদযাপন করা হয়। জাতপাত ভুলে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই দিনটি উপভোগ করে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজেদের সাধ্যমতো গরিবদুঃখীদের মুখে একটু সুখের নির্মল হাসি ফুটানোর জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করা।
 
বর্তমান সমাজের অনেক বিত্তবান লোকেরা গরিবদের পানে ফিরেও তাকান না। ঈদ আসে, ঈদ চলে যায়। কিন্তু আফসোস, অনেক গরিবরা ভালোভাবে ঈদের দিনটি কাটাতে সক্ষম হন না। তাইতো শান্তির জন্য সবকিছু বিসর্জন দিলেও প্রকৃত শান্তির খোঁজ আর কোথাও মিলেনা। আজকালকার কুরবানির বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। প্রথমেই বলবো, আমরা আসলে কুরবানি কেন করি? কুরবানির ঈদের দিন কি শত আনন্দের মাঝেও আমাদের মনে কুরবানির পশুটার জন্য একটু মায়া- মহব্বত জাগে? আমরা কি মাংস বিলি করি দরিদ্রের প্রতি সহানুভূতি আর ভালোবাসা থেকে? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে ওরা যখন মাংস নেওয়ার জন্য একটু হৈচৈ একটু কাড়াকাড়ি করে তখন আমরা তাদেরকে গালাগালি বকাঝকা করি কেন? আত্নীয়- স্বজনদের মাংস বিলি করার ক্ষেত্রে সেইসব আত্নীয়দের ইসলামে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যারা কুরবানি করতে স্বচ্ছল নয়। কিন্তু আমরা কি আসলেই তা করি? বরং আমরা আমাদের স্বচ্ছল আত্নীয় ও বন্ধুমহলে মাংস বিলি করতে ব্যস্ত থাকি। পোটলার বদলে পোটলা মাংস নিয়ে আসার এক প্রতিযোগিতায় মেতে উঠি কুরবানির ঈদের দিন।
 
আবার সমাজের প্রভাবপ্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিবর্গদের কুরবানি প্রসঙ্গে আসলে তো ব্যাপারটা আরও চড়া সুরে বাঁধা।  তাদের কুরবানির কথা বললে গরুর আকার ও মূল্যই প্রধান।  এলাকার সবচেয়ে বিত্তবান লোকটার গরু হতে হবে সবচেয়ে দামী,সবচেয়ে বড়। কেউকেউ আবার দশটা-কুড়িটা কুরবানি করেন।এলাকার দুই নেতার মধ্যে রেষারেষি থাকলে তো প্রতিযোগিতার এই ব্যাপারটি আরও জাঁকজমকভাবে জমে উঠে। একজনে হাটের সবচেয়ে বড় গরুটি কুরবানি দিলে আরেকজনে ৮০-১০০ টা গরু কুরবানি করেন। পরে তাঁরা অস্থায়ী লঙ্গরখানা খুলে মাংস বিতরণ করেন। যেখানে অসংখ্য দরিদ্র লোক চাপাচাপি,  ধাক্কাধাক্কি তে হতাহত হন প্রতিবছরই। তাহলে এর মধ্যে ত্যাগ কোথায়? কুরবানির মহিমা কোথায়?
 
মহান রাব্বুল আলামিন মুসলিম উম্মাহকে লোক দেখানোর জন্য নয় বরং হালাল পশু জবাইয়ের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য কুরবানির নির্দেশ দিয়েছেন। কুরবানির দিনগুলোতে যথাসম্ভব কুরবানি করা জরুরি এবং সামর্থ্য থাকা স্বত্ত্বেও কুরবানি না দেওয়া অন্যায়।  কেননা, কুরবানির রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জিত হয়। নবী করিম (স.) এর মতে, কুরবানির দিনগুলোতে কুরবানির পশুর রক্ত প্রবাহের চেয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে অধিক প্রিয় আর কোনো আমল নেই। কোরআন ও হাদিসে কুরবানির গূরুত্ব অপরিসীম।  তাই আমাদের উচিত পশু কুরবানির সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পাশবিক চরিত্রকেও জবেহ করা। পাশাপাশি কুরবানির শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে সুন্দর ও সুখময় করে গড়ে তোলা এবং নিজেদেরকে তাকওয়াবান হিসেবে তৈরি করা।
 
 
লেখক:
শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সদস্য, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ফিচার, কলাম এন্ড কন্টেন্ট রাইটার্স।

এমএসএম / এমএসএম

রেলের উন্নয়ন কেবল প্রকল্প নয়, দরকার র্কাযকর ব্যবস্থাপনা

অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি

টেকসই উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষা

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও বাস্তবতা

গাজায় যুদ্ধের নৃশংসতা ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালত

বন্ধ হোক অপসাংবাদিকতা

বিভাজনের রাজনীতি দেশের জন্য হুমকি হতে পারে

প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের স্বপ্নের সৌদি আরব

শারদীয় দুর্গোৎসবে সম্প্রীতির বাংলাদেশ ভাবনা

দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রয়োজন পর্যটন গন্তব্যগুলোর সামগ্রিক উন্নয়ন এবং শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং

গণতান্ত্রিক অধিকার ও নতুন নেতৃত্বের অন্বেষণ

দুঃখই সবচেয়ে আপন

জাতিগত নিধন বন্ধে জাতিসংঘের ব্যর্থতা