স্কুল বন্ধ থাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শিশু শিক্ষার্থীরা

মহামারী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) ছোবলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। ১৫ মাস ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এর ফলে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী মারাত্মক সমস্যায় পড়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকে ঘাটতি নিয়ে ওপরের ক্লাসে উঠছে। কতটুকু শিখল, সেটাও যাচাই করা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা। যে শিশু শিক্ষার্থীদের বয়স ৫-৮ বছর তারা স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বাড়িতে পড়াশোনা করছে না। এ সমস্ত শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে একধরণের দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে।
* শেখানো পড়া শিশুরা ভুলে যাচ্ছে
* বই ছেড়ে ঝুঁকছে মোবাইল ফোনের দিকে
* বাড়িতে একা একা পড়তে বসতে চায় না
* দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে অভিভাবকদের কপালে
* শিশু শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশেও বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বদ্ধ জীবন
শিশু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, শিশু শিক্ষার্থীরা স্কুলে গিয়ে যা শিখতে পারতো, বাড়িতে থেকে তা হচ্ছে না। বরং বাড়িতে থেকে শিশু শিক্ষার্থীরা স্কুলে শিখানো পড়াগুলো ভুলে যাচ্ছে। সারাদিন বাড়িতে থাকায় কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা ঘরে থাকা স্মার্টফোনসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনি* ডিভাইসের দিকে ঝুঁকছে। স্কুল খোলা থাকা অবস্থায় সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া শিশু শিক্ষার্থীরা আজ প্রতিনিয়ত ডুবে যাচ্ছে অলসতায়। গ্রামের শিশুরা কিছু মুক্ত স্থান পেলেও শহুরে শিশু শিক্ষার্থীরা সারাদিন বদ্ধ থাকছে চারদেয়ালের গণ্ডীর মধ্যে।
অভিভাবকরা নানানভাবে চেষ্টা করছেন শিশু শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় আগের মতো মনযোগ বসাতে। তবে স্কুলে না যাওয়ার অভাব কোনোভাবেই পূরণ করতে পারছেন না অভিভাবকরা। বড় শিক্ষার্থীরা যা পারেন তা দিয়ে পড়া সম্পূর্ণ করতে পারলেও শিশু শিক্ষার্থীরা তা পারছে না। তাই তারা লেখাপড়া রেখে সারাদিন পাড় করছে কার্টুন দেখে, গেমস খেলে ও চারদেয়ালে বন্দি থেকে। শিশু শিক্ষার্থীদের এরকম সমস্যা দেখে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে অভিভাবকদের কপালে।
স্কুলে যেতে না পারার জন্য শিশু শিক্ষার্থীদের যে শুধু লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে ঠিক তা নয়। এতে করে শিশু শিক্ষার্থীদের সুস্থ মানসিক বিকাশেরও সমস্যা হচ্ছে। শিশু শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবে সুস্থ রাখতে স্কুলে যাওয়াও অত্যন্ত জরুরী। একজন শিশু শিক্ষার্থী মানসিকভাবে বেড়ে না উঠলে তার লেখাপড়ায়ও পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়।
আল-মুগনী হুদা নামের এক শিশু শিক্ষার্থীর মা আফসানা হুদা বলেন, আমার মেয়ে শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী। গতবছরের জানুয়ারিতে স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। তবে মেয়েকে ভর্তির কিছুদিন পরে মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে অনেকদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় তার লেখাপড়া তো হচ্ছেই না যা শিখেছিলো তাও ভুলে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে আমার মেয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য কান্নাও করে। বাড়িতে এসে ম্যাডাম পড়ান, তবে সে পড়া দিয়ে স্কুলের অভাব কোনোভাবেই পূরণ হয় না। আমার সাথে অনেক অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ হয় তারাও আমার মতন নিজের সন্তানকে নিয়ে চিন্তিত।
মোছাম্মৎ নাজরিয়া নামের আরেক শিশু শিক্ষার্থীর মা নাজমা আক্তার বলেন, বহুদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় আমার মেয়ে ঠিকমত লেখাপড়া তো করছেই না বরং দিনদিন মোবাইল ফোনে ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন কার্টুন ও গেমস নিয়ে ব্যস্ত। আগে স্কুলে গেলে এসব জিনিস থেকে দুরে থাকতো। স্কুলের পড়া সম্পূর্ণ করার কাজে থাকতো। শিশুর সামগ্রিক বিকাশে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখার পাশাপাশি শিশুর মানসিক বিকাশেরও দরকার যা স্কুল বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্কুল শিক্ষকরা বলছেন, স্কুলে যেভাবে শিশু শিক্ষার্থীদের যত্ন সহকারে পাঠদান করা হয় তা বাসাবাড়িতে সম্ভব নয়। স্কুলে শিশুরা লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, চিত্তবিনোদন করে থাকে যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে কাজে আসে।
এ দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমে বলেছিল, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তার বিবেচনায় এবং কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সাথে পরামর্শক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান আগামী ঈদ উল ফিতরের পর চলতি বছরের ২৩শে মে শুরু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তবে নিজেদে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় করোনা মহামারির কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ২৯ মে পর্যন্ত বাড়ায়। তবে চলমান ছুটি কিন্তু এখনো শেষ হয়নি।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (২৯ জুন) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেন যে, 'দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠন এবং এবতেদায়ি ও কওমি মাদ্রাসাগুলোর চলমান ছুটি আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সারাদেশে করোনা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ায় এবং কঠোর লকডাউন কার্যকর থাকায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তার বিবেচনায় এবং কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে পরামর্শক্রমে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এবতেদায়ি ও কওমি মাদ্রাসাগুলোর চলমান ছুটি আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।'
এদিকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
