নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্নের আশা
যমুনার বুকে সারি সারি ভাসছে ক্রেন, বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর কাজ বাস্তবায়িত ৪২ শতাংশ
প্রমত্বা উত্তাল যমুনার বুকে যেন ভারি যন্ত্রের মেলা বসেছে। আর সেগুলো নদীতে ভাসছে বড় বড় ক্রেন। প্রায় প্রতিটি দৃশ্যমান পিলার গুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। টাঙ্গাইলের এই যমুনা নদীর ওপর দেশের দ্বিতীয় বৃহতম বঙ্গবন্ধু সেতু একটু অদূরেই
নির্মাণাধীন আরেকটি বৃহত্তর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু সেতুক ঘিরে যমুনার টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের দুই প্রান্তে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে।
ইতোমধ্যে এ রেল সেতুর ৪২ শতাংশ কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। দেশের ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের ২২ টি জেলার সঙ্গে ট্রেন চলাচল সহজ করতে যমুনা নদীর ওপর পৃথক রেল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, যা আন্ত:এশিয়া রেল যোগাযোগে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) উদ্যোগে গত মে মাসে প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে। পরে আইএমইডি প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের বেশ কিছু দুর্বল দিক চিহ্নিত করা হয়েছে।
তারমধ্যে প্রকল্পের কার্যক্রম যথাযথভাবে চিহ্নিত না করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন করা হয়। ইতোমধ্যে এক দফা ডিপিপি সংশোধন করায় ব্যয় বাড়াতে হয়েছে। বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের পর প্রকল্পের ব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে যায়।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া প্রকল্পে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি সাত লাখ টাকা। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) দেশের বৃহত্তম এ রেল সেতু নির্মাণে সাত হাজার ৭২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। প্রথম দফা ডিপিপি সংশোধনের পর সেতুর নির্মাণব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এরমধ্যে জাইকা ঋণ দেওয়ার কথা ১২ হাজার ১৪৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। যদিও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল আট হাজার ৪৬৪ কোটি ২১ লাখ টাকা। এ হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে- প্রকল্পের মূল ডিপিপিতে জমি অধিগ্রহণ ও আনুষঙ্গিক খাতে কোনো ব্যয় ধরা ছিল না। তবে সেতু কর্তৃপক্ষ (বাসেক) জমি ব্যবহারে পরবর্তীতে রেলওয়ে সমঝোতা স্মারক সই করে।
এতে ১৮৭ একর জমি স্থায়ীভাবে ব্যবহার ও ২৬৩ একর জমি অস্থায়ীভাবে ব্যবহারে বাসেককে (সেতু কর্তৃপক্ষ) ৩৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা দিতে সম্মত হয়েছে রেলওয়ে। এছাড়া মাটির কাজে ১৬৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ও রেল ট্র্যাক নির্মাণে ৫৮ কোটি পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই ও খসড়া নকশায় সেতুর পিলারের সংখ্যা ৪১টি ধরা হয়েছিল। চূড়ান্ত নকশায় তা বাড়িয়ে ৫০টি করা হয়েছে।

এরপর খসড়া নকশায় পাইলের গভীরতা (ডেপ্থ) ২৭ দশমিক ৭৯ মিটার ধরা হয়েছিল। চূড়ান্ত নকশায় ডেপ্থ বাড়িয়ে ৩৭ মিটার ধরা হয়েছে। খসড়া নকশায় স্প্যান লেন্থ (দৈর্ঘ্য) ১২০ মিটার ধরা হয়েছিল। পরে কমিয়ে ১০০ মিটার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মূল সেতু, রেলওয়ে ট্র্যাক, এমব্যাংকমেণ্ট, স্টেশন বিল্ডিং ও সাইট অফিস ইত্যাদি নির্মাণে পাঁচ হাজার ২১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে।
এর বাইরে সিগনালিং ও টেলিকমিউনিকেশন খাতে ব্যয় বেড়েছে তিন কোটি ছয় লাখ টাকা। পরিদর্শন বাংলো ও জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্পে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় হবে ৬৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। তবে পরামর্শক খাতে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয় কমেছে। আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয় বেড়েছে ৫৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, সাধারণ প্রয়োজনীয় খাতে এক হাজার ৩৩২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, পরিবেশগত সেফগার্ড খাতে ২২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ইত্যাদি।
আইএমইডি বলছে, ডিপিপিতে প্রথমে প্রকল্পটি ৯০ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের সময় বেধে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও ২৪ মাস বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটাও প্রকল্পের অন্যতম দুর্বল দিক। রেলের সড়ক বাঁধ নির্মাণে যথাযথ ও অনুমোদিত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়নি। এটাও প্রকল্পের অন্যতম দুর্বল দিক হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
তথ্যমতে, বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন রেল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এজন্য পৃথকভাবে নদী শাসন করতে হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর উভয় দিকে ৫৮০ মিটার ভায়াডাক্ট (সংযুক্ত উড়ালপথ) থাকবে। যমুনা ইকো পার্কের পাশ দিয়ে এটা বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম অংশের রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে।
এ জন্য ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার সংযোগ রেলপথ নির্মাণ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি ৩টি স্টেশন বিল্ডিং, ৩ টি প্ল্যাটফর্ম ও শেড, ৩টি লেভেল ক্রসিং গেট ও ৬ টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। রেল সেতুর পূর্ব পাশে লুপ লাইনসহ প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার, ১৩ টি কালভার্ট ও ২ টি সংযোগ স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।
টিএমএসএল কনসাল্টিং লি. অ্যান্ড টিএইচ ডিজাইন অ্যান্ড ভেভেলপমেন্ট কন্সালট্যাণ্ট জেভির টিম লিডার ইমরুল হাসান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডিএম তানভিরুল ইসলাম, প্রকল্প সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম সহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অনেকেই জানান, কর্মীরা মনের আনন্দে দিনরাত কাজ করছে। সেতুর পাইলিংয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পাইলিং করা পিলারগুলোতে এখন ঢালাইয়ের কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মূল সেতুটি দুটি প্যাকেজের আওতায় নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। পূর্ব অংশ নির্মাণ করবে ওবায়শি করপোরেশন, টিওএ করপোরেশন এবং জেএফই। এই অংশের জন্য ব্যয় হবে ৬ হাজার ৮০১ কোটি টাকা।
অপরদিকে, পশ্চিম অংশে আইএইচআই এবং এসএমসিসির যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হবে। এই অংশে ব্যয় হবে ৬ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। কিন্তু পরে তিনটি প্যাকেজে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা জানায় রেলপথ মন্ত্রণালয়।
এছাড়া তৃতীয় প্যাকেজ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং জাপানের ইয়াশিমা-জিএসইর মধ্যে চুক্তি সাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পটি মোট তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে। জাপান প্যাকেজ-৩ এর আওতায় পশ্চিম ও পূর্ব স্টেশনের জন্য সিগন্যাল ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার বাস্তবায়ন করবে।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন চালানো ঝুঁকিপূর্ণ গওয়ায় পারাপারের সময় গতি অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়। সেতুর ওপর দিয়ে ব্রডগেজ পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল নিষিদ্ধ রয়েছে। এটা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক। এ জন্যই বঙ্গবন্ধু সেতুর উজানে পৃথক রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্প অনুমোদনের পর ২০১৭ সালের মার্চে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষ হয়। দুই অংশের জন্য ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঠিকাদার নিয়োগের চুক্তি সই হয়।
বর্তমান প্রকল্পে রেলপথের পাশাপাশি সেতুর গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। স্টিল অবকাঠামোয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু দিয়ে সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেনও চালানোর উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হচ্ছে।
ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। তবে শুরুতে (উদ্বোধনের এক বছর) সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। নতুন রেল সেতু চালু হলে মালবাহীসহ ৬৮টি ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি হবে।
তিনি আরও জানান, সাইটের কর্মীরা রাত-দিন পরিশ্রম করছেন। ৫০ টি পিলারের মধ্যে ১৬ টির কাজ ধরা হয়নি। বাকিগুলোর কাজ মোটামুটি শেষ হয়েছে। ১২ টির সুপারস্ট্র্যাকচারের কাজ চলছে। এ রেলসেতুর ৪২ শতাংশ কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আইএমইডি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে সে দেশের সরকার এ প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মত হয়। এতে এডিবির (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক) সম্পাদিত জরিপের ওপর সম্পূরক জরিপ পরিচালনা করে জাইকা।
পাশাপাশি খসড়া নকশা প্রণয়ন করা হয়। এরই ভিত্তিতে প্রকল্পের প্রথম ডিপিপি অনুমোদন করা হয়। তবে চূড়ান্ত নকশায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হয়।
এমএসএম / এমএসএম
নওগাঁয় টোলমুক্ত ফুলকপির হাট
কোনাবাড়ীতে উচ্ছেদকৃত জমি পরিদর্শন করলেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক
ঈশ্বরদীর ইতিহাসে রেলওয়ের প্রথম গণশুনানী অনুষ্ঠিত
মনপুরায় কৃষি উন্নয়নে কৃষক-কৃষানীদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
বাঁশখালীর গণ্ডামারা আশরাফ আলী সড়কের বেহাল দশা, কালভার্ট ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
শিবচর এক্সপ্রেসওয়েতে গরু ব্যবসায়ীদের কুপিয়ে টাকা ছিনতাই: তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তিন সদস্যের ডাকাত চক্র গ্রেফতার
কাপ্তাই বড়ইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মা সমবেশ অনুষ্ঠিত
শতকোটি টাকার দুর্নীতির বিষয়ে যা বললেন নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন
তানোরে নৈশ প্রহরীদের বেঁধে হিমাগারে ডাকাতি
বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতা রউফুলসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
হাতিয়ায় স্প্রে পার্টির প্রধান শামীম অস্ত্র সহ গ্রেফতার
সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ১০ লক্ষ টাকার ভারতীয় সুপারী জব্দ
শালিখায় খুচরা সার বিক্রেতাদের লাইসেন্স বাতিলের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারক লিপি প্রদান
Link Copied