শাহজাদপুরের তাঁতিদের নেই ঈদের আনন্দ
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের তাঁত শিল্পের মালিক ও শ্রমিকরা ঈদুল আজহার বাজার ধরতে শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা তৈরি করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন। কিন্তু এরই মধ্যে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে চলমান লকডাউন ও বন্যার প্রভাব।
একজন তাঁত শিল্প মালিক আব্দুস সোবহান জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ঈদুল আজহাকে ঘিরে আমরা বাহারি নকশার শাড়ি, লুুঙ্গি ও গামছা তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছি। ফজরের নামাজের পর থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত মেশিনের খট খট শব্দে মুখর থাকত চারপাশ। কিন্তু গত বছরের ন্যায় এ বছরও করোনা ভাইরাসজনিত কারণে লকডাউন ও বন্যার প্রকোপে হাতছাড়া হতে পারে ঈদুল আজহার বাজার। মজুদ রয়েছে কোটি কোটি টাকার শাড়ি ও লুঙ্গী। ঈদুল আজহার বাজার ধরার জন্য অনেক কারখানার মালিক ব্যাংকঋণ, ধার-দেনা ও দাদন নিয়ে ফের কারখানা চালু করলেও ভয়াবহ করোনা ভাইরাস ও বন্যার প্রভাবে কয়েক হাজার তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
শাহজাদপুর উপজেলার মধ্যে দ্বাবারিয়া, শেরখালী, কান্দাপাড়া, রূপপুর, পুকুরপাড়, মনিরামপুর, প্রাণনাথপুর, রতনকান্দি, ডায়া, জামিরতা, পোরজনা, বেলতৈল, মাদলা, শহীদনগর, জালালপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য তাঁতপল্লী রয়েছে। করোনা ভাইরাস ও বন্যার প্রভাবে ৪০-৫০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। সর্বশেষ লকডাউন তাদের পথে বসিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে তাঁত শিল্প মালিক ও শ্রমিকরা উভয়সংকটে পড়বেন।
শাহজাদপুর উপজেলা তাঁত শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. আলমাছ আনছারি ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সোবাহানের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, বর্তমানে তাঁত শিল্প মালিকরা মহাসংকটে পড়েছেন। কারণ সুতা, রং, পণ্য তৈরির কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি হয়েছে কিন্তু সে তুলনায় শাড়ির দাম বৃদ্ধি পায়নি। অন্যদিকে মহামারী করোনা ভাইরাসজনিত লকডাউন ও বন্যার প্রভাব তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে মহাসংকটে পড়েছেন তাঁত শিল্পের মালিক ও শ্রমিকরা। করোনা ভাইরাস ও লকডাউনের কারনে দোকান, যাত্রীবাহী বাস বন্ধ থাকায় দেশ-বিদেশ থেকে খুচরা ও পাইকারি ক্রেতারা হাটে আসতে পারছেন না। বর্তমানে তাঁত শিল্পের মালিকরা তীব্র অর্থ সংকটে পড়েছেন। অর্থের জোগান দিতে না পারলে শাহজাদপুর উপজেলায় ৬০-৭০ ভাগ তাঁত শিল্প পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে এক লাখ বা তার অধিক তাঁত শিল্পের মালিক ও শ্রমিকদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসবে। এরই মধ্যে ব্যাংকঋণ ও দাদনের টাকা সময়মতো দিতে না পারায় তাঁত শিল্পের মালিকরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। তাদের মাঝে সরকারিভাবে অর্থের জোগান দেয়া না হলে এ শিল্পে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এমএসএম / জামান