বশেমুরবিপ্রবির ২১ বছরে পদার্পণ
স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জে নির্মিত হয় তারই নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। একুশ বছরে পদার্পণ করল বশেমুরবিপ্রবি। নাম আর অবস্থানগত কারণে দেশসেরা একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিত ছিল। তবে ব্যতিক্রমটা এখানেই। বশেমুরবিপ্রবিকে সবাই চেনে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি, অনিয়ম, চুরি, আন্দোলনসহ নানা কারণে সমালোচিত এক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই আসছে নানা প্রতিবন্ধকতা। বশেমুরবিপ্রবি দিবস ২০২১ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির পেছনের ইতিহাস, বাধা-বিপত্তি, বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা তুলে ধরা হয়েছে আজকের প্রতিবেদনে।
প্রতিষ্ঠাকালীন প্রতিবন্ধকতা : ১৯৯৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০০১ সালের ৮ জুলাই জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণীত হয়। এরপর ১৩ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্যে দিয়েই যাত্রা শুরু করে বশেমুরবিপ্রবি। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ২০০২ সালের ১৫ এপ্রিল প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করেন। প্রায় ৯ বছর পর আবারো আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে ২০০৯ সালের নভেম্বরে স্থগিত প্রকল্পটি পুনর্জীবিত হয় এবং ২০১০ সালের ২০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ আইন-২০০১ বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসআরও জারী করেন। অবশেষে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় । পাঁচটি ডিপার্টমেন্ট নিয়ে শুরু হলেও শিক্ষার্থীদের সংখ্যার দিক থেকে বর্তমানে এটি বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে ৭টি অনুষদের অধীনে ৩৪ টি বিভাগ রয়েছে। সেখানে ১২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। শিক্ষক রয়েছেন ২৭২ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ক্রেডিট সিস্টেম পদ্ধতি চালু রয়েছে। আটটি সেমিস্টারে শিক্ষাপর্ব শেষ হয় ৷
উপাচার্যের রদবদল : বশেমুরবিপ্রবির প্রথম উপাচার্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের প্রফেসর ড. এম. খায়রুল আলম খান। তিনি দুইবার প্রকল্প পরিচালক (১৫ নভেম্বর,১৯৯৯ ও ৫ জানুয়ারি, ২০১০) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া দুইবার উপাচার্য হিসাবেও নিয়োগ পান তিনি। প্রথমবার ২০০১ সালের ১৯ জুলাই উপাচার্য হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে পরবর্তীতে প্রকল্প বাতিল হওয়ায় পূর্বতন প্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন।পুনরায় ১৪ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান প্রফেসর ড. এম. খায়রুল আলম খানকে পুনরায় ৪ বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন এবং ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মেয়াদ শেষ হয়।
প্রথম উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোঃ নাসিরউদ্দিনকে উপাচার্য হিসেবে ৪ বছরের জন্য নিয়োগ প্রদান করেন। টানা ৪ বছর দায়িত্ব পালনের পর আবারো ২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পান তিনি। কিন্তু কোটি কোটি টাকার অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বধীনভাবে মত প্রকাশে বাধা, শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার, নারী কেলেঙ্কারী, ক্ষমতার অপব্যবহার সহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলেন। স্বৈরাচারী এই উপাচার্যের অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশের ফলে ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে হেনস্থা ও বহিষ্কারের জের ধরে বশেমুরবিপ্রবিসহ সারাদেশব্যাপী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের প্রতিবাদ এবং বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের টানা ১২ দিনের আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রফেসর ড.খোন্দকার নাসিরউদ্দিন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালের অক্টোবরে খন্ডকালীন উপাচার্য হিসেবে ইটিই বিভাগের ডঃ মো শাহজাহানকে নিয়োগ করা হয়। তিনি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। অবশেষে দীর্ঘ ১১ মাস পর ২০২১ সালের ০২ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে চার বছর মেয়াদে স্থায়ী ভিসি হিসাবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব।
বর্তমানে উল্লেখযোগ্য কিছু চ্যালেঞ্জ : বিশ বছর পার হলেও বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মান হয়নি, প্রধান ফটক নেই, ক্যাফেটেরিয়া নেই। পুরাতন এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠার আগেই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সমস্যা। ক্লাসরুম সংকট, শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট, শিক্ষক স্বল্পতা, কয়েকটি বিভাগ যেমন ইতিহাস বিভাগ অনুমোদন, আইসিটি ইনষ্টিটিউট নিয়ে চলমান সমস্যা, ক্যাম্পাসে সুপেয় পানির সমস্যা।
তবে অতীতের সকল ঝড় ঝাপটা অতিক্রম করা বর্তমানের বশেমুরবিপ্রবি ভবিষ্যতে অনেকদূর এগিয়ে যাক এমনটাই প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের।
নির্ঝঞ্ঝাট ও ঘুছালো এক ক্যাম্পাসের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সাইফ বলেন, "শৃংখলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমুর্তি বজায় রাখার অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু আমাদের ক্যাম্পাসে শৃংখলার অনেক অভাব। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন সংকট। আশা করি দ্রুত সকল সংকটের অবসান ঘটুক। দেশ সেরাদের তালিকায় বশেমুরবিপ্রবির নাম উঠে আসুক, এটাই প্রত্যাশা।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নতির বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড.এ কিউ এম মাহবুব বলেন, “আমার লক্ষ্য থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিমুক্ত করা এবং শিক্ষার মান উন্নয়ন করা। এছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অবকাঠামো এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। এই জায়গাগুলোতে উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি কৃষি ইনিস্টিউট এবং আইসিটি ইনিস্টিউটে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে এই এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো।”
এমএসএম / জামান
২০২৫ সালে মাধ্যমিক স্কুলে ছুটি থাকবে ৭৬ দিন
জবি ভর্তি পরীক্ষার তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি
ক্যাম্পাসে মাদক সেবনরত অবস্থায় নারীসহ ৪ জন বহিরাগত আটক
জবিতে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষায় থাকছে লিখিত ও বহুনির্বাচনি
যবিপ্রবিতে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফায়ার অ্যান্ড সেফটি’ শীর্ষক ওয়ার্কশপ
শিক্ষার্থীদের ১১ দফা: জাবি ক্যাম্পাসে মোটরচালিত যানবাহন বন্ধ
শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে কোর্স সমাপনী সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা অনুষ্ঠিত
প্রক্টর নিয়োগকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় দ্বিমুখী সংঘর্ষ
জাককানইবির বঙ্গমাতা হলে নতুন হাউজ টিউটর নিয়োগ
৮ দাবিতে জাবিতে ব্লকেড কর্মসূচি
বৈঠক করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিতুমীরের ১৪ শিক্ষার্থী
বাকৃবিতে গ্রন্থাগারের উন্নয়নে উপাচার্যের সাথে শিক্ষার্থীদের মতবিনিময়
Link Copied