৯ মাসে ৫৭ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

* দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী একাডেমিক চাপের সম্মুখীন* করোনা পরবর্তী জীবনে বেড়েছে ভয় ও আশঙ্কা* ইলেকট্রনিক ডিভাইস আসক্তি বাড়াচ্ছে মানসিক সমস্যা* নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার হারও বেড়েছে* অভিভাবকদের অযাচিত চাপে শিক্ষার্থীরা* সেশনজটের শিকার ৬৩.৪১ শতাংশ শিক্ষার্থী
চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে সারা দেশে ৫৭ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপে এ তথ্য জানানো হয়েছে। শনিবার (৮ অক্টোবর) সংগঠনটির আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ জরিপের সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়।
আঁচল ফাউন্ডেশনের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, গত নয় মাসে শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা ভয়াবহভাবে বেড়েছে। এ বছরের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছে ৪০৪ জন শিক্ষার্থী। এর মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫৭ জন, স্কুলের ২১৯ জন, মাদ্রাসার ৪৪ জন, কলেজ পড়ুয়া ৮৪ জন। যার মাঝে নারী শিক্ষার্থী ছিলো ২৪২ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ১৬২ জন।
যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন সে সমস্যা সম্পর্কে সার্বিক ধারণা লাভ- এমনই মনোভাব থেকে আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ এন্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের সদস্যবৃন্দ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ের উপর জরিপ পরিচালনা ও গবেষণা করে থাকে।
করোনা পরবর্তী বেড়ে যাওয়া আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে এ জরিপটি পরিচালনা করেছে আঁচল ফাউন্ডেশন। শিক্ষার্থীদের উপর একাডেমিক চাপ তাদের আত্মহত্যার পেছনে কতটুকু দায়ী এবং অন্যান্য কি কি কারণ জড়িত সে লক্ষ্যেই একটি গবেষণা জরিপ পরিচালিত হয়।
জরিপটিতে ৩৮ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৭ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ১৬৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
জরিপ হতে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ৭৫.৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা করোনা পরবর্তী একাডেমিক চাপের কারণে বিভিন্ন ধরণের মানসিক এবং গঠনমূলক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন যা মোট শিক্ষার্থীদের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ। শিক্ষার্থীদের মধ্য হতে ৪৬.৬৫ শতাংশ জন করোনার আগের তুলনায় পড়াশুনার প্রতি মনযোগ কমে গেছে বলে জানান। মোট অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৭.৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন যে তাদের নিজস্ব শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত ভয় ও উদ্বেগ তাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে।
এছাড়াও ডিজিটাল ডিভাইস শিক্ষার্থীদের জীবনকে সহজ করে তুললেও এর উপর অতিরিক্ত আসক্তি ও নির্ভরতা শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন ৭০.৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, বর্হিমুখী কিংবা আত্মকেন্দ্রীক হয়ে উঠার প্রবণতাও শিক্ষাজীবনকে অনেকাংশেই প্রভাবিত করছে বলে জানিয়েছেন ৪৭.৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী। সন্তানদের প্রতি অবিভাবকদের অতিরিক্ত স্বপ্ন বা প্রত্যাশার চাপ ৫৫.৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে আছে বলে সমীক্ষাউ উঠে এসেছে।
করোনা পরবর্তী বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময় অতিরিক্ত পড়াশোনা এবং কম সময়ে শ্রেণীকক্ষে পাঠ্যক্রম শেষ করার জন্য ৭৭.০১ শতাংশ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনকে গভীরভাবে চাপের মধ্য ফেলেছেন। ৭৬.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন চাকুরী ক্ষেত্রে ভবিষ্যত ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা এবং অনিশ্চয়তার কারণে মানসিক চাপে আছেন। পরীক্ষার ফলাফল ভালো না হওয়ার ভয়ে রয়েছেন ১২৭৪ জন বা ৭৭.৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।
আঁচল ফাউন্ডেশনের এবারের জরিপে দেখা গিয়েছে যে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ৬৩.৪১ শতাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেয়াদে সেশনজটের শিকার হয়ে আটকে পড়েছেন। ৭৪.৫১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা নিজেদের মানসিক সমস্যাগুলো শেয়ার করার মত শিক্ষক পান না। ৫৩.৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন পড়াশুনার জন্য তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান পরিবেশ সহায়ক নয়। যার ফলে তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ৩১.২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা একডেমিক চাপের সাথে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। ১০.১৮ শিক্ষার্থী শেয়ার করেন জীবন নিয়ে তারা পুরোপুরি হতাশ। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে ৪৮.৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করার মত কাউকে পাশে পান না। করোনা পরবর্তী সময়ে ১৬৪০ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০ জন বা ২.৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরণের মানসিক সমস্যা এবং আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। যে সমস্যাগুলো নিয়ে তারা ভুগে থাকেন তাদের অনেকগুলোরই চাইলে সমাধান করা যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়াশুনার সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করা, শিক্ষকদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি, মন খুলে কথা বলার মত সামাজিক পরিবেশ তৈরি ইত্যাদির মাধ্যমেও তাদের এই সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (অব) অধ্যাপক ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ এবং বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি ড. মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, করোনার সময়ে ও করোনা পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে বলে অনেক গবেষণায় ও খবরে উঠে এসেছে। এর কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা থেকে শুরু করে মানসিক শান্তির অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে পড়াশোনার চাপ, পরীক্ষার চাপ, সামাজিকতা, ব্যক্তিগত হতাশার মত বিষয়। এইসব নানা ব্যাপার শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পিছনে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে, আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়ছে এবং এর প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন পথ খুঁজে বেরাচ্ছে, অনেকক্ষেত্রে সফলকামও হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধের নিশ্চিত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের কাজ সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দসহ এ সংক্রান্ত জাতীয় নীতি ও তার শতভাগ প্রয়োগের উদ্যোগ নিশ্চিত করা জরুরী।
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধ নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সামিরা আক্তার সিয়াম বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রায়োগিক শিক্ষা এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা অনুযায়ী যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে শিক্ষার্থীদের বিষন্নতা এবং আত্মহত্যা প্রবনতা কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, পরিবার কিংবা শিক্ষক সবারই মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বারোপ করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে সাহায্য করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য দায়ী যে সমস্যাগুলো জরিপে উঠেছে এসেছে তা মোটামুটি চার ধরণের- একাডেমিক চাপ, আর্থিক সংকট ও ক্যারিয়ার দুশ্চিন্তা এবং শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ। আঁচল ফাউন্ডেশন উক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সমস্যা সমাধানে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বাভাবিক ও ইনফরমাল সম্পর্ক তৈরি করা, অতিরিক্ত সিলেবাস কমিয়ে যথাসময়ে পরীক্ষা সম্পন্ন করে সেশনজট মুক্ত করা, পড়াশোনাকে আনন্দময় ও বাস্তবমুখী করা, প্রথাগত সিলেবাসের পরিবর্তে চাকুরী বাজারের উপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন, শিক্ষাঋণ চালু করা, স্ব স্ব ক্যাম্পাসে খন্ডকালীন চাকুরীর ব্যবস্থা করা, ক্যারিয়ার গঠনে পরামর্শ ও সহায়তা পেতে বিভাগের উদ্যোগে অ্যালামনাইদের সাথে যোগাযোগ জোরদার করা, জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে বিভিন্ন সভা সেমিনার আয়োজন করা ও শিক্ষকদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রস্তাবনা পেশ করেছে।
এমএসএম / জামান

ঢাবি ভিসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জামায়াতি প্রশাসন’ আখ্যা দিল ছাত্রদল

সুবিপ্রবি নির্ধারিত জায়গায় দ্রুত স্থাপনের লক্ষে বৃহত্তর সুনামগঞ্জবাসীর স্বারকলিপি

ডাকসু নির্বাচনের ভোটগণনা শুরু

টিএসসি কেন্দ্রে ৩ ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ৩৫ শতাংশ

ভোটার লাইনে প্রার্থীদের প্রচারণা, ‘বিরক্ত’ ভোটাররা

শান্তিপূর্ণভাবে চলছে ডাকসুর ভোটগ্রহণ

শান্তিপূর্ণভাবে চলছে ডাকসুর ভোটগ্রহণ

ভোটটা উদযাপন করতে চাই : ছাত্রদল প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী আবিদুল

ঢাবিতে প্রবেশে কঠোর নিয়ন্ত্রণ, ভেতরে বিজিবির টহল

ডাকসু নির্বাচন : নারী ভোটকেন্দ্রে লম্বা লাইন

রাত পোহালে ডাকসু নির্বাচন

পবিপ্রবিকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার নেতৃত্ব দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা
