নিরাপদ খাদ্য সুরক্ষায় ইয়ন গ্রুপের অগ্রযাত্রা

স্বাধীনতার মাত্র ৫০ বছরে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে অর্জন করেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। মাত্র ৫০ বছর আগেও এদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষ তিন বেলা ভাত খেতে পারেনি খাদ্যাভাবে। বারবার দেখা দিয়েছে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ। ৫০ বছরের ব্যবধানেই খাদ্য উৎপাদনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। দেশের মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম, ধানের উন্নত জাত উদ্ভাবন, কৃষির আধুনিকায়ন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কৃষিতে বিনিয়োগ দেশের খাদ্য উৎপাদনকে স্বনির্ভরতার দিকে নিয়ে গেছে। ধান-চাল, সবজি ও অভ্যন্তরণীয় জলাশয়ের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আবাদি জমির পরিমান প্রায় ৮০ লক্ষ ৩০ হাজার হেক্টর, যেখানে দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লক্ষ। জনসংখ্যার বিপরীতে এই স্বল্প পরিমান কৃষি জমি থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬৮.৭ হাজর হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ার পরেও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে জ্যামিতিক হারে। ১৯৭১ সালে দেশে যেখানে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ টন, সেখানে ২০২১ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে সোয়া ৪ কোটি টন।
বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করলেও এখনো পুরোপুরি খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনতে পারেনি। এখনো চাল, গম, ভুট্টা, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, গুড়ো দুধ ও মসলার মত নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য আমদানিতে ব্যয় হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ১ কোটি ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন খাদ্য আমদানি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। শুধু চাল আমদানি করতে হয়েছে ৮৫ কোটি ৯ লাখ ডলার এবং গম ১৮২ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার গুড়ো দুধ আমদানি করে বাংলাদেশ। এসব খাদ্যের আমদানি ব্যয় বিবেচনায় এখনো বাংলাদেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা যায় না। বাংলাদেশের মানুষ এখন অভুক্ত না থাকলেও বিশ্ব ক্ষুধা সূচক-২০২২ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪। এর আগের বছর অবস্থান ছিলো ৭৬। অর্থাৎ ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় এবার বাংলাদেশ তার আগের অবস্থান থেকে আট ধাপ পিছিয়ে পড়েছে। সূচকের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ মাঝারী মাত্রার ক্ষুধা আক্রান্ত দেশ। এই সূচকের ভিত্তি হলো- অপুষ্টি, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা, মৃত্যুহার, উচ্চতার তুলনায় ওজন কম ইত্যাদি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর মতে, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক ফল ও সবজির প্রয়োজন ৪০০ গ্রাম কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু যোগান রয়েছে মাত্র ২০৩ গ্রাম। একই সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫০ মিলিলিটার দুধ খেতে বলছে। কিন্তু দেশে এখন মাথাপিছু দুধের প্রাপ্যতা ১৭০ থেকে ১৭৫ মিলিলিটারের মধ্যে। এর অর্থ দাঁড়ায় এখনো আমরা বিপুল পরিমাণ পুষ্টি ঘাটতিতে রয়েছি। এর সাথে রয়েছে স্বাস্থ্যকর খাবারের অভাব। দেশের খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায়ে বিতরণ পর্যন্ত প্রতিটি খাদ্যের প্রতিটি শৃঙ্খলে রয়েছে খাদ্যে ভেজাল উপাদান সংমিশ্রণ, ক্ষতিকর এ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোন প্রয়োগসহ নানাবিধ অনিরাপদ ব্যবস্থাপনা। সাম্প্রতিক সময়ে সারাবিশ্বে খাদ্যের পর্যাপ্ততার পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সরকার নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নামের প্রতিষ্ঠান গঠন করেছে নিরাপদ খাদ্য সুরক্ষার জন্য। আজকাল মাছ, মাংস, দুধ, ডিমে হরহামেশাই পাওয়া যাচ্ছে ক্ষতিকর এ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন, ব্যাকটেরিয়া, শুকুরের চর্বি ও ভারী ধাতুসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর বস্তু, যা মানবদেহের জন্য চরম মাত্রায় ক্ষতিকর এবং বিভিন্ন দূরারোগ্য রোগ-ব্যাধীর কারণ। সরকারের উচিত এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য আঞ্চলিক টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাজারজাতকরণের অনুমোদন দেওয়া। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিদপ্তরকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করা আবশ্যক। কৃষির অত্যাবশ্যকীয় উপাদান সার-কীটনাশকের ব্যবহারে যেনো পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি না হয় সেই জন্যও প্রয়োজন আধুনিক গবেষণা। খাদ্য আমদানী কমিয়ে দেশে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারি সহায়তা বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে একদিকে আমদানী ব্যয় হ্রাস পাবে, অন্যদিকে বৃদ্ধি পাবে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)। সেই সাথে নিরাপদ খাদ্য সুরক্ষার এই আন্দোলনে সামিল করতে হবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। যাতে দেশে উন্নত কৃষি শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য সুরক্ষিত হয়। ইতিমধ্যেই দেশে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কৃষি খাতে বিনিয়োগ করে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের গতি তরান্বিত করছে।
বেসরকারি পর্যায়ে এরকম একটি প্রতিষ্ঠান ইয়ন গ্রুপ। যা দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে নিরাপদ খাদ্য সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির মূল স্লোগানই হলো- "Passion for food security & Safety" তথা নিরাপদ খাদ্য সুরক্ষা। কৃষির প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবাধ বিচরণ এই প্রতিষ্ঠানের। পোল্ট্রি, মৎস, দুগ্ধ ও ক্রপ এগ্রিকালচারের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিরাপদ খাদ্য সুরক্ষার নীতি অনুসরণ করে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ইয়ন গ্রুপ সম্পূর্ণ এ্যান্টিবায়োটিক, ব্যাকটেরিয়া এবং বিষাক্ত ভারী ধাতুমুক্ত দুধ, ডিম, মাছ, মাংস ও খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাজারজাত করে দেশের অন্যতম রোল মডেল হিসেবে কাজ করছে। খামার যান্ত্রিকীকরণ করে সম্পূর্ণ এ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ক্ষতিকর ধাতুমুক্ত দুধ উৎপাদন এবং দুগ্ধজাত পণ্য তৈরি করে বাজারজাতকরণের জন্য ইয়ন গ্রুপ "বাংলাদেশ ডেইরি আইকন-২০২১" হিসেবে সরকারি সম্মাননা অর্জন করে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি কান্ট্রি ন্যাচারাল ব্র্যান্ডে এ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যাকটেরিয়ামুক্ত ব্লাস্ট ফ্রোজেন চিকেন এবং ডিম বাজারজাত করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কৃষির আধুনিকায়ন ও দেশের নিরাপদ খাদ্য সুরক্ষার জন্য ইয়ন গ্রুপ সারা দেশে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষককে বিনামূল্যে পরামর্শ সেবা প্রদান করার পাশাপাশি ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। নিরাপদ খাদ্য সুরক্ষায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এমন উদ্যোগ দেশ মাতৃকার জন্য আশির্বাদ। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার কৃষির উন্নয়ন ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আরো অধিক পরিমাণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুকূল কৃষিশিল্প নীতি প্রতিষ্ঠা করা হলে কৃষিতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে আরো তরান্বিত করবে। বাংলাদেশ হবে বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ খাদ্য ভান্ডার।
মো. তৌহিদুল ইসলাম বাদল
ইনচার্জ (বিতরণ বিভাগ, রংপুর)
ইয়ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া
Link Copied