সংস্কার নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই

ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস কিংবা অতিবৃষ্টির পূর্বাভাসে যখন আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেত জারি হয় তখনই শুরু হয় উপকূলের বোবা কান্না। যে কান্না বিগত কয়েকবছর ধরে কেঁদে আসছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। তবে তাদের এই কান্না আর বুকফাঁটা আর্তনাদ আজও হয়তো পুরোপুরিভাবে পৌঁছায়নি দেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে। আর কান্নার জলের কিছু অংশ ভাসতে ভাসতে সে পর্যন্ত পৌঁছালেও তার মূল্য বোঝেনি নীতিনির্ধারণী মহলের অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মীচারীরা। জলবায়ু ও আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারনে প্রতিবছর কোন না কোন ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাস হানা দিচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলে। বছরের এই মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা কারনে সবচেয়ে বেশি সংকট তৈরী হয় উপকূলীয় এসব জনপদে। সবশেষ চলছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর বিধ্বংসী প্রভাব। সিত্রাং এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ইতোমধ্যে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে। এই সংকেতের মধ্যে দিয়ে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি আর নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কানায় কানায় ভরে উঠেছে। এরমধ্যেই খুলনার কয়রা উপজেলার হরিনখোলা বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় লোকজন, জনপ্রিনিধিরা সে ভাঙন বাঁধে সংস্কার করেছে। তবে টেকসই বেড়িবাঁধ না হলে তা আবারো যেকোন সময় জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেড়ে এলাকায় লবণাক্ত পানি প্রবেশ করবে। এতে কয়েকটি গ্রাম, ফসলের ক্ষেত, বাড়িঘর, মৎস ঘের প্লাবিত হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, কয়রা উপজেলায় পাউবোর ১৫৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। যার মধ্যে ২১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে টলমল অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরা উপকূলে পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ ও পাউবি-২ এর আওতায় মোট বেড়িবাঁধ আছে ৭০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩৫ পয়েন্টে ২০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। উপকূলীয় জনপদের মানুষের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার কাজ শুরু করেছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর খবরে বিশেষ করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ‘ইয়াশ‘, ‘আম্ফান’ বিধ্বস্ত সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনিসহ ওই জনপদের উপকূলবাসীরা। এবছরও শ্যামনগরের বেড়িবাঁধে ২২টি স্থানে ঝুকিপূর্ণ রয়েছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। শ্যামনগরের পদ্মপুকুরের খুটিকাটা, প্রতাপনগর, আনুলিয়া, শ্রীউলা, গাবুরা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং যদি এর উপরে আঘাত আনে তাহলে বছর না ঘুরতেই আবারো চরম বিপর্যয়ে পড়ে তাদের দুঃখ-দুর্দশার সীমা অতিক্রম করবে। আবারো শুরু হবে আয়লা, আম্ফানের মতো মানবেতর জীবনযাপন। আগের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আবার এমন বিপর্যয় তাদেরকে সর্বশান্ত করে ফেলবে। ছোট ছেলেমেয়ে, পরিবারে বৃদ্ধদের নিয়ে নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরিত করতেও বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হবে তাদের। প্রায় একযুগ আগে ঘূর্ণিঝড় আয়লায় বিধ্বস্ত উপকূলের এসব অঞ্চলে আজ-অব্দি খাবার পানির সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর উপর অতিবৃষ্টি, নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জলাবদ্ধতায় দক্ষিণ পশ্চিম উপকূল এলাকায় লবণ পানির প্রভাবে এবং সুপেয় পানির উৎস না থাকার কারণে উপকূল অঞ্চলের মানুষ খাবার পানির চরম সংকটের মধ্যে রয়েছে। এর ফলে তারা টাইফয়েড জ্বর, রক্ত আমাশয়, ডায়রিয়া, কলেরা, চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এসমস্ত রোগ তাদের এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য উপকূলবর্তী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে আরো বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে তা নাহলে মানচিত্র থেকে এসব অঞ্চল অতিদ্রুত বিলীন হয়ে যাবে।
তবে এতো দুঃখ দুর্দশার মধ্যেও তারা আশা করে পথ চেয়ে বসে আছে তাদেরকে ঘিরে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনার দিকে। কিছুদিন আগে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় উপকূলীয় এলাকায় পুরোনো বাধ সংস্করের পাশাপাশি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে এক হাজার ২৩ কোটি টাকার ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ (শ্যামনগর) পুনর্বাসন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। পাশাপাশি উপকূলীয় জেলা খুলনার কয়রা উপজেলায় একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে যার পোল্ডার নং- ১৪/১। এখানে এক হাজার ৭২ কোটি ৩১ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ দুটি বাজেটের ফলে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন নদী ভাঙনে নিঃস্ব হওয়া উপকূলীয় অঞ্চলের এসব মানুষ। তাই শুধু বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিলে কিংবা প্রতিবছর এই মৌসুমে বেড়িবাঁধে সামান্য সংস্কার না করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এ জনপদের মানুষকে বাঁচাতে, জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে ইতোমধ্যে যে প্রকল্প দুটি পাশ হয়েছে সেটি সুপরিকল্পিতভাবে এবং স্বচ্ছতার মধ্যে দিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে উপকূল থেকে উদাত্তকণ্ঠে আহব্বান জানাচ্ছি।
লেখকঃ রিয়াদ হোসেন, শিক্ষার্থী,
সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।
এমএসএম / এমএসএম

রেলের উন্নয়ন কেবল প্রকল্প নয়, দরকার র্কাযকর ব্যবস্থাপনা

অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি

টেকসই উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষা

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও বাস্তবতা

গাজায় যুদ্ধের নৃশংসতা ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালত

বন্ধ হোক অপসাংবাদিকতা

বিভাজনের রাজনীতি দেশের জন্য হুমকি হতে পারে

প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের স্বপ্নের সৌদি আরব

শারদীয় দুর্গোৎসবে সম্প্রীতির বাংলাদেশ ভাবনা

দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রয়োজন পর্যটন গন্তব্যগুলোর সামগ্রিক উন্নয়ন এবং শক্তিশালী ব্র্যান্ডিং

গণতান্ত্রিক অধিকার ও নতুন নেতৃত্বের অন্বেষণ

দুঃখই সবচেয়ে আপন
