সিএমপিতে বদলি ঠেকাতে মরিয়া বিতর্কিতরা

সিএমপি এলাকায় ঘুরেফিরে দীর্ঘদিন কর্মরত আছেন একঝাঁক বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা। সর্বোচ্চ এক থানা থেকে অন্য থানায় বদলি হয়েছেন, কেউ আবার এক থানায় টানা ৫-৭ বছরও কর্মরত আছেন। আবার কেউ ঘুরেফিরে সিএমপিতে এক দশকের চেয়ে বেশি সময় কর্মরত। এদের অধিকাংশ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন, রয়েছে অঢেল অর্থ-সম্পদ। যদিও পুলিশের চাকরিতে দীর্ঘদিন এক থানায় কর্মরত থাকার সুযোগ নেই। উর্ধতন কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করতে পারলে দীর্ঘদিন এক কর্মস্থলে থাকা যায় বলেও প্রচার রয়েছে। অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন অনেকে।
নানা অভিযোগের কারণে এবার পুলিশ সদরদপ্তর (হেডকোয়ার্টার) হার্ডলাইনে অবস্থান নিয়েছেন। সিএমপি'তে ওসি, এসআই পদমর্যাদা থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত বিতর্কিতদের বদলির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বাকলিয়া থানার ওসি রুহুল আমীন ও চকবাজার থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীরকে চট্টগ্রামের বাইরে অন্য রেঞ্জে বদলি করেছেন। তবে এখনো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে বিতর্কিতদের মধ্যে চান্দগাঁও থানার ওসি মো. মুস্তাফিজুর রহমান!
এই তিন ওসি তাদের বদলি ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর তদবির চালাচ্ছেন। যদি বিতর্কিত এসব কর্মকর্তারা পার পেয়ে যান, তবে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক! তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশ সদরদপ্তর অনঢ থাকবেন বলে প্রত্যাশা নগরবাসীর।" এছাড়াও সিএমপি'তে নানা কারণে বিতর্কিত কিংবা দীর্ঘদিন কর্মরত কর্মকর্তাদের মাঝেও দেখা দিয়েছে বদলি আতংক।
চার দলীয় জোট সরকার আমলে পুলিশের চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেকেই বর্তমানে চট্টগ্রামে কর্মরত আছেন। বিশেষ করে আলোচিত '০৫ ব্যাচের রয়েছেন চান্দগাঁও থানার ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাকলিয়া থানার ওসি রহুল আমিন। চট্টগ্রামে কর্মরত অবস্থায় নানা কারণে বিতর্কে জড়িয়েছেন। এদিকে, চকবাজার থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর নানা কারণে বিতর্কিত হন, স্ট্যান্ড রিলিজও হয়েছেন। তবুও ঘুরেফিরে সিএমপিতে ঠাঁই হয় চকবাজার থানায়।
চান্দগাঁও থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান সিএমপি'তে প্রথম ওসি হিসেবে যোগ দেন চান্দগাঁও থানায়। এরিমধ্য একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে আলোচনায় উঠে আসেন। এমনকি, সরকারি দলের জৈষ্ঠ্য নেতাদের তোয়াক্কা করছেন না, দলীয় নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা জড়িয়ে দওয়া কিংবা হয়রানির অভিযোগ উঠে।
চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় শিবির হিযবুত ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। এমনকি পুলিশের গাড়িও ভাংচুর করে৷ ঘটনাস্থলে ওসি উপস্থিত থাকলেও ছিলেন নীরব ভূমিকায়। পরবর্তীতে সিএমপি'র উর্ধতন কর্মকর্তারা এসে ঘটনাস্থল থেকে শিবির হিযবুতের ৩০ নেতাকর্মীকে আটক করেন। আর সেই রাতে ২৫ জনকে ছেড়ে দেন ওসি মুস্তাফিজ। এনিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ আওয়ামীলীগের নেতারাও। এদিকে, ১২'শ শিক্ষক শিক্ষিকাও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ওসির অপসারণ দাবি করেছিলেন। তবুও নীরব সিএমপি!
সংশ্লিষ্ট থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ফ্রুট সোহেলসহ বিভিন্ন অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, অপরাধের আখড়াসহ বিভিন্ন খাত থেকে মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় একাধিক অভিযোগও জমা হয়েছে সিএমপি কার্যালয়ে। তবুও বিশেষ কারো আশীর্বাদে বহাল থেকে যান তিনি। এবার পুলিশ সদরদপ্তরের অনুসন্ধানে চান্দগাঁও ওসি ও তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের নানা অপকর্মের তথ্যপ্রমাণ উঠে আসে। ফলে যেকোন মুহুর্তে তিনিও বদলি হতে যাচ্ছেন, আর বদলি ঠেকাতে জোর তদবির চালাচ্ছেন।
এসআই কাউছার হামিদ চান্দগাঁও থানায় কর্মরত আছেন অন্তত চার বছর। বিভিন্ন অপরাধীদের আটক, মাদক উদ্ধারসহ বিভিন্ন অভিযানের কারণে সুনাম কুড়িয়েছেন ব্যাপক। তবে অন্তরালে জড়িয়ে গেছেন নানা অপকর্মে। পতিতালয়, মাদক কারবার, জুয়ার আখড়াসহ বিভিন্ন অপরাধীর কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেয়ার অভিযোগ এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সাথেও রয়েছে সখ্যতা। নিরীহ লোকজনকে ফাঁসিয়ে কিংবা ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিন। তার এসব অপকর্মের টাকা তোলা ও সোর্স হিসেবে কাজ করছে এক কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দা মৃত জাফরের ছেলে সাদ্দাম।
২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারী দিন-দুপুরে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এক বিউটিশিয়ান নারীকে নিপীড়ন ও আটকে রেখে ৬ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছিল চান্দগাঁও থানার তিন পুলিশ কর্মকর্তা ও সোর্সের বিরুদ্ধে। দুই কর্মকর্তা প্রথমে সাসপেন্ড, পরে বদলি হলেও বহাল তবিয়তে রয়ে যায় এএসআই শংকর বড়ুয়া। সেই ঘটনার টাকাও উদ্ধার হয়েছিল ততকালীন পুলিশ কমিশনারের হস্তক্ষেপে। শংকরের উপর সিএমপি'র এক উর্ধতন কর্মকর্তার আশীর্বাদে রয়েছেন এখনো চান্দগাঁওতে। এছাড়াও, নানা অপকর্মে জড়িয়ে গেছেন এসআই মোফিজুর রহমান, অধীর চৌধুরী, এএসআই কামাল উদ্দিন। এই থানায় ৬-৭ বছর কর্মরত আছেন ওসির বডি গার্ড কনস্টেবল সজীব মিয়া ও ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত বহদ্দারহাট পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল আনিস।
গতবছর সিএমপি ১২জন বিতর্কিত এসআই'কে নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে একযোগে বদলি করেছিল সিএমপি। সেই তালিকায় ছিল সদরঘাট থানা সাবেক এসআই মোর্শেদ আলম। কদমতলি বাণিজ্যিক এলাকায় বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও লোকজন আটকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন কোটি টাকা। নগরীর গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় করেছেন ছয়তলা বাড়ি। বর্তমানে মোর্শেদ অন্য জেলায় বদলি হয়েছেন। তবে তার অপকর্মের সহযোগী এসআই গৌতম চৌধুরী এখনো বহাল রয়েছেন সদরঘাট থানায়। বন্দর থানার আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ সালাউদ্দীন। তিনি লাল গোডাউন ফাঁড়ির ইনচার্জ। আর এ থানায় কর্মরত অন্তত ৬-৭ বছর। বন্দর কেন্দ্রিক সক্রিয় চাঁদাবাজ ও নানা অপরাধী চক্রকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে বনেছেন কোটিপতি। তার খুঁটির জোর এতটা রূঢ়, সিনিয়র কর্মকর্তাদের উল্টো শাসিয়ে দেন রীতিমতো। এছাড়া, এসআই মোহাম্মদ জহির ও ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত এএসআই নয়ন বড়ুয়া দীর্ঘদিন কর্মরত এখানে।
চকবাজার থানা এলাকায় সোর্স দিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে আলোচনায় উঠে আসেন এস আই তালেব আলী ও এএসআই আবুল বাশার। আবুল বাশারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, নিরীহ লোকজনকে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিলেও নামমাত্র তদন্তে থেমে যায় সমস্ত প্রক্রিয়া। তার খুঁটির জোর কোথায় সেই প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মুখেমুখে। তার আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকা সোর্স ল্যাড়া নাছির, পলাশ ও সুমন অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এসব সোর্স দিয়ে বিভিন্ন অভিযানে উদ্ধার মাদকদ্রব্য আত্মসাৎ ও বিক্রয়ে জড়িত আবুল বাশার। প্রায় দশ বছর ঘুরেফিরে চট্টগ্রামে কর্মরত আছেন কোতোয়ালি থানার এস আই শিমুল চন্দ্র দাস। এর আগে তিনি সদরঘাট থানায় অন্তত ৫/৬ বছর টানা থাকাকালীন একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। ক্রেডিট পেতে কিংবা উদ্দেশ্যে প্রণোদিত হয়ে অনেককে মিথ্যা মামলায় মাসের পর মাস জেলে কাটিয়েছেন। বর্তমানে কোতোয়ালি থানার নিউ মার্কেটের আশপাশ এলাকায় নানা অপকর্মে সক্রিয় আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা। বিভিন্ন অপরাধীর সাথেও রয়েছে সখ্যতা।
খুলশী থানায় অন্তত ৫-৬ বছর কর্মরত আছেন এএসআই জাহাঙ্গীর আলম ও মোহাম্মদ হীরণ মিয়া। জমি দখল, নিষিদ্ধ পরিবহন স্ট্যান্ড, গেস্ট হাউজ নিয়ন্ত্রণ, গ্রেফতার বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে হয়েছেন অঢেল অর্থের মালিক। জাহাঙ্গীরের রয়েছে খুলশীতেই ফ্ল্যাট। এছাড়াও, বিতর্কিত ও ঘুরেফিরে দীর্ঘদিন সিএমপিতে কর্মরত আছেন পাঁচলাইশ থানার- এসআই আবদুল মোতালেব, কামরুল ইসলাম আরেফিন, তিমির মিহির, বাকলিয়া থানার এএসআই মোহাম্মদ রমজান, এসআই আসাদ ও কারিমুজ্জামান, ডবলমুরিং থানার এসআই মোঃ হারুন উর রশীদ, এসআই অর্ণব বড়ুয়া, সদরঘাট থানার এসআই মাহতাব উদ্দিনসহ অনেকেই। এ সিএমপি কমিশনার জানিয়েছে যাদের বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ আসছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বদলীর আদেশ পরিবর্তনের চেষ্টা এটা স্বভাবিক ব্যাপার যে কেউ পছন্দের জায়গায় থাকার চেষ্টা করে।
এমএসএম / জামান

চট্টগ্রামে রাস্তায় ৫০ হাজার অনিবন্ধিত সিএনজি, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

কসবায় টাইফয়েড টিকা ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন

কুষ্টিয়ায় জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গণে ঝুঁকিতে হাজারো পরিবার, দ্রুত সংস্কারের দাবি স্থানীয়রা

ধামরাই প্রেস ক্লাবের নির্বাচন : সভাপতি তুষার, সম্পাদক আহাদ

সাপ্টিবাড়ী ডিগ্রি কলেজে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ, রফিকুল আলমের চাকরিচ্যুতি দাবিতে মানববন্ধন

তাড়াশে বিয়ে বাড়িতে চুরির ঘটনা

টুঙ্গিপাড়ায় শুরু হয়েছে টাইফয়েড ভ্যাকসিন টিকাদান কর্মসূচি

তেঁতুলিয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পর্যটন কেন্দ্র এখন মোহনগঞ্জের গলার কাঁটা

অভয়নগরে শ্রমিক ইউনিয়নের নব-নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণ

রাঙামাটিতে টাইফয়েড টিকাদান শুরু

শিবচরে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫ এর শুভ উদ্বোধন
Link Copied