শিশু পর্নোগ্রাফিতে উদ্বেগ

শিশু পর্নোগ্রাফির অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রন্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে মোঃ আব্দুল হালিম (১৯), মোজাহিদ (২২) এবং মোঃ আব্দুল্লাহ (১৮)-কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় আটককৃতদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন এবং আটটি সিম কার্ড জব্দ করা হয়।ডিসি সাইবার ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তা আ ফ ম আল কিবরিয়া এর সার্বিক তত্বাবধায়নে অভিযান পরিচালনা করেন সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আরিফুল হোসেইন তুহিন।
গ্রেফতারকৃতরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং টেলিগ্রাম ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি ভিডিও বিক্রয় করার বিজ্ঞাপন প্রচার করে মানুষকে প্রলুব্ধ করতো। মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় ব্যবহার করে অবৈধ ই-ট্রানজেকশনের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করতেন তারা। শিশু পর্নোগ্রাফির ভিডিওসহ সকল ধরনের পর্নোগ্রাফি ভিডিও তারা ক্লাউড স্টোরেজ মেগা নামক সফটওয়্যার এর মাধ্যমে সরবরাহ করে আসছিল।
গ্রেফতারকৃতদের মোবাইল ফোনে বিপুল পরিমাণ পর্ণোগ্রাফিক ভিডিও কন্টেন্ট পাওয়া যায়। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ভিডিও কন্টেন্ট ইন্টারনেটের ডার্ক ওয়েব থেকে সংগ্রহ করা মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। ডার্ক ওয়েব থেকে তারা শিশু পর্নোগ্রাফি ভিডিও, বিভিন্ন ধরনের অ্যাবিউসিভ ভিডিও সংগ্রহ করে গ্রেফতারকৃত মো. আব্দুল্লাহ অনলাইন ক্লাউড স্টোরেজ মেগা ব্যবহার করে অপর গ্রেফতারকৃতদের কাছে অর্থের বিনিময়ে সরবরাহ করতেন। পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়াতেও একই পদ্ধতিতে পর্ণোগ্রাফিক ভিডিও সরবরাহ করে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করতেন তারা।
গ্রেফতারকৃত মোজাহিদ এবং মো. আব্দুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং টেলিগ্রাম ব্যবহার করে উঠতি বয়সের তরুণ ও যুবকদের টার্গেট করে এসব পর্নোগ্রাফি ভিডিও কন্টেন্ট বিক্রয় করছিল। গ্রেফতারকৃতরা ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস অ্যাকাউন্ট খুলে ই-ট্রানজেকশনের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করতো। সব মিলে তারা ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।এ বিষয়ে রমনা মডেল থানায় মামলা রুজু হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
সিটি সাইবার এর এডিসি নাজমুল বলেন, ‘অভিযুক্তদের কাছে বেশ কিছু শিশু পর্নোগ্রাফির কন্টেন্ট পাওয়া গেছে। তাদের সাথে আরো অনেকেই জড়িত আছে এবং জড়িতদের শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হবে।’এর আগে গত সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ায় শিশু পর্নোগ্রাফির অভিযোগে জোবাইদুল আমিন (২৪) নামের এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সঙ্গে এক যৌথ তদন্তের পর (১৯ সেপ্টেম্বর) দেশটির নেগেরি সেম্বিলান রাজ্যের সেরেম্বান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে জোবাইদুলের বিরুদ্ধে ভিডিও ও ছবি তোলার মাধ্যমে শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরির অভিযোগে আটটি এবং মোবাইলফোন, ইউএসবি ড্রাইভ ও হার্ডড্রাইভে শিশু পর্নোগ্রাফির ৭৪০টি ছবি থাকায় আরও চারটিসহ মোট ১২টি অভিযোগ আনা হয়।
শিশু পর্নোগ্রাফি এক ধরনের অপরাধ। অনেক দেশে এই অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান আছে। তার কারণ শিশুদের উপর নেতিবাচক মানসিক প্রভাব পড়ে। ইন্টারপোলের ১৮৭ -এ ৯৪ সদস্য দেশগুলোর জন্য প্রাথমিকভাবে এর জন্য ২০০৮ সালে আইন বাস্তবায়িত হয়। মূলত ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই কাজ করার জন্য মুনাফা কোম্পানি নিষিদ্ধ করতে এই আইন তৈরি করা হয় । ১৯৮৬ সালে এই আইন পরিবর্তন করে একই অপরাধী পুনরায় অপরাধ করলে আরো বেশি শাস্তির বিধান যোগ করা হয়েছে।
এদিকে বেসরকারি সংস্থা ইনসিডিন বাংলাদেশ-এর একটি জরিপ বলছে, দেশের শতকরা ৭৫ দশমিক ১ শতাংশ শিশু, যাদের মোবাইলে ইন্টারনেট ডাটা রয়েছে তারা পর্নোগ্রাফি দেখছে। আত্মীয়, অনাত্মীয় বা বন্ধুদের কৌতুহলে সাড়া দিয়ে শিশুদের মধ্যে পর্নোগ্রাফি দেখার প্রবণতা বাড়ছে। শতকরা ২৬ জন মেয়েশিশু বলেছে যে, তারা আত্মীয়দের সঙ্গে পর্নোগ্রাফি দেখছে। সংস্থাটি বলছে, মোটামুটি প্রগতিশীল দেশেও পর্নোগ্রাফির পর্যাপ্ত ডাটা নেই৷ ৮০ শতাংশ গবেষণা হয়েছে শিক্ষকদের সহায়তায় ছাত্রদের উত্তরদাতা হিসেবে ব্যবহার করে।
এর আগে ২০১৭ সালে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপে দেখা যায়, ঢাকার স্কুল পড়ুয়াদের প্রায় ৭৭ ভাগ পর্নোগ্রাফি দেখে৷ জরিপটি অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে করা হয়৷ তাতে দেখা যায়, পর্নোগ্রাফি তারা ছবি, ভিডিও, অডিও ও টেক্সট আকারে ব্যবহার করে৷ জরিপে বেরিয়ে আসে শিক্ষার্থীরা প্রধাণত মোবাইল ফোনে অনলাইনে পর্নোগ্রাফি দেখে৷ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন-এর জরিপে দেখা যায় দেশে এর প্রবণতা বাড়ছে৷ টেক্সট, ছবি ও ভিডিও-র পাশাপাশি সেক্স টেক্সটের অডিও তৈরি করেও ছাড়া হচ্ছে অনলাইনে।
পাশের দেশ ভারতে ইন্টারনেটে শিশু পর্নোগ্রাফির দৌরাত্ম্য রুখতে বড়সড় পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই। দেশটির মোট ২০টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৫৬টি ঠিকানায় তল্লাশি অভিযান শুরু করে। অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন মেঘচক্র’। ইন্টারনেটে বাড়তে থাকা শিশু পর্নোগ্রাফি রুখতে ২০১৯ সালে বিশেষ সেল গড়েছিল সিবিআই। শিশু যৌন নিগ্রহ এবং যৌন শোষণ বিরোধী-এই সেলের কাজ হল ইন্টারনেটে নজরদারির মাধ্যমে শিশু পর্নগ্রাফি ছড়ানোর ঘটনা চিহ্নিত করা এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পকসো ও তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা। কিন্তু ধারাবাহিক নজরদারি সত্ত্বেও শিশু পর্নোগ্রাফি-চক্রকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ এখনো বিদ্যমান। কয়েক মাস আগে দেশটির জাতীয় শিশু অধিকার সংরক্ষণ কমিশন (এনসিপিসিআর) ইন্টারনেটে শিশু পর্নোগ্রাফির রমরমা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেনের (এনসিএমইসি) বলছে, শিশুদের দিয়ে যৌনদৃশ্যে অভিনয় করানো, তাদের যৌন নিপীড়নের ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং এসব আদান–প্রদানের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। শিশু যৌন নির্যাতন বন্ধ, শিশু পর্নোগ্রাফি নির্মূলসহ শিশুদের অধিকারসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠানটি। ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট তাদের নেটওয়ার্কে শিশুদের যৌনকাজে ব্যবহার বা যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এনসিএমইসিকে জানিয়ে থাকে। এনসিএমইসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে শিশু পর্নোগ্রাফি, শিশুদের যৌন নিপীড়নসংক্রান্ত ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং আদান-প্রদানের সর্বোচ্চ ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ৪৩০টি ঘটনা ঘটেছে ভারতে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে ঘটেছে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৯০টি, তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইরাকে ঘটেছে ১০ লাখ ২৬ হাজার ৮০৯টি, চতুর্থ অবস্থানে থাকা আলজেরিয়ায় ঘটেছে সাত লাখ ৫৩৫টি এবং পঞ্চম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশে ঘটেছে পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪২টি। সম্প্রতি এনসিএমইসির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এমএসএম / এমএসএম

বিআরটিএ-এর দালালি করে কয়েক কোটি টাকার মালিক

চট্টগ্রাম দিয়ে কখনই দেশ ছেড়ে বিদেশে যেতে চাইনি : রায়হান কবির

দেড় হাজার টাকা বেতনের সেই কর্মচারী এখন শতকোটি টাকার মালিক

ক্রীড়া পরিদপ্তরে ভয়াবহ লুটপাট

ভিন্ন মতের শিকার: জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যানের দীর্ঘ প্রশাসনিক দুর্ভোগ

রেলের “র” এর ষড়যন্তকারীরা আবারো সক্রিয়

ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত

দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিআরটিএ’র ৪ কর্মকর্তার সাজা মওকুফে তৎপরতা

নির্বাচন সামনে রেখে সীমান্তে বেড়েছে অবৈধ অস্ত্রের চালান

ক্রীড়া পরিদপ্তরে ভয়াবহ লুটপাট!

৯২৬ টন পণ্যের হদিস নেই কাস্টমসে

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হালিমের পাহাড় সমান দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে না কেন?
