ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

টাকার বিনিময়ে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জেনের স্বাক্ষরযুক্ত ভুয়া স্বাস্থ্য সনদ প্রদান


নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ব্যুরো photo নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশিত: ১৫-১১-২০২২ দুপুর ৪:৩৪

জাতির জনকের ছবিযুক্ত চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রদান করা হচ্ছে ভুয়া স্বাস্থ্য সনদ। সিভিল সার্জন অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে মাঠপর্যায়ে ভুয়া সনদ বিক্রি করতে গিয়ে কয়েকজন জনতার হাতে ধরাও পড়েছে। বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে জানাজানি হওয়ার ভয়ে অভিযুক্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের কৌশলে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। 

এসব ভুয়া সনদ চট্টগ্রামের জেলা-উপজেলার বিভিন্ন হোটেল-রেষ্টুরেন্ট, খাদ্য কারখানা, খাদ্যর দোকান শপিংমলসহ খাদ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিক কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। পটিয়া উপজেলার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শাহ ইমরান ১৭ বছর ধরে একই এলাকায়, লোহাগাড়া উপজেলার মো. শের আলীসহ কয়েকজন প্রায় এক যুগের বেশী সময় ধরে চাকুরী করায় বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও সিভিল সার্জন অফিসের কয়েকজন কর্তা ব্যক্তির সাথে সখ্যতা থাকায় চাকুরী করে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের দপ্তরেই তৈরি হয় এসব ভুয়া স্বাস্থ্য সনদ। সিভিল সার্জন প্রতিটি সনদ বিক্রি করেন দুই থেকে তিন হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার অবস্থান বুঝে দুই তিনশ টাকা দরে। আর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টররা তা কিনে নিয়ে খাদ্য সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের মালিক ও শ্রমিকদের নিকট বিক্রি করছে আসছেন।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, গত ২৬ সেপ্টেম্বর মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ব্যবসায়িরা উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শংকর প্রসাদ বিশ^াস এর স্বাস্থ্য সনদ বেচাকেনার অভিযোগ তুলে ধরেন।

এ সময় নিরাপদ খাদ্য আইনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই এধরণের স্বাস্থ্য সনদ তৈরি এবং বেচাকেনার সুযোগ আছে কিনা জানতে চান ইউএনও। তবে শংকর প্রসাদ বিশ্বাস কোনো উত্তর দিতে পারেননি। পরে নিজের ভুল হয়েছে বলে উপস্থিত ব্যবসায়িদের নিকট ক্ষমা চেয়ে পরিবেশ নিজের অনুকূলে নেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুঠোফোনে বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াস চৌধুরীকে অবহিত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। 

এর আগে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর স্বাস্থ্য সনদ বিক্রি করতে গিয়ে ব্যবসায়িদেও হাতে ধরা পড়েন। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারী ওয়াহেদ জানান, খবর পেয়ে থানায় ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি ব্যবসায়িদের কাছ থেকে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজুর রহমান সনদ বিক্রি করে আদায় করছিলেন। এক পর্যায়ে ব্যবসায়িরা তাকে সন্দেহ করে নাজেহাল করে। পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মহোদয়ের অনুরোধে থানা মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। ওয়াহেদ বলেন, ব্যবসায়িদের কাছ থেকে তিনি কোনো টাকা নিতে পারেন না। এভাবে বাজারে দোকানে দোকানে টাকা তোলা অবশ্যই তার অপরাধ, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। 

দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া বাজারের এসএন বেকারির ব্যবস্থাপক মো. বাবর জানান, গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওমর ফারুক নামে এক ব্যক্তি আমাদের বেকারিতে এসে নিজেকে উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পরিচয় দেন। এ সময় তিনি বেকারির কর্মচারি কতজন জানতে চান। ১০জন বলার পর তিনি বলেন সবার স্বাস্থ্য সনদের জন্য ১০ হাজার টাকা দিন। আর যাতে ভ্রাম্যমান আদালত না আসে সে ব্যবস্থা করবেন। তার জন্য কিছু খরচ দিন। পরে তাকে কোনোভাবে বুঝিয়ে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করা হয়। এসএন বেকারির ব্যবস্থাপক বাবর বলেন, ওমর ফারুক আমাদের বলেছেন কয়েকদিন পর সিভিল সার্জন অফিস থেকে সনদ এনে দিবেন। এরপরই তিনি বাজারের এনাম বেকারিতে গিয়ে হানাদেন। সে বেকারি থেকেও একইভাবে অর্থ আদায় করেন ওমর ফারুক। পরে গণহারে বিভিন্ন খাদ্যস্থাপনা থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন বাজারের ব্যবসায়িরা। এ ঘটনার পর চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন জনস্বার্থে বদলী দেখিয়ে তাকে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান।

সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বেশ কিছু স্যানিটারি ইন্সপেক্টর সিভিল সার্জনের দেয়া স্বাস্থ্য সনদ বিক্রি করতে গিয়ে ধরাশায়ি হয়েছেন। এরমধ্যে কয়েকজনকে এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় বদলী করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। মিরসরাই উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শংকর প্রসাদ বিশ^াসকে বদলী করা হয়েছে পাশ^বর্তী সিতাকুন্ডে। তার বদলীর আদেশে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে বদলী হলেও অফিসিয়াল রিপোর্টে প্রশাসনিক কারণে উল্লেখ করা হয়েছে। সন্দ্বীপের নিজবেতনের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ওমর ফারুককে বদলী করা হয়েছে হাটহাজারী উপজেলায়। তবে তার বদলীর আদেশের কারণ জনস্বার্থে করা হয়েছে। এদিকে সীতাকুন্ডের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ফাতেমা বেগমকে বদলী করা হয়েছে মিরসরাই উপজেলায়। অফিস আদেশে তার বদলী প্রশাসনিক কারণ বলে উল্লেখ করা হয়। স্বাস্থ্যের চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালকের দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, জেলা-উপজেলার হাটবাজারে খাদ্য স্থাপনায় কর্মকর্তারা কোনো ছোঁয়াছে রোগে আক্রান্ত কিনা তা শারীরিক পরীক্ষার পর সনদ দেওয়ার কথা। পটিয়ার স্বাস্থ্য পরির্দশক শাহ ইমরান জানান, এখন সনদ নেয়ার বিষয়টি ব্যবসায়ীদের কাছে বাধ্য না, তবে কেন নিচ্ছে কেন দিচ্ছে আমি বলতে পারব না, এ ধরণের অভিযোগ উনার বিরুদ্ধে নেই বলে দাবি করেন। 

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া জানান, মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের বিরুদ্ধে অনেক বদ নাম রয়েছে, আমি তাদের রিপোর্টগুলো শুধুমাত্র দেখাশুনা করতাম, এখন তাও করি না, তাদের বিষয়টি এখন দেখার জন্য নতুন একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানান।

এসব বিষয়ে জানতে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসলে নিয়ম হচ্ছে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া, অফিসিয়াল নিয়মে সেটা একটা তার জন্য বড় শাস্তি। তবে অফিসিয়াল কাগজে কি লেখা আছে সেটামূখ্য না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক বদলীয় করা হয়েছে এটা হচ্চে মূল বিষয়। 

এমএসএম / জামান

কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি নম্বর ক্লোন করে প্রতারণার চেষ্টা

'মাছে ভাতে বাঙালি' প্রবাদটি বর্তমানে শুধুমাত্র বইপুস্তকেই সীমাবদ্ধ

তালায় বিএনপি'র ত্যাগী ও পরীক্ষিত এক যোদ্ধার নাম আব্দুর রকিব সরদার

অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণে জলাবদ্ধতায় শত একর জমি চাষের অনুপযোগী

পেকুয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় জামায়াত নেতা নিহত

বরিশালের বাকেরগঞ্জ নিয়ামতি ইউনিয়নে বিএনপি'র পথসভা অনুষ্ঠিত

মাদকমুক্ত টুঙ্গিপাড়া গড়বঃ নবাগত ওসি

ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা" তানোরে আমন খেতে সাতরা পোকার আক্রমণ

কুমিল্লার মহাসড়ক দখলমুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান

ঈশ্বরদীতে মৎস্য পোনা অবমুক্ত করণ করা হয়েছে

লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় সভা

মাতাশমঞ্জিল মুক্ত খেলাঘরের উন্নয়নকল্পে ১ লক্ষ টাকা অনুদান দিলেন ছাত্রনেতা শামীম হোসেন

ত্যাগি নেতা জহুর আলম জহুর সংবর্ধীত