মাদারীপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে দুই গ্রামের মানুষ
মাদারীপুর সদর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। ফলে ভাঙনের মুখে পড়ে কয়েকটি গ্রাম ও শত শত হেক্টর কৃষি জমি। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাননি ভুক্তভোগী গ্রামবাসী। প্রতিবাদ করতে গেলেই হুমকি-ধমকির শিকার হচ্ছে অসহায় গ্রামবাসীরা। অতিদ্রুত এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে গ্রাম ও কৃষিজমিগুলো বাঁচাতে সরকারের দৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
আত্মঘাতী ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন রাত ৮ থেকে ভোর ৭টা পর্যন্ত অবৈধভাবে সদর উপজেলার পাঁচখোলা, কাজিরটেক,কুলপদ্দি, মস্তফাপুর চোকদার,ঘটকচরসহ কয়েকটি স্পটে চালানো হয় এই বালি উত্তোলনের কাজ ।বালি উত্তোলন করা হয় মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের বলাইচর এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীতীরবর্তী এলাকা কালিকাপুর ইউনিয়নের দক্ষিন হোসেনাবাদ ,বলাইচর,চরনাছনা, হবিগঞ্জ, হোসনাবাদসহ প্রায় ১০ টির বেশী গ্রাম রয়েছে ।এসব গ্রামগুলি নদীর তীরবর্তী হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৩৫ টি ঘড় বিপাকে শতাধিক পরিবার। অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালিকাটার কারণে এই পরিবারগুলো রয়েছে আতঙ্কে। কখন যেন তাদের বসত ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। শুধু গ্রামই নয় জেগে ওঠা তীরে রয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের লিজ নেয়া শত শত হেক্টর কৃষি জমিও। গ্রাম আর কৃষি জমি সংলগ্ন নদী থেকে সরকারের নিয়ম না মেনে অপরিকল্পিত ভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
সিরাজ মাতুব্বর, মতি খান, আলমগীর খান, বিসাই আকন, রাজ্জাক হাওলাদার, ফজেল খা,রত্তন খা,সালাম খাসহ একাধিক পরিবার ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদী ভাঙনের কবলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতভিটা। নদীর এপার থেকে ওপারে সরিয়ে নিতে হয়েছে বসতভিটা অনেকবারই। নিঃস্ব পরিবারগুলো প্রশাসনের কাছে গিয়ে পায়নি কোনো সমাধান। সরকারের কাছে তাদের জোর দাবি এই অবৈধ ড্রেজার বন্ধের জন্য। তাহলে পরিবারগুলো একটু মাথা গুঁজে থাকতে পারবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নদীর গভীর থেকে বালু উত্তোলন করায় ভেঙ্গে যাচ্ছে তীরবর্তী বসতঘর ও ফসলি জমি। নদীগর্ভে অচিরেই বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে গ্রাম ও ফসলি জমিগুলোর।
হোসেনাবাদ এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, আড়িয়াল খাঁ নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে গত বছরের মার্চ মাসে আমরা গ্রামবাসী উপজেলা প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করি। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। ইতোমধ্যেই হোসেনাবাদ মৌজার অনেক কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কৃষি জমিতে বালু পড়ে ফসল চাষের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। আবাদি কৃষি জমি নদী গর্ভে হারিয়ে অনেক কৃষক নি:স্ব হয়ে গেছে। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখলে বর্ষা মৌসুমে হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়ি-ঘর ও জমিজমা সবকিছু নদী গর্ভে হারিয়ে ফেলবেন। বালু খেকোদের কিছু বলতে গেলেই প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
এর আগে নদীর কবলে ৮ বার বসতভিটা বিলীন হওয়া হোসেনাবাদ গ্রামের আরেক কৃষক সিরাজুল মাতুব্বর জানান, প্রতিবছরের চাইতে এবার নদী ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারন করছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও বিস্তীর্ণ এলাকা। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবাধে বালু উত্তোলন করছে ওই চক্রটি। তাদের ভয়ে অনেকে মুখ খুলে কিছু বলতে পারছে না। এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি।
৬০ বছরের বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম আক্ষেপ নিয়ে বলেন,সাংবাদিকদের বলে লাভ কি পুলিশ প্রশাসনকে বলেও কোন প্রতিকার হয়নি। বালি কাটার কারণে নদীর পাড়ে আমার বাবা-মায়ের কবর ছিল সেই কবরও ভেঙে গেছে। বাধা দিতে গেলে আমাদের মারতে আসে আমরা এখন কোথায় যাব। আমরা তো তাদের সাথে পারিনা তারা অনেক ক্ষমতাশালী লোক।
এই বালি কাটার কারণে আমাদের ঘড় অনেকবার ভেঙ্গেছে।এখন পরের জমিতে ঘড় তুলে থাকি। যাওয়ার আর কোন জায়গায় নেই যা জমিজমা ছিলো সেগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন যদি সরকার আমাদের দিকে একটু তাকায়।
কালিকাপুর ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল সাত্তার ফকির বলেন, আমরা নদীভাঙ্গা এলাকার লোক।ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু কাটার কারণে আমাদের বসতঘর দুইবার নদীতে ভাঙছে ।যারা ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু কাটে নিষেধ করা হলেও থামেনা।বাধ্য হয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।এখন আরো বেশি করে বালু কাটে।বালু কাটার সাথে সম্পৃক্তরা হলেন, ফারুক সরদার(৪৮),মজিবর,(৪৫),শফিক মাতুব্বর (৩৫),দেলোয়ার মুন্সিসহ (৩৮)অনেকে।এরা অনেক ক্ষমতাশালী লোক তাদের বাধা দিতে গেলেই তারা আমাদেরকে মারতে আসে।এবং বালি যেখানে কাটে ওই ড্রেজারের ভিতরে অস্ত্র রাখে এজন্য কেউ বাধা দিতে পারে না ভয়ে। এদেরকে প্রতিহিত করার জন্য আমি জোর দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে। সরকার যদি পদক্ষেপ নেয় তাহলে আমরা এখানে থাকতে পারবো। আর নাহলে বসত ঘড় বিলীন হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ফারুক সরদার,মজিবর খা,শফিক মাতুব্বর দেলোয়ার মুন্সি সহ সবাই জানান, এখন আর বালু উত্তোলন করা হয় না। আমরা এ বিষয় কিছু জানিনা। এ ব্যাপারে কালিকাপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ ফাইকুজ্জামান বাবুল বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭ টার দিকে নদীতে বালু উত্তোলনে নামে আর সকাল ৮টায় বালি কাটা বন্ধ করে।আমরা শত বাধা দিলেও আমাদের কথা শোনে না। উল্টো আমাদের দিকে তেরে আসে। কোন উপায়ন্ত না পেয়ে এই অবৈধ ড্রেজার বন্ধ করার জন্য আমি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভূমি কর্মকর্তা, ভূমি ম্যাজিস্ট্রেটসহ সরকারি সকল সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেছিলাম।কিন্তু তারা এখনো কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।নদীর পারের লোকজনের আতঙ্কে দিন কাটছে।
জানতে চাইলে মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ বি এম মাহবুবুল আলম খন্দকার বলেন, যে এলাকায় ভাঙন বেশি, তার একটি তালিকা করা হয়েছে। শিগগিরই সেখানে জিওব্যাগ দেওয়া হবে। আমরা স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধে সারা জেলায় দেড় হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রকল্পটির সমীক্ষা চলছে। সমীক্ষার প্রতিবেদন হাতে আসলেই আমরা বাঁধের কাজ সম্পন্ন করব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মাইনউদ্দীন জানান, নদী ভাঙন রোধ করতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এমএসএম / জামান
গাইবান্ধার ফুলছড়িতে প্রাথমিক শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
দুমকীতে দুই আওয়ামীলীগ নেতা আটক
চন্দনাইশে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের তথ্য উপস্থাপন কর্মশালা
পবিপ্রবির দুই শিক্ষার্থী পুনঃভর্তির আদেশ
দৈনিক সকালে সময় পত্রিকাই সংবাদ প্রকাশের পর পানিবন্দি থেকে মুক্তি পেলেন অর্ধশত পরিবার
জয়পুরহাটে কাব ক্যাম্পুরী ও শতভাগ অর্জনকল্পে প্রস্তুতিমূলক ক্যাম্পের বর্ণাঢ্য উদ্বোধন
শেরপুরের শ্রীবরদীতে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত
সিংড়া মডেল প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন
বড়লেখায় ৩ দফা দাবিতে সহকারি শিক্ষকদের কর্মবিরতি অব্যাহত, ১৫১ প্রাইমারি স্কুলে অচলাবস্থা
কুমিল্লায় ৫ হাজার গাড়ীবহর নিয়ে বিএনপিনেতা গফুর ভূইয়ার প্রচারনা
রাজশাহীতে ‘‘অপারেশনস্ ফার্স্ট লাইট’’ অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র, মাদকদ্রব্য ও মোটরসাইকেল উদ্ধার: গ্রেফতার: ১৩
বালাগঞ্জে পরিচ্ছন্নতা ও রোগীর স্বাস্থ্য রক্ষায় নতুন উদ্যোগ নিলেন ডা. মামুন
টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলি
Link Copied