ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

অতিথি পাখির অভয়ারণ্য নিরাপদ হোক 


রিয়াদ হোসেন photo রিয়াদ হোসেন
প্রকাশিত: ৭-১২-২০২২ বিকাল ৬:২২

অপরুপ বাংলার প্রকৃতিতে চলছে শীতের আমেজ। কুয়াশার চাঁদর ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে সূর্যিমামা। ঘাসের উপরে শিশিরের ছোঁয়া আর কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের রাস্তাঘাট সমস্বরে শীতের আর্বিভাবকে জানান দিচ্ছে। গ্রামের কর্মব্যস্ত কৃষক ছুটছে ক্ষেত-খামারে, গাছিরা ব্যস্ত হয়ে উঠেছে খেজুর গাছ তোলায়। চারিদিকে সৌন্দর্যের ছড়াছড়িতে প্রকৃতি যেন আপন মনে সাজতে শুরু করেছে। এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারো হিমালয়ের পাদদেশ আর রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিরা। বিশেষ করে সাইবেরিয়া, ফিলিপিন্স, আসাম, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ডসহ তিব্বতের উপত্যকা অঞ্চল থেকে শীতের তীব্র প্রকোপে এসব পাখিরা নিজেদেরকে কিছু দিনের জন্য এই পরিবেশে মানিয়ে নেয়। 

নির্দিষ্ট একটা সময় শেষে তারা আবারো হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ফিরে যায় তাদের স্থায়ী আবাসস্থলে। মূলত খাদ্য ও পরিবেশগত কিছু সুবিধায় নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য তারা নির্দিষ্ট একটি  সময়ের জন্য দেশান্তর হয়ে আমাদের দেশে পাড়ি দেয়। অতিরিক্ত শীতের কারনে বহু পথ পাড়ি দিয়ে আসা এসব পাখিদের পালক পড়ে যায়। পরবর্তী এ পরিবেশে বেশকিছু থাকার পর অনুকূল পরিবেশ পেয়ে তারা আবারো স্বাভাবিক গড়নে ফিরে আসে। তবে আগত এসব অতিথি পাখিদের নিরাপদ এই আবাসস্থলে হানা দেয় আমাদের দেশের একশ্রেণির অতিলোভী শিকারীরা। তারা ফাঁদ পেতে থাকে বসে এই মৌসুমের জন্য। তাদের এমন অমানবিক নিষ্ঠুর কাজের জন্য আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে অতিথি পাখি বিচরণ। একটি সময়ে যে পরিমাণ পাখি অন্যদেশ থেকে আমাদের দেশে আসতো এখন তা অনেকাংশে কমে এসেছে। যা আমাদের প্রকৃতির জন্য হুমকিস্বরূপ। পাখি শিকারীদের এমন আচারন বন্ধ করা না করা গেলে একটি সময় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। যা আমাদের জন্য কোনভাবেই কাম্য নয়। 

সাধারণত কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের পাখিরা যখন ওই পরিবেশে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে না কিংবা সেখানে টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে তখনি তারা অনুকূল আবহাওয়া বা পরিবেশে আসতে শুরু করে। শীত প্রধান এসব দেশে যখন শীতের প্রকোপ কমতে থাকে তখনি তারা আবারো ফিরে যায় তাদের আবাসস্থলে। বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ একটি দেশ। যে কারনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে অতিথি পাখির অবকাশ যাপনের জন্য এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে বেঁচে নেয়। শীত মৌসুমে এদেশে আসা পাখিদের মধ্যে সোনাজঙ্গ, খুরুলে, ল্যাঞ্জা, হরিয়াল, দুর্গা, রাজশকুন, হলদে খঞ্চনা, কুলাউ, তিলে ময়না, রামঘুঘু, কুনচুষী, বাতারণ, শাবাজ, জলপিপি,  লালবন মোরগসহ নানা প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, এক দশক আগেও এদেশে ২০০ থেকে ২১৫ প্রজাতির অতিথি পাখি আসত। তবে এ সংখ্যা বছর গড়াতেই ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম কারন হলো অবাধে পাখি শিকার আর জলাভূমির সংকট। একটি সময় নিজেদের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে হাজার মাইল দূরত্বে আসলেও এখন তাদের জন্য তা কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতো দূর এসেও রেহাই পাচ্ছে না আমাদের কিছু অসৎ মানুষের হাত থেকে। এসব শিকারীরা কখনও এয়ার গান ব্যবহার করে আবার কখনও তারের ফাঁদ পেতে তাদের শিকার করে হত্যা করছে। গ্রামের কিছু মানুষ অভাবের তাড়নায় করলেও বেশিরভাগ উচ্চ বিলাসী জীবন যাপনকারী মানুষ এসব পাখি নিজেদের সখ আর রুচির কারনে তাদের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছে। যা আমাদের মধ্যে প্রকৃতিপ্রেমে বড় ঘাটতি তৈরী করছে। পাশাপাশি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের পরিবেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

সরকারি তথ্য মতে, অতিথি পাখির জন্যে ১২টি অভয়ারণ্য থাকার কথা রয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে তাদের বাসযোগ্য অভয়ারণ্য বলতে যা বুঝায় তা আজও পরিপূর্ণভাবে গড়ে উঠেনি। এর বাইরে গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল, জলাশয়ের পরিবেশ আরো কমতে শুরু করেছে। যার ফলে অতিথি পাখির সংখ্যা কমার পাশাপাশি যারা আসছে তারাও অনুকূল আবহাওয়া পাচ্ছে না৷ তাই হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে আসা এসব পাখিদের রক্ষা করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি সচেতনতা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।  ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনের ২৬ ধারা মতে, পাখি শিকার ও হত্যা দন্ডনীয় অপরাধ। এ আইনে বলা হয়েছে, পোষা পাখি লালন-পালন, খামার স্থাপন, কেনা-বেচার জন্য লাইসেন্স নিতে হবে। না নিলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে শুধু এসব আইন প্রণয়ন করে অতিথি পাখি রক্ষা করা সম্ভব নয়। এর জন্য আইনের এসব ধারা কতৃপক্ষকে মাঠপর্যায়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতা আর আমাদের মধ্যে প্রকৃতিপ্রেম ছাড়া আগত এসব অতিথি পাখির জন্য নিরাপদ অভয়ারণ্যে তৈরী করা কিংবা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব নয়।

লেখকঃ রিয়াদ হোসেন, শিক্ষার্থী, 
সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।

প্রীতি / প্রীতি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন

ট্রাম্প-উরসুলার বাণিজ্য চুক্তিতে স্বস্তির হাওয়া