ঢাকা সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

দৌলতদিয়ায় মাদকের হাট


সিরাজুল ইসলাম photo সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশিত: ১৩-১২-২০২২ দুপুর ৪:৪৭

*  প্রকাশ্যে বিক্রি হয় ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিল, হেরোইন, মদ, বিয়ার
*   বিক্রেতা দুই শতাধিক, গ্রেফতার হন মাদকসেবী


ইলিশ মাছ, তরমুজ আর নৌবন্দরের জন্য এক সময় উপমহাদেশে বিখ্যাত গোয়ালন্দ এখন মাদকের জন্য ‘কুখ্যাত’ হয়ে উঠেছে। রাজবাড়ীর এই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সহজেই মেলে মাদকদ্রব্য। আর দৌলতদিয়া ঘাটে রীতিমত বসে মাদকের হাট। অনেকটা হাঁক-ডাক করেই মাদকদ্রব্য বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন সময় অভিযান চালায় পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ সব অভিযানে মূলত মাদকসেবী এবং খুচরো বিক্রেতা গ্রেফতার হয়। মূল হোতা বা ডিলাররা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ রয়েছে, তারা নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।  

সূত্র জানায়, দৌলতদিয়া যৌনপল্লী লাগোয়া কয়েকশ মিটার আয়তনের একটি জায়গার নাম পুড়াভিটা। এখানে মূলত বৃদ্ধ যৌনকর্মী এবং তাদের ছেলে-মেয়ে ও স্বজনরা থাকেন। এখানকার প্রায় সবাই মাদকবিক্রিতে জড়িত।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তারা নিজ ঘরের সামনে মাদকদ্রব্য নিয়ে বসে থাকেন। খদ্দের যাওয়া মাত্রই তারা বলে, কী লাগবে? খদ্দের টাকা দিয়ে নিয়ে নেন তার প্রয়োজনীয় মাদকদ্রব্য। এখানে ফেন্সিডিল, গাঁজা, হেরোইন ও ইয়াবা বিক্রি হয়। এখানে হেরোইনের ডিলার হলেন- নাদিরা, শিমুল, সাথী, রোজি, বেবি, লাইলী, খোদে, আনু, নুরজাহান, শাপলা, শাহানা, কোহিনূর, নূরী, শেফালী, মোমেনা, সালমা, সেলিনা, পিংকি, ময়না ও হামজা। তাদের মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন অন্তত শতাধিক নারী। এছাড়া যৌনপল্লীতে রুমা নাকে এক নারী গাঁজা বিক্রি করেন। এছাড়া মাদক দ্রব্যের আরেক ডিলার হলেন দৌলতদিয়ার মোতালেব। তার মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন আফজাল ও বেবি। তারা যৌনপল্লীতে ব্যবসা করেন। যৌনপল্লীর শিল্পী ও ফরিদার বাড়িতে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেন্সিডিল বিক্রি করেন মিতা। যৌনপল্লীর প্রায় সব বাড়িতে বিক্রি হয় মদ। বিয়ার বিক্রি হয় আইয়ুব মেম্বারের বাড়িতে।

বিয়ারের ডিলার হিসেবে একজন নারী নেত্রীর নাম উঠে এসেছে। এছাড়া লঞ্চ ও ফেরিঘাট এলাকায়ও বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য হকারি করে বিক্রি করা হয়। গোয়ালন্দ বাস স্ট্যান্ডের ইমদাদের চায়ের দোকানের পিছনে, বিন্দু পাড়ার ফাঁকা মাঠে, পৌর জামতলা, উজানচরের সোনালী হ্যাজারীজ, জামতলার হাট, কাটাখালী এলাকায় মাদক সেবন করা হয়। গোয়ালন্দ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে শ্যামচাঁদ নামে একজন এবং নিজামিয়া মাদ্রাসা এলাকায় আলম ও রাজা মিয়া নামে দুইজন মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন। গোয়ালন্দ বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ফেন্সিডিল বিক্রি করেন সম্রাট এবং গোয়ালন্দ মাল্লাপট্টি এলাকায় ইয়াবা বিক্রি করেন রানা নামের একজন। ওই এলাকার পাশে নতুনপাড়ায় থাকেন ইয়াবা সম্রাট জাহাঙ্গীর। তিনিই মূলত সেখানে ইয়াবা বিক্রি শুরু করেন। মাদক মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। তার স্ত্রীও মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাদকদ্রব্য বিক্রিতে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। এরই মধ্যে মাদকসহ গ্রেফতার হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে ফরিদুজ্জামান ওরফে শেখ ফরিদ নামে এক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

মাদকবিরোধী অভিযান চললেও তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, অভিযানে সব সময় মাদকসেবী ও খুচরা বিক্রেতা গ্রেফতার হয়। তারা জামিনে এসে ফের মাদক সেবন ও বিক্রি করেন। ডিলার বা মূলহোতারা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তারা টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে মাদক সেবী কমছে না। বন্ধ হচ্ছে না ব্যবসা। কারণ একজন খুচরা বিক্রেতা গ্রেফতার হলে ডিলাররা আরেকজনকে খুচরা বিক্রেতা তৈরি করছেন। মাদক ব্যবসায় স্থানীয়দের পাশাপাশি ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর, পাবনা ও মানিকগঞ্জ থেকে এসে অস্থায়ী আবাসগড়া লোকজন জড়িত।

জানা গেছে, পুড়াভিটায় সোমবার অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সেখান থেকে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- সেন্টু ভক্ত (৩৫), মাসুদ রানা (৩৫), সাইফুল খান (৩২), সঞ্জয় ঘোষ (৪০), রিয়াজ খান (৩৪), মো. আক্কাস আলী (৩২) ও আব্দুল করিম (৩৫)। পুড়াভিটায় তারা গাঁজার আসর বসিয়েছিলেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের ৩ মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন। এদিকে, ৭ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোয়ালন্দ উপজেলার উত্তর দৌলতদিয়া নুরু মন্ডল পাড়া ক্যানাল ঘাট সংলগ্ন জনৈক সবুজ সরদারের বাড়ির সামনে থেকে মিলন প্রামানিক নামে এক মাদক বিক্রেতাকে ৪৮টি ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তিনি দৌলতদিয়া নুরু মন্ডল পাড়ার মো. আক্কাস প্রামানিকের ছেলে। 

১ ডিসেম্বর রাতে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ৫ গ্রাম হেরোইনসহ শামীম শেখ (২৫) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার গ্রেপ্তার করে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ। তিনি দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার শামছু মাস্টারের পাড়া গ্রামের গিয়াসউদ্দিনের ছেলে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল মাদকদ্রব্য বিক্রি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য বিক্রি বন্ধে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সভা করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা অভিযান চালায়। দু’য়েকজনকে গ্রেফতার করে। পরে তারা জামিনে এসে ফের মাদকদ্রব্য বিক্রি করে। তার পরিষদের একজন সদস্যের স্ত্রী এবং একজন সাবেক সদস্য মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনি সরাসরি আসুন। তারপর কথা বলি।

গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, যারা মাদকদ্রব্য বিক্রি করে, তাদের ব্যাপারে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে মাদকদ্রব্য বিক্রেতাদের তালিকা দিয়েছে। তাদের গ্রেফতার করার অনুরোধ করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। জানুয়ারিতে মাদকবিরোধী সভা করা হবে। আপনার দলের লোকের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য বিক্রির অভিযোগ রয়েছে- এমন প্রশ্নে মেয়র বলেন, আমার দলের লোক শুধু নয়, আমার চারপাশের লোক মাদকদ্রব্য বিক্রি করলেও ছাড় দেওয়া হবে। সব মাদকদ্রব্য বিক্রেতাকে গ্রেফতার করার কথা বলেছি ওসি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজবাড়ীর ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, মাদকসেবীদের গ্রেফতার করার কারণে মাদকদ্রব্যের চাহিদা কমে এসেছে। ডিলাররা মাদকদ্রব্য রাখেন গোয়ালন্দের বাইরে। প্রয়োজন মতো ছোট ছোট প্যাকেট (পুরিয়া) করে এনে সরবরাহ করেন। এ কারণে ডিলারদের ধরতে কষ্ট হচ্ছে। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশনে যাওয়া হচ্ছে। শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। তার প্রতিষ্ঠানের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমার হাতে ক্যান্সার রয়েছে। আশাকরি দ্রুত এ ক্যান্সার সেরে যাবে। তারপরই মাদকদ্রক্য বিক্রেতাদের মূলোৎপাটন করা হবে। 

এমএসএম / এমএসএম

ভুয়া লাইসেন্সে হুন্ডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন লেলিন মুন্সি

গণপূর্তের ইএম কারখানা বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ইউসুফের দুর্নীতির রাজত্ব

দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীগন

‘এনবিআর’এ স্বৈরাচার সরকারের পালিয়ে থাকা চক্রের চক্রান্ত

প্রাণ ধ্বংসকারী কোম্পানি প্রাণ

বিসিএসআইআরের ৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনায় ভাগ বাটোয়ারা

কোতোয়ালীতে অপহৃত ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিসিক এর নীরিক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী হতে সাবধান!

কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী রোডে অবৈধ এলপিজি বটলিং প্লান্ট এর সন্ধান

গডফাদার মুরাদ জং-এর বোন পরিচয়ে দলিল দাতা-গ্রহীতাদের জিম্মি করার অভিযোগ

গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যুদের দখলে

বগুড়ায় সাবেক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে 'ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেটের' মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ