ঢাকা সোমবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৫

রাউকের জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পে চলছে নয়ছয়


শামসুল ইসলাম, রাজশাহী photo শামসুল ইসলাম, রাজশাহী
প্রকাশিত: ২৫-১২-২০২২ দুপুর ৩:৩৯

রাজশাহীতে সর্বোচ্চ বাজেটের কাজ চলছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাউক) অধিনে। সরকারের এসব উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে, জমি অধিগ্রহণ, একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর চত্ত্বর, শহীদ ক্যাপ্টেন মুনসুর রহমান পার্ক সংস্কার, ফ্লাইওয়ারের সাথে নাটোর রোড (রুয়েট) হতে রাজশাহী বাইপাস পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ কাজ। একাধিকবার প্রকল্প সংশোধন করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে সরকারের লাখ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৭ জুন নাটোর রোড থেকে (রুয়েট) রাজশাহীর বাইপাস পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রকল্প একনেকের সভায় অনুমোদিত হয়। একনেকের সভায় ১২.১৭৭১ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য অনুমোদন পায়। এই জমি অধিগ্রহণে বরাদ্দ হয় ২৭ কোটি ১ লাখ ৭৮হাজার টাকা। কিন্তু রাউক কর্তৃপক্ষ মাত্র ০.৮২৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ করে। যার ব্যয় হয় ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ টাকা। অবশিষ্ট থাকে ১৭ কোটি ৩৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা। মূলত এখন থেকে দুর্নীতির শুরু। গত ৫ বছর আগে জমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্প সমাপ্ত হলেও কাগজপত্র জেলা প্রশাসককে দেয়া হয়নি। রাউকের জমি অধিগ্রহণে বড় ধরনের অসংগতি পাওয়ায় গত ২৭ নভেম্বর রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে জমি অধিগ্রহণে ব্যাপক অনিয়ম সম্বলিত একটি চিঠি দেয়া হয়েছে রাউক চেয়ারম্যানকে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জমি অধিগ্রহণে বড় ধরনের নয়ছয় হয়েছে। অতিরিক্ত টাকা কোন কোন খাতে খরচ হয়েছে তার কোনো কাগজপত্র নেই। আর অবিশিষ্ট টাকা কোথায় তার কোনো হদিস নেই।
রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) সাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন ৬.১২ হেক্টর (১৫.১১৬৪ একর) ও বাজেট অনুমোদন ২২,৫৬,২৭,০০০.০০ টাকা। ০৪/১৩-১৪ নং এল.এ অধিগ্রহণ করা হয় ৪.২৩২৫ একর ভূমি এবং ব্যয় হয় ১৮ কোটি ৮৯লাখ ৪৫হাজার ৯২ টাকা। কিন্তু ক্ষতিপূরণের কোডে ২৩ কোটি ৯২ লাখ ৫৪ হাজার ৯শ’ টাকা অতিরিক্ত প্রদান করা হয়, যার প্রশাসনিক কোন অনুমোদন পত্র পাওয়া যায়নি। এই প্রকল্পের কার্যক্রম ৫ বছর পূর্বে সমাপ্ত হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের(রাবি) অনুকূলে, পূর্বে অধিগৃহীত জমি রাউকের অনুকূলে প্রশাসনিক অনুমোদনভূক্ত জমির সাথে রাউক কর্তৃক প্রস্তাবিত জমির তফসিলে গড়মিল পরিলক্ষিত হয়।
নাটোর রোড (রুয়েট) হতে রাজশাহী বাইপাস রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের অবশিষ্ট ২৩.৯২,৫৪,৯০৭.৮৮ কোটি টাকা সমন্বয়/ফেরত প্রদানের জন্য বলা হয়। কিন্তু দেখা যায় সংশোধিত প্রকল্পের জন্য ৫৬,৭২,৭০,০০০ টাকার বাজেট অনুমোদন রয়েছে। অর্থাৎ অতিরিক্ত টাকার কোনো কাগজপত্র নেই। বাজেট বরাদ্দ থাকার পরেও ০৪/১৩-১৪ নং এল.এ কেসে অতিরিক্ত জমাকৃত অর্থ হতে সমন্বয়/ফেরত প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭ অনুযায়ী অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণের প্রয়োজনীয় অর্থ সংকুলানের ব্যবস্থা ও বিধি মোতাবেক জমা প্রদান করা প্রত্যাশী সংস্থা হিসেবে রাউকের আওতাভূক্ত। অতিরিক্ত অর্থ সমন্বয়/ফেরত বিধি মোতাবেক বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের আওতাভূক্ত। জনস্বার্থে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য প্রত্যাশী সংস্থা কর্তৃক বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সাথে এ সংক্রান্ত সুরাহা/সমঝোতা শেষেই শুধুমাত্র এ কার্যালয়ের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অসংগতি রেখেই বর্তমানও কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নাটোর রোড (রুয়েট) হতে রাজশাহী বাইপাস রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ (১ম সংশোধিত) শীর্ষক ১ম সংশোধিত প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন ১২.১৭৭১ একর ও বাজেট বরাদ্দ ২৭.০১৭৮ কোটি টাকা। অধিগ্রহণ করা হয় ০.৮২৮৮ একর ও ব্যয় হয় ৯,৬৫,৫১,৭৭০.৫৩ টাকা। এখানে অবশিষ্ট ১৭,৩৬,২৬,২২৯.৪৭ কোটি টাকা থাকার পরেও ০৪/১৩-১৪ নং এল.এ কেসের (প্রায় ৮ বছর পূর্বের) অতিরিক্ত প্রায় ১৭ কোটি টাকা কিভাবে খরচ হয়েছে তার কোনো কাগজপত্র নেই।
নাটোর রোড (রুয়েট) হতে রাজশাহী বাইপাস রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ (২য় সংশোধিত)  শীর্ষক প্রকল্প রাজশাহী প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(রুয়েট) ৫.২৭৬ হেক্টর অর্থাৎ (১৩.০৩১৭২ একর) জমি আন্ত:মন্ত্রণালয়ের হস্তান্তরের জন্য অলাদা প্রকল্প ও ৫৬,৭২,৭০,০০০ টাকা বাজেট বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। ১৩.০৩১৭২ একর জমির প্রশাসনিক অনুমোদন থাকলেও রাউক কর্তৃক ০.৩৭১৫ একর জমি অধিগ্রহনের করেছে। এখানেও প্রায় ১৩ একর জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপুরনের সমপরিমান অর্থ অবশিষ্ট থাকবে। কিন্তু রাবির অনুকূলে ৩.১৮১০ একর অধিগৃহীত জমি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের হস্তান্তরের জন্য আলাদা প্রকল্প ও বাজেট না নিয়ে ৮ বছর পূর্বের এল.এ কেসে অতিরিক্ত জমাকৃত টাকা হতে সমন্বয়ের অনুরোধ জানানো হয়।
রাউক কর্তৃপক্ষের প্রেরিত পত্রের ফরোয়ার্ডিং এ ১৩/৫৪-৫৫ এ নম্বর এল.এ সেকের আওতায় অধিগৃহিত ভুমি সংযুক্ত এলাইনমেন্ট নকশা ও প্রাপ্ত দাগসূচিতে দেখা যায়, তফশিল বর্ণিত সম্পত্তির প্রশাসনিক অনুমোতির সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত নয়। এছাড়াও নাটোর রোড (রুয়েট) হতে রাজশাহী বাইপাস পর্যন্ত রাস্তার এলাইনমেন্ট নকশা ট্রেসিং ক্লথে চাওয়া হয়। কিন্তু এই কাগজপত্রও দেয়া হয়নি। শুধু মাত্র দুর্নীতি ও অনিয়ম ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এসব কাগজপত্র দেয়নি রাউক।
এদিকে রুয়েট থেকে বাইপাস পর্যন্ত চারলেন রাস্তা, ওভারপাস, ড্রেন, কালভার্ট, রাস্তা ও ফ্লাইওভারে লাইটিং ও টিএনটি লাইন, গ্যাস সংযোগ লাইন স্থাপন সম্পন্ন কাজ গত জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কাজ শেষ না হলেও গত জুলাই মাসে পুরো কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে দুটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বাস্তবে এ রাস্তার কাজ এখনো ৫০ভাগ অসমাপ্ত। তারপর রাউকের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল তারিক কাজ সম্পন্নের প্রতিবেদন দিয়েছেন। একই সাথে ৫বছর আগে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন দেখানো হলেও এখনো অধিগ্রহণকৃত জমির বাড়িঘর ভাঙ্গা শেষ হয়নি।
এব্যাপারে রাউকের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিক স্পষ্টভাষায় জেলা প্রশাসকের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বলেন, জেলা প্রশাসক জমি অধিগ্রহণের টাকা দেয়নি বলে রাস্তা নির্মাণে অধিগ্রহণকৃত বাড়ি ভাঙ্গতে পারিনি। তিনি জেলা প্রশাসকের চিঠির বিষয়ে বলেন, এধরনের কোনো চিঠি আমি দেখিনি বা পাইনি।
তবে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, রাউকের জমি অধিগ্রহণে পুরোটাই নয়ছয় করেছে। যার প্রতিবেদন আমরা দাখিল করেছি। রাউক জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে সব কাজেই সরকারের সাথে প্রতারণা করছে।
এব্যাপারে রাউক’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হায়াত মো: রহমাতুল্লাহ জেলা প্রশাসকের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ওই চিঠি নিয়ে কাজ চলছে, দ্রুতই জবাব দেয়া হবে। তবে জমি অধিগ্রহণে নয়ছয় হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।
রাউক’র চেয়ারম্যান আনওয়ার হোসেন জানান, আমি জেলা প্রশাসকের প্রেরিত চিঠির বিষয়ে কিছু জানি না। চেয়ারম্যানের নামে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে তাহলে কেনো জানেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব চিঠি দেখার সময় আমার থাকে না। জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।

এমএসএম / এমএসএম

পঞ্চগড়ে ইন্টার্নশিপ বিদ্যালয়ে সহকারি দুই শিক্ষক অনুপস্থিত, একজন হাজতে, ব্যবস্থা নেয়নি কেউ

কোটালীপাড়ায় মায়ের সাথে অভিমান করে মাদ্রাসা ছাত্রের আত্মহত্যা

টেকনাফের বাহারছড়ার গহীন পাহাড়ে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযান

লাকসামে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ কাউন্সিল’২৫ অনুষ্ঠিত

শেরপুরে বন্যহাতির তান্ডবে আমন খেত নষ্ট: দিশেহারা কৃষকেরা

মাদকমুক্ত সমাজ গড়ি" শীর্ষক প্রতিবাদকে সামনে রেখে স্থানীয় গ্রামবাসী ও যুবসমাজের উদ্যোগে আলোচনা

বাউফলে স্প্রেইড হিউম্যানিটির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন,স্বৈরাচারের বিচার দৃশ্যমানকরে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবেঃ এটি এম মাসুম

তানোরে মা ও ছেলেকে কুপিয়ে জখম

সীতাকুণ্ডে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল সাইকেল আরোহীর

ঝামায় ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

মুকসুদপুর প্রেসক্লাব ৩ সদস্যকে ত্রুেস্ট ও পরিচয়পত্র প্রদান

নাগরপুরে পাকুটিয়া ইউনিয়নে বিএনপি নেতাকর্মীদের লিফলেট বিতরণ