হাজার কোটি টাকার মালিক কে এই কাজী মামুন
ওয়ার্ড নিকাহ রেজিস্ট্রার থেকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব!

তিনি একজন সাধারণ নিকাহ রেজিস্ট্রার। রাজধানীর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৫নং ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবেই তার পরিচিতি। সম্প্রতি তিনি অধিষ্ঠিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে।একইসাথে আলাদিনে চেরাগ পাওয়ার মতো তিনি এখন হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। সম্প্রতি সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম হুসেই মোহাম্মদ এরশাদের বিতর্কিত ও প্রতিবন্ধি ছেলে এরিক এরশাদ ঘোষিত নতুন জাতীয় পার্টির মহাসচিব হয়েছেন তিনি। সেই দিন তিনি গণমাধ্যমের সাথে কথাও বলেছেন। নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন এরশাদ ট্রাস্টের সভাপতি হিসেবে। সেই সময় থেকে গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী চোখ নিয়ে আমরা খোঁজার চেষ্টা করেছি কে এই মামুনুর রশিদ অরফে কাজী মামুন!
অনুসন্ধ্যানে আঁতকে ওঠার মতো তথ্য আসতে শুরু করেছে আমাদের হাতে। প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার নবী নগর থানার বারিখানা গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে ১৯৭৯ সালের ২৭ জানুয়ারি তার জন্ম। বাবার নাম শফিকুল ইসলাম। মায়ের নাম আয়েশা খাতুন। শিক্ষাগত যোগ্যতা মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে জীবন জীবিকার সন্ধ্যানে ঢাকায় আসেন কাজী মামুন।
মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সেই মামুনুর রশিদই হয়ে ওঠেছেন কাজী মামুন। আমাদের অনুসন্ধ্যানে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে তিনি এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন স্বাস্থ্য খাতের বড় একটি সিন্ডিকেট। স্বস্থ্য খাতে লাগামহীন দূরর্নীতি ও লুট পাটের মাফিয়া ডন হিসেবে পরিচিত মোতাজ্জেল হোসেন মিঠু পরে তিনিই এখন এ খাতের অনেক কিছুর নিয়ন্ত্রক।ওষুধ প্রশাসন ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেটে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি গত চার –পাচ বছরেই হাতিয়ে নিয়েছেন কম পক্ষে ২হাজার কোটি টাকা।
কোন যাদুমন্ত্র বলে তিনি রাতারাতি হয়ে উঠলেন এমন রাজকাহিনীর বরপূত্র!সে গল্পের অনুন্ধ্যানে আমাদের হাতে আসা তথ্যমতে, জীবন জীবিকার সন্ধ্যানে ঢাকায় এসে নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন মামুন। কিছুদিনের মধ্যে তার পরিচয় ঘটে এরশাদ পত্নী বিদিশার সাথে। বিদিশার পছন্দেই রাতারাতি ভাগ্য বদলে যেতে শুরু করে কাজী মামুনের। জড়িয়ে পড়েন বিদিশার হয়ে এরশাদের অর্থ সম্পদ কুক্ষিগত করা র মিশনে। সূত্র বলছে, বিদিশার দেশে বিদেশে থাকা অর্থের বড় অংশের জিম্মাদার হয়ে ওঠেন কাজী মামুন। অসুস্থ্য এরশাদের প্রেসিডেন্ট পার্কে অবাধ যাতায়াতের সুযোগে কাজী মামুন হয়ে উঠতে থাকেন ক্ষমতাধরদের চেয়েও ক্ষমতাধর। এক সময় সাধারণ নিকাহ রেজিস্টার মামুন হয়ে যান সাবেক রাষ্ট্র পতির রাজনৈতিক উপদেষ্টা। এর কিছুদিন পরই তিনি বাগিয়ে নেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদসস্যের পদ। বিদিশার আশির্বাদে তিনি নবীনগর থেকে জাতায় পার্টির টিকিটে ২০১৪ ও ২০১৮সালে দু,বার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থি হন। কিন্তু এখানে ভাগ্য সুপ্রন্ন হয়নি। তিনি সংসদ সদস্য হতে পারেননি।
নবীনগর থেকে আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে নেয়া সংবাদ থেকে দেখা যাচ্ছে অঢেল অর্থ ব্যয় করে তিনি নির্বাচনের আগে পরে ব্যাপক শো ডাউন করেছেন। নির্বাচনে খরচ করেছেন শত শত কোটি টাকা। কিন্তু জনবিছিন্ন ও রাজনৈতিক বিছিন্ন পরিবারের সদস্য হিসেবে তিনি ভোটের মাঠে সফল হতে পারেননি।
সূত্রমতে, হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্ট পার্কের অঘোষিত কর্নধর হয়ে ওঠেন কাজী মামুন। বাড়ে বিদিশার সাথে আরো বেশী ঘনিষ্ঠতা। জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা এরশাদ পত্নি রওশন এরশাদ, সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ পরিবারের সবাইকে পেছনে ফেলে এরশাদের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী বিদিশায় ভর করে তিনি হয়ে যান এরশাদ ট্রাস্টের সভাপতি। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ মৃত্যুর আগে তার সম্পদের বড় একটি অংশ এরশাদ ট্রাস্টে দান করে যান। সূত্র বলছে,এরশাদের রেখে যাওয়া বিপুল অর্থের বড় একটি অংশ এখন চলে যাচ্ছে কাজী মামুনের হাতে। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি সম্প্রতি এরিক এরশাদকে দিয়ে নতুন দল ঘোষণা দিয়ে সে দলেল মহাসচিব বনে যান।
রাজনৈতিক এই গেমমেকিংয়ের বাইরে তার আরো একটি পরিচয় আমাদের হাতে এসেছে। তিনি এখন হয়ে উঠেছেন স্বাস্থ্য খাতে জড়িত লুটপাটকারি সিন্ডিকেটের অঘোষিত মাফিয়া ডন। গত চার পাঁচ বছরে এখাত থেকেই তিনি নানা ছল চাতুরী দূর্নীতি ও সিন্ডিকেট ম্যানেজ করে হাতিয়ে নিয়েছেন কমপক্ষে ২ জাহার কোটি টাকার বেশী। আমাদের হাতে আসা তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা মামুন যিনি এখনও একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে রয়ে গেছেন, তিনি সম্প্রতি বছর গুলোতে গড়ে তুলেছেন কমপক্ষে ডজন খানেক কোম্পানী। এ কোম্পানী গুলোর অধিকাংশেরই চেয়ারম্যান বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি নিজে। তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীগুলোর মধ্যে রয়েছে শানিন ইন্টার ন্যাশণাল লিমিটেড ঢাকা, কাজী মামুন ড্রিম বিল্ডার্স লিমিটেড, টেকনো ভ্যাকসিন লিমিটেড, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড, শানিন লাইম ইন্ডাস্ট্রিজ লি.আর এস এন্টার প্রাইজ, গাউসিয়া এক্সপোর্ট জোন উত্তরা ঢাকা, এক্সট্রিনজা মডেল ফার্মা,স্টান্ডার্ড পাবলিকেশন এন্ড আর এস. পাবলিকেশন।
জানা গেছে তিনি এখন বসবাস করেন রাজধানীর ডিপ্লোম্যাটিক জোনে। চড়েন কয়েক কোটি টাকা দামের গাড়ীতে। সব মিলে রাজসিক এক জীবনের গল্প তার। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এত টাকা আয়ের তার বৈধ উৎস কি? কিভাবে সম্ভব এত অল্প সময়ে এত অর্থের মালিক বনে যাওয়া!সে প্রশ্নের উৎস খুঁজতে গিয়ে আমাদের হাতে এসেছে কাজী মামুনের ব্লাক অধ্যায়ের কিছু তথ্য। সেখানে দেখা যাচ্ছে কাজী মামুন নিম্নমানের ঔষুধ তৈরী ও বাজারজাত করে মানুষের জীবন হুমকীর মুখে ফেলে দিচ্ছেন। নরসিংদীর শিবপুরের বিসিক শিল্পাঞ্চলের ৩নং ইউনিটে মামুনের টেকনো ড্রাগ লি.কে অনুমোদন বিহীন পশু খাদ্যের প্রমিক্স তৈরীর কারণে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে প্রশাসন।
সেই সাথে কারখানায় রাখা অনুমোদন বিহীন ৪০ লাখ টাকা মুল্যের কাঁচামাল ধংশ করে দেয়া হয়। কিন্তু তার পরও অনুমোদন বিহীন পশু খাদ্য তৈরী ও বাজার জাত করছে তার প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ঘিরে তার রয়েছে সিন্ডিকেট বানিজ্য। এখানে তার অন্যতম সহযোগী হিসেবে অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. শরিফ ও রত্না তালুকদারের নাম রয়েছে। জানা গেছে জন্ম নিয়ন্ত্রণে নারীদের শরীরে ব্যবহারের জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর প্রতিবছর ২০ থেকে ৩০ লাখ পিছ ইমপ্লান্ট ক্রয় করে থাকে। এই ইমপ্লান্ট আন্তর্জাতিক মানের ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থ্যা সার্টিফাইড হওয়ার কথা। কিš ‘ সম্প্রতি বছরগুলোতে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে কাজী মামুনের ফার্ম পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরেকে বিশ্বসাস্থ্য সংস্থার সার্টিফিকেশন ছাড়াই অতি নিম্নমানের বিপুল পরিমান ইমপ্লান্ট গছিয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। এখানে নিম্নমানের ইমপ্লান্ট গছিয়ে দিয়ে লুট পাট করা হয়েছে এবং হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। জানা গেছে এ কাজের টেন্ডার থেকে সরবরাহ, মান নিয়ন্ত্রণসহ সকল পর্যায়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দূূর্নীতর আশ্রয় নেয়া হয়েছে। জানা গেছে সিন্ডিকেটে শক্ত অবস্থানের কারণে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রত্যয়ন ছাড়াই টেকনোড্রাগকে ইমপ্লান্ট তৈরীর রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে সেই সময় ঔষূধ প্রশাসন। জানা যায় রেজিস্ট্রেশন প্রদানকালে যিনি ঔষুধ প্রশাসনে ডিজি ছিলেন তিনি এখন টেকনো ড্রাগসে বড় পর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন। এ দিকে কার্যাদেশ পেলেও সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির পর বিদেশ থেকে ইমপ্লন্ট আনতে যে সময় লাগে তার অনেক আগেই পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে ইমপ্লান্ট সাপ্লাই দিয়েছে মামুনের কোম্পানী টেকনো ড্রাগস। এটা রিসিভ করেছেন অধিদপ্তরের পরিচালক ডা.শরীফ। এটা কিভাবে সম্ভব সে প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।
এমএসএম / এমএসএম

গণপূর্তের ইএম কারখানা বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ইউসুফের দুর্নীতির রাজত্ব

দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীগন

‘এনবিআর’এ স্বৈরাচার সরকারের পালিয়ে থাকা চক্রের চক্রান্ত

প্রাণ ধ্বংসকারী কোম্পানি প্রাণ

বিসিএসআইআরের ৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনায় ভাগ বাটোয়ারা

কোতোয়ালীতে অপহৃত ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

রেজিস্ট্রি অফিসের প্রভাবশালী নকলনবিশের কাণ্ডঃ মন্ত্রীদের প্রভাবে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিসিক এর নীরিক্ষা কর্মকর্তা সাবধান আলী হতে সাবধান!

কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজাবাড়ী রোডে অবৈধ এলপিজি বটলিং প্লান্ট এর সন্ধান

গডফাদার মুরাদ জং-এর বোন পরিচয়ে দলিল দাতা-গ্রহীতাদের জিম্মি করার অভিযোগ

গাজীপুরের কাশিমপুরে সরকারি খাস জমি ভূমিদস্যুদের দখলে

বগুড়ায় সাবেক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে 'ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেটের' মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
