ভালোবাসা দিবসের পেছনের গল্প

ভালোবাসা অমূল্য এক সম্পদ৷ প্রতিটি মানুষই প্রিয় মানুষকে নিয়ে সারাজীবন চরম সুখে সময়টা পার করে দিতে চায়। বাংলার বুকে ফরহাদ-রাসেল এর মতো অসংখ্য জনপ্রিয় প্রেমিক-প্রেমিকা থাকলেও ভালোবাসা দিবস শব্দটার তেমন প্রয়োজনীয়তা দেখা যায় নি৷ এর অর্থ এই নয় যে, ভালোবাসা দিবসের বিরোধীতা করছি৷ তবে এটা জানা খুব জরুরি যে হঠাৎ করেই কেন বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস বা ১৪ ই ফেব্রুয়ারি দিনটি প্রাধান্য পেতে শুরু করলো। সময়টা ৯০ দশকের ঠিক আগেই বলা যাবে এরপর হতে এত সমারহ৷ এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে।
১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার লালরক্তের পাশাপাশি জাফর, শাহীন, দিপালী, কাঞ্চনদের রাজনৈতিক অধিকার সচেতনতার দৃঢ়তাকেও ধারণ করে। সেদিন স্বৈরাচারী গোষ্ঠী প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েই গুলি চালায়। বিনিময়ে রাজপথ হয় রক্তে রঞ্জিত, দিপালী'রা হয় ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ।
সে সময় গড়ে উঠে আন্দোলন। ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আওতায় মজিদ খানের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়৷ এ নীতিতে প্রথম শ্রেণি থেকে বাংলার সঙ্গে আরবি এবং দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ইংরেজী অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই ৩টি ভাষা বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়। এ ছাড়া, যারা ৫০ শতাংশ ব্যয় বহন করতে পারবে, পরীক্ষার ফল খারাপ হলেও তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়ে এতে। নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক কোর্স করা হয় ১২ বছর।
পরবর্তীতে, ১৯৮২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসে ছাত্রসমাজ এই শিক্ষানীতিকে গণবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি আখ্যা দিয়ে ৩ দফা দাবিতে আন্দোলন চালানোর ঘোষণা দেয়। এই ৩ দফা দাবির মধ্যে ছিল মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল, সব ছাত্র ও রাজবন্দীকে নিঃশর্ত মুক্তিদান এবং সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনপ্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ছাত্রসমাজ আন্দোলন চালিয়ে গেলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ৮ নভেম্বর পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নুরুল আমিনসহ ছাত্ররা। ৩০ জনকে আটক করে পুলিশ। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়।
১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হলে ১৪টি ছাত্র সংগঠন আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়। ২১ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে গঠিত হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে সারা দেশে গণস্বাক্ষরতা অভিযান পরিচালনা করে। একইসঙ্গে চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জনমত তৈরির কাজ।
সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ১৯৮৩ সালের ১১ জানুয়ারি সচিবালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হলে সরকার হুমকি দেয়। সামরিক শাসক এরশাদ ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দিলে ছাত্রসমাজ তা প্রত্যাখ্যান করে।
১১ জানুয়ারি শেষ পর্যন্ত অনিবার্য কারণবশত কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি হাতে নেয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে মজিদ খানের শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, বন্দীদের মুক্তি, গণমুখী, বিজ্ঞানভিত্তিক ও অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতির দাবিতে আয়োজিত কর্মসূচিতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে এগিয়ে যান। মিছিলটি হাইকোর্ট এলাকায় গিয়ে ব্যারিকেডের কারণে থেমে যায়।
সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা যখন তারের উপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুরু করেন, তখন পুলিশ গরম পানি ছিটাতে শুরু করে। লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপও শুরু করে পুলিশ। ছাত্ররা এ সময় ইট-পাটকেল ছুড়লে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন জয়নাল নামের এক শিক্ষার্থী। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারতে থাকে পুলিশ। এক পর্যায়ে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন
পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি তখনকার জগন্নাথ কলেজের সামনে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে ২ তরুণকে। তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ২ ছাত্রকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। সদরঘাটে এক শিশুকে বেয়নেট দিয়ে হত্যা করা হয়। এই আন্দোলনের ছোঁয়া লেগেছিল চট্টগ্রামেও। সেখানে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন কাঞ্চন নামের একজন।
একদল জ্ঞানপাপীরা সেই ইতিহাস মুছতে তরুণ সমাজের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়েছিল ভালোবাসার দিবসের মন্ত্র। তাদের দোসরদের হাত ধরেই পরবর্তী সময়ে অশ্লীলতার পথে পা বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ। অন্তত পরবর্তী সময়ে বাংলা সিনেমাগুলো সে ইঙ্গিতই দেয়! মদের লাইসেন্স কিংবা পতিতাবৃত্তি কারা বৈধতা দিয়েছে? উচ্ছেদ ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া আদালতের রায়ে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। সময়টা ২০০০ সাল ঠিক!
ভালোবাসা দিবস ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসাবে থাকতেই পারে। তবে সেটা সুকৌশলে দেশের তরুণদের অতীত সংগ্রামী ইতিহাসকে মুছে দিয়ে নয়। সাহসী সেই গল্প তরুণরা আজ জানে না বলেই বিকাশ ঘটে মৌলবাদের, চর্চা হয় অপ-রাজনীতির। তরুণ শিক্ষিত প্রজন্ম বলে, "আই হেট পলিটিক্স"। অথচ, এই বাংলাদেশ টাই পলিটিক্সের ফসল! দেশের ছাত্র রাজনীতির যে গৌরবোজ্জ্বল অতীত রয়েছে তা ভুলে যাওয়া মানে অবশ্যই দেশকে বিপদের কিনারায় ঠেলে দেয়া, অপশক্তির স্বার্থে দরজা খুলে দেয়া। জাফর, শাহীন, দিপালী, কাঞ্চনদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ।
এমএসএম / এমএসএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ

কোচিং-এর গোলকধাঁধায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে গুরুত্ব নেই

সাংবাদিকের দল সমর্থন গণতন্ত্রের জন্য হুমকি

ইঁদুরের কৃতজ্ঞতা

নাগরিক সেবা ও প্রত্যাশার সংকট: রাষ্ট্রীয় কর্মচারী কোথায়?

টেকসই সমাজ গঠনে সাম্য একটি অপরিহার্য ভিত্তি

শুভ জন্মাষ্টমী : সত্য, সুন্দর ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় শান্তির বার্তা

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অপরিহার্য

জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচিতরাই কাশ্মীরের শাসক

স্বৈরশাসকের বিদায়, বিদ্রোহ ও পলায়ন

জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান

এপিআই ও এক্সিপিয়েন্ট উৎপাদনে বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা: স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন
